পরিবার-অনুগতদের জন্য হাসিনার প্লটবন্যা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আইনের তোয়াক্কা না করে এক নির্বাহী আদেশেই নিজের পরিবার ও অনুগত আমলা, বিচারপতি এবং সংসদ সদস্যদের পূর্বাচলে সাড়ে ১১০০ প্লট দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এ কাজে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) বাধ্য করা হয় বরাদ্দ দেওয়া প্লটগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। ফলে রাজউকের তৎকালীন বোর্ড ভবিষ্যতে কী হবে- সে চিন্তা না করে সরকারের আদেশে লটারির বাইরে দেওয়া প্লটগুলোকে প্রয়োজনীয় বৈধতা দিয়েছে।

রাজউকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্বাহী আদেশে এক হাজার ১৫০টির বেশি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্লটের প্রায় সবই দলীয় বিবেচনায় এবং আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের একজন ছাড়া বাকি ছয়জনের নামে প্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, শেখ রেহানা পেয়েছেন জাতির জনক ট্রাস্টের সহসভাপতি হিসেবে, সজীব ওয়াজেদ জয় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিয়েছেন অটিজমের চেয়ারপারসন হিসেবে। এ ছাড়া রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক নিয়েছেন জাতির জনক ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে। দুই বোনের পরিবারের ছয়জন নিয়েছেন ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠা।

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যদের (এমপি) প্রায় সবাই ১০ কাঠা করে প্লট নিয়েছেন। এমপিদের মধ্যে কেউ কেউ তিন কাঠা ও ৫ কাঠার প্লটও পেয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তারা পেয়েছেন ১০ কাঠা করে।

বিশেষ বিবেচনায় পূর্বাচলের প্লটপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ৯ জন বিচারপতি। তারা পাঁচ থেকে ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। আবার তৎকালীন আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত অনেক আমলা রয়েছেন, তারাও তিন থেকে ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। তালিকায় দেখা গেছে, যারা শেখ হাসিনার খুব বেশি অনুগত ছিলেন, তাদের ১০ কাঠা করে প্লট দেওয়া হয়েছে। কিছু সামরিক কর্মকর্তার নামও পাওয়া গেছে যারা তিন থেকে পাঁচ কাঠার প্লট পেয়েছেন।

সাবেক সচিবদের মধ্যে নজিবুর রহমান ১০ কাঠা, শেখ শামীম ইকবাল ১০ কাঠা, এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী সাড়ে সাত কাঠা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও সাবেক সচিব ফজলে কবির পেয়েছেন সাড়ে সাত কাঠা, হেলালুদ্দীন আহমদ সাড়ে সাত কাঠার প্লট পেয়েছেন। এমনকি সিএমএম রেজাউল করিম চৌধুরীও পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট।

এমন অনেক সচিব আছেন, যারা তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী তিন কাঠার প্লট পেয়েছেন। কিন্তু একজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট। এর বাইরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ সাড়ে সাত কাঠা, মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যান নাদির হোসেন পেয়েছেন সাড়ে সাত কাঠার প্লট। চিকিৎসকদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া পাঁচ কাঠা, ডা. পার্থ প্রতীম দাস ও ডা. অনিন্দিতা দত্ত মিলে পেয়েছেন পাঁচ কাঠার প্লট। ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া পাঁচ কাঠার প্লট পেলেও মন্ত্রী হিসেবে কনক কান্তির ভাই দিলীপ বড়ুয়া পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট।

পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ৪২ জন সাংবাদিক। তারা তিন থেকে পাঁচ কাঠার প্লট পেয়েছেন। সাংবাদিকরা কেউ সাড়ে সাত কাঠা অথবা ১০ কাঠার প্লট পাননি। তবে আমলা, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক হিসেবে যাদের বিশেষ নাম আছে, তাদের প্লটের আকার বেশ বড়।

এর বাইরে কিছু অভিনেতা ও অভিনেত্রী রয়েছেন, যারা তিন থেকে ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন। এর মধ্যে মাহবুবুল আরেফিন শুভ ১০ কাঠা, জয়া আহসান ১০ কাঠা, শমী কায়সার পেয়েছেন সাড়ে সাত কাঠার প্লট। অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনও বিশেষ বিবেচনায় পাঁচ কাঠার প্লট পেয়েছেন। মাহফুজ আহমেদ পেয়েছেন পাঁচ কাঠার প্লট। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্যামেরাম্যান ও অফিস সহায়কও পূর্বাচলের প্লট পেয়েছেন।

আমলাদের মধ্য থেকে আরো যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাহী আদেশে প্লট পেয়েছেন, তারা হলেন- ড. শামসুল আলম পাঁচ কাঠা, শেখ ইউসুফ হারুন পাঁচ কাঠা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৩ ড. মো. জুলফিকার আলী পাঁচ কাঠা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমিন আহমেদ পাঁচ কাঠা, সচিব আবদুল হান্নান তিন কাঠা, কাজী এনামুল হাসান তিন কাঠা, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক নাসিম আনোয়ার তিন কাঠা। এমনকি একজন মন্ত্রীর এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈকেও তিন কাঠার প্লট দেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রদূত গিয়াস উদ্দিনের নাম উল্লেখ থাকলেও তাকে কত কাঠা দেওয়া হয়েছে, সেটি উল্লেখ নেই।

সামরিক বাহিনীর অফিসারদের মধ্যে আয়নাঘরের কারিগর মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানকেও দেওয়া হয়েছে ১০ কাঠার প্লট।

সাংবাদিকদের মধ্যে প্লট দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশতাধিকের কাছাকাছি ব্যক্তিকে। এই পেশাজীবীদের মধ্যে এমন অনেকের নাম আছে, যাদের ঢাকার মূলধারার সাংবাদিকরা চেনেন না বললেই চলে। আবার অনেকেই বেশ পরিচিত সাংবাদিক। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাড়ে সাত কাঠার প্লট দেওয়া হয়েছে স্বদেশ রায়কে।

এ ছাড়া সাংবাদিক তালিকায় নাম আছে মো. নাজমুল হাসান তিন কাঠা, মাহবুব হোসেন খান পাঁচ কাঠা, মুসলিম আহমেদ পিপুল পাঁচ কাঠা, অশোক চৌধুরী পাঁচ কাঠা, মো. ফারুক হোসেন তিন কাঠা, এসএম গোর্কী পাঁচ কাঠা, সাইফুল ইসলাম কল্লোল তিন কাঠা, রফিকুল ইসলাম সবুজ তিন কাঠা, শামিম আরা তানিয়া, শাহান আরা ও রাজীব হাসানকে একত্রে তিন কাঠা দেওয়া হয়েছে; শাহরিয়ার রশীদ তিন কাঠা, নুরুল আমিন তিন কাঠা, রতন কান্তি দেবাশীষ তিন কাঠা, শওকত জামিল খান তিন কাঠা, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তিন কাঠা, জিল্লুর রহমান পাঁচ কাঠা, মো. মোতাহার হোসেন, আলিমুর রহমান পিয়ারা ও মো. ফজলুল হককে দেওয়া হয়েছে একত্রে তিন কাঠা, দুলাল কৃষ্ণ আচার্য তিন কাঠা, দীপ আজাদ পাঁচ কাঠা, এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন তিন কাঠা, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম তিন কাঠা, কাজী কামরুল ইসলাম তিন কাঠা, আমিনুর রহমান তিন কাঠা, মধুসূদন মণ্ডল তিন কাঠা, কামরুল হাসান তিন কাঠা, দিবাকর ঘোষ তিন কাঠা, আরেফিন ফয়সাল তিন কাঠা, মামুন আবেদীন তিন কাঠা, ফারাহ জাবীন শাম্মি তিন কাঠা, মো. মজিবুর রহমান তিন কাঠা, রাহুল রাহা পাঁচ কাঠা, মো. শিহাবুদ্দিন খান পাঁচ কাঠা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্যামেরাম্যান ইউসুফ হোসেন তিন কাঠা, কার্তিক চ্যাটার্জি পাঁচ কাঠা, বিএম জাহাঙ্গীর তিন কাঠা, আশরাফুল হক পাঁচ কাঠা, বিটিভির দিদারুল আলম পাঁচ কাঠা, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম তিন কাঠা, ড. রমণী মোহন দেবনাথ তিন কাঠা।

এ ছাড়া মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফকে তিন কাঠার প্লট দেওয়া হয়েছে। মাইজভাণ্ডারীদের মধ্যে নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কল্পিত অভিযোগে মামলা করেছিলেন। তার পুরস্কার হিসেবে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ ও তাকে আওয়ামী লীগ সরকার এই জমি উপহার দিয়েছে বলেও শোনা গেছে।

এর বাইরে ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ সংগঠনটির সাবেক নেতাদের বিভিন্ন আকারের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।আমারদেশ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions