শিরোনাম
শেখ হাসিনাকে নিয়ে উভয় সংকটে ভারত ছাত্রদল-শিবির দ্বন্দ্ব প্রকট ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে কিছুই করেনি ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য: ট্রাম্প ধেয়ে আসছে গ্রহাণু, ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ঢাকাও! রাঙ্গামাটি থেকে পালানো দুই কিশোরীকে উদ্ধার করল পুলিশ এক আদেশে ৩২৭ এনজিওর ১০ হাজার কর্মী বেকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শক দৈনিক গিরিদর্পণ এর সম্পাদক এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন চলে গেলেন পার্বত্যাঞ্চলের চারণ সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমাকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আটক রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে বাস দুর্ঘটনায় আহত-৪

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শক দৈনিক গিরিদর্পণ এর সম্পাদক এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২০ দেখা হয়েছে

এসএম শামসুল আলম:- পার্বত্য চট্টগ্রামের সংবাদপত্রের বরপুত্র, সংবাদপত্র জগতের পথিকৃত, সর্বপ্রথম প্রচারবহুল পত্রিকা সাপ্তাহিক বনভূমি ও দৈনিক গিরিদর্পণ এর সম্পাদক চারণ সাংবাদিক এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ সবাইকে কাঁদিয়ে ৮০বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র শোকের মাতম দেখা দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং তারিখ রাত সাড়ে ৯টার পর তিনি রাঙামাটি জেলারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. নূয়েন খীসা গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সমবেদনা জানিয়েছেন।

দৈনিক গিরিদর্পণের বার্তা সম্পাদক ও একেএম মকছুদ আহমেদের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে কন্ট্রাক্টর পাড়ার নিজ বাসায় তিনি হৃদরোগে(স্ট্রোক) আক্রান্ত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ৯টা ৩৭ মিনিটের দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রামেরর সাংবাদিক একজন অভিভাবক হারালো। প্রসঙ্গত, একেএম মকছুদ আহমেদ ৫৬ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন। তিনি ১৯৭৯ সালে প্রথম সাপ্তাহিক বনভূমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর ১৯৮৩ সালে দৈনিক গিরিদর্পণ প্রতিষ্ঠা করেন। ৪২ বছর ধরে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে আছেন। দৈনিক গিরিদর্পণের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব ছাড়াও দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি। তিনি রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতিও। একেএম মকছুদ আহমেদের মৃত্যুতে রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাব, রাঙ্গামাটি সাংবাদিক ফোরাম, রাঙ্গামাটি সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোক জানিয়েছেন।

চারণ সাংবাদিক একেএম মকসুদ আহমদ একটি ইতিহাসঃ
১৯৪৫ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলায় উত্তর মগাদিয়া গ্রামে মৃতঃ জামাল উল্লাহ, জমিলা খাতুনের কোল জুড়ে আসে এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ। বাল্যকাল সহ শৈশব কাল মীরসরাইয়ে কাঠলেও এস,এসসি পাশ করার পর তিনি চলে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। এর পর থেকে শুরু হয় তার পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে ও কাজ করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার গুরু, সাংবাদিকদের পথ প্রদর্শক, সাংবাদিকদের ইনিষ্টিটিউট ও সংবাদপত্রের পথিকৃৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে না আসলে হয়তো পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতা অনেক পিছিয়ে থাকতো। এই মহান ব্যক্তির হাত ধরে জন্ম নিয়েছে তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম ও ঢাকার অসংখ্য সংবাদ কর্মী আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। মহান এই মানুষটি দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে কিছু না পেলেও তার হাত ধরে উঠে এসেছে শত শত সংবাদকর্মী। তার অর্জনের মধ্যে রয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের সর্বপ্রথম দৈনিক সংবাদপত্র দৈনিক গিরিদর্পণ।

স্বাধীনতার আগে ১৯৬৯ সালের নভেম্বর মাসেই তিনি দৈনিক আজাদী পত্রিকার মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা শুরু করেন। দীর্ঘ ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে, অনেকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, শতশত মৃত্যুর হুমকীকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গেছেন পাহাড়ের মানুষের অভাব অভিযোগ তুলে ধরতে। পায়ে হেটে হেটে এই পাহাড় থেকে ঐ পাহাড়ে ছুটে ছুটে পাহাড়ের মানুষের কথা দেশবাসীকে জানিয়েছেন। এই মহান সাংবাদিকের পেশাকে তিনি নিজের করে নিয়ে একে একে প্রকাশ করেছেন সাপ্তাহিক বনভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলের সর্বপ্রথমক দৈনিক সংবাদপত্র দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকায়। সংবাদপত্র জগতে তিনি পার্বত্য তিন জেলা, চট্টগ্রাম, সহ বিভিন্ন অঞ্চলের অসংখ্য বেকার যুবককে দৈনিক গিরিদর্পন ও সাপ্তাহিক বনভূমির মাধ্যমে সাংবাদিক বানিয়েছেন। এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ তার সাংবাদিকতা জীবনে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অভাব অভিযোগ গুলো যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি অসংখ্য অসহায় মানুষের তিনি সুখে দুঃখে পাশে দাড়িয়েছেন। অসংখ্য শিক্ষার্থীকে তিনি বই সহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া চাকুরী দিয়েছেন বেশ কিছু শিক্ষিত বেকার যুবকদের।

এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ এসএসসি পাশ করার পর তিনি চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলায় উত্তর মগাদিয়া পোষ্ট- মলিয়াইশ থেকে পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলায় চলে আসেন। বাড়ী- গুর্খা কটেজ, জেল রোড, রাঙ্গামাটি।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : – ম্যাট্রিক- ১৯৬২ (আবু তোরাব হাই স্কুল), (মলিয়াইশ জুনিয়ার হাই স্কুল, মিঠানালা হাইস্কুল, দুর্গাপুর হাই স্কুল) আই, এ শিক্ষক প্রাইভেট ১৯৬৮ ইং (রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজ), পিআইবিতে সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক সহ অসংখ্যবার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।
রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসার পর তৎকালীন জেলা স্কুল পরিদর্শক জনাব আলী আহমেদ দ্বারা ১৯৬৬ সনের নভেম্বরে কাউখালী উপজেলার কলমপতির বেতছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে চাকুরী করেন। পরে ১৯৬৮ সনে লংগদু থানার সোনাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এবং ১৯৬৯ সনের নভেম্বর পর্যন্ত বরকল থানার গোরস্থান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন।

ঐ সময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গাামাটি, কাউখালীর কলমপতি, লংগদু, রামগড় এবং চট্টগ্রামের মীরসরাই, ও রাঙ্গুনিয়া, ফেনী, কুমিল্লার অন্তত পক্ষে দেড় হাজারেরও অধীক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে নিয়োগ প্রদানে সহযোগিতা করে তাদের পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করেছেন এদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে চাকুরীরত আছেন এবং অনেকেই অবসর গ্রহণ করে সুন্দর জীবন যাপন করছেন।

একেএম মকসুদ আহমদ এর সর্বশেষ কর্মরত প্রতিষ্ঠান- সম্পাদক প্রকাশকঃ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বপ্রথম ও তৎকালীন একমাত্র সংবাদপত্র সাপ্তাহিক বনভূমি (১৯৭৮ ইং) দৈনিক গিরিদর্পণ (১৯৮৩ ইং) বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র।

১৯৬৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামস্থ দৈনিক আজাদীর রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি হিসাবে সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়। ১৯৭৩ দৈনিক জনপদ জেলা সংবাদদাতা, ১৯৭৪ দৈনিক পূর্বদেশ, বার্তা সংস্থা এনাতে, ১৯৭৪-৭৭ এবং ১৯৭৯-৮৬ বাসসে কর্মরত ছিলেন, ১৯৭৬ সন থেকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ইত্তেফাক (১৯৭৮ ইং থেকে) বর্তমানে জেলা প্রতিনিধি ইত্তেফাক। ১৯৮৬-৮৯ পর্যন্ত ইত্তেফাক সংবাদদাতার পাশাপাশি নিউ নেশন এর জেলা সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৯২-৯৩ দি টেলিগ্রাফ পত্রিকায়, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ থেকে জানুয়ারী ২০০১ পর্যন্ত দি ডেইলী ইন্ডিপেনডেন্ট এর রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা এবং ১৯৮৩-১৯৯৮ ইং পর্যন্ত বিবিসির জন্য কাজ করেছিলেন। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশ্বের নিকট পরিচিত করে তুলতে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।

জেলা সংবাদদাতা: জেলা সংবাদদাতা বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম ১৯৯৫ সাল হতে ও রাঙ্গামাটি কেন্দ্রে ২০০৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার রাঙ্গামাটি বার্তা বিভাগের জেলা সংবাদদাতা হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিঃ এর ২০১৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত এবং জুন ২০০৫ থেকে নিউ নেশানের ২০০৮ পর্যন্ত জেলা সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

প্রকাশক : চাক্মা-মারমা কথোপকথন (জুভাপদ) (১৯৭৭), নোয়ারাম চাক্মা প্রণীত গোজেন লামা (১৯৭৭), পরিবার পরিকল্পনা প্রাথমিক গান (১৯৭৭) অধীর কান্তি বড়ুয়া প্রণীত প্রাথমিক বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম (শ্রেণীর পাঠ্য) হাবিবুর রহমান মজুমদ%

পোস্টটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions