ডেস্ক রির্পোট:- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক সময়ের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। কোথাও কোথাও অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে দেখা গেছে এই দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনাও। চলছে দোষারোপের রাজনীতি। ছাত্রদল দায়ী করছে শিবিরকে, আর শিবির দায়ী করছে ছাত্রদলকে। সংগঠন দু’টির কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও পাল্টাপাল্টি পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এই সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ছাত্রদলের সভাপতি সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদককে বলছেন, ‘শিবিরের ওপর দায় দিয়ে দাও’। ছাত্রদলের সভাপতির এই বক্তব্যকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা ও বন্ধুভাবাপন্ন ছাত্র রাজনীতির পথে অন্তরায় বলে মনে করছে শিবির। সংগঠনটি বলছে, নিজেদের অপরাধমূলক কার্যকলাপের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা ছাত্রলীগের ছিল, তা আজ ছাত্রদলের মধ্যেও বিদ্যমান। এ ধরনের আচরণ ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ এবং সুস্থ ধারার রাজনীতির পরিপন্থি।
ওদিকে, ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে আসে ছাত্রশিবির। কয়েকটি বাম সংগঠন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এ নিয়ে ছাত্রদলও প্রশ্ন তুলেছে। পরবর্তীতে ৭ই নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ উপলক্ষে বিএনপি’র দলীয় পোস্টার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সাঁটিয়ে দেয় ছাত্রদল। পোস্টার লাগানোর পর ছাত্রদের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারা এর বিরুদ্ধে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
ঢাকা এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির সংঘর্ষ এবং ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সিলেটের এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর টঙ্গীতে ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতির ওপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনারও অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। আর ছাত্রদল সবসময় শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিশেষ অনুরোধ- ছাত্রশিবিরের উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। ছাত্রশিবির কোনো ব্যক্তি বা দলের পূজা করে না। এক আল্লাহর গোলাম হিসেবে শুধুমাত্র রবের কাছেই মাথানত করে। আর ছাত্রদলকে আমরা শত্রু মনে করি না। আমাদের লড়াই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তাদেরকে সরাসরি কিংবা কৌশলে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি- অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতির ধারায় ফিরে আসুন। কিন্তু বন্ধুপ্রতিম সংগঠনটি আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট ও তাদের শাহবাগী দোসরদের পরামর্শে অগ্রসর হচ্ছে। যার প্রতিফলন কুয়েটে প্রমাণিত হলো। আজকের ঘটনা আর জুলাই-আগস্টে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
এদিকে, টঙ্গীতে ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতির ওপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের ওয়ার্ড সভাপতি ফজলে রাব্বিকে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা দীর্ঘ সময় আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। ঘটনা জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা মামুন নামে ছাত্রদলের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। মূলত কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করার কারণে পরিকল্পিতভাবে তার ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়।