ডেস্ক রির্পোট:- দরজায় কড়া নাড়ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দুই শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে সংগঠিত নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। আলোচিত এ দল নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এবার দৃশ্যপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তার দল গণঅধিকার পরিষদ। রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন রয়েছে, ‘শীর্ষ’ পদ পেলে গণঅধিকার পরিষদ বিলুপ্ত হয়ে ছাত্রদের সঙ্গে মিলে ‘ওয়ান পার্টি’ হতে পারে। তবে জোটবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির পক্ষেই বেশি মতামত দিচ্ছেন উভয়পক্ষের নেতারা।
গণঅধিকার পরিষদ ও নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নুরুল হক নুর ছাত্রদের নতুন দলে আসতে চান। দলের শীর্ষ দুই পদের একটি পদের দাবিদার তিনি। এ ছাড়া নতুন দলে একজনকে মুখপাত্র রেখে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দিয়ে দল পরিচালনা করারও আরেকটি প্রস্তাবনা আলোচনায় আছে। এমনটি হলে সেখানে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে
সূত্র বলছে, গত কয়েকদিন ধরে নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় মিটিং হয়েছে নুরের। সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে আসন্ন দলটির সদস্য সচিব পদ ঘিরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে সাবেক শিবির নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে এ আলোচনা আরও ডালপালা মেলেছে। একই কারণে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘিরে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন নাগরিক কমিটিতে থাকা গণঅধিকার পরিষদের সাবেক নেতারা।
সূত্র আরও জানায়, নুরুল হক নুরকে আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিব এসব পদে দেখতে চায় না নাগরিক কমিটির বেশিরভাগ নেতাই। সেক্ষেত্রে জোটবদ্ধ রাজনীতি কিংবা নির্বাচনী জোট হতে পারে। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নুরকে আহ্বায়ক করা ছাড়া ওয়ান পার্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা, নাগরিক কমিটির অধিকাংশ নেতা এবং ছাত্র উপদেষ্টারা দীর্ঘদিন নুরুল হক নুরের সঙ্গেই রাজনীতি করেছেন। নুরকে আহ্বায়ক করলে দল আরও শক্তিশালী হবে।
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেমন কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সৃষ্টি এবং তারুণ্যনির্ভর সংগঠন, গণঅধিকার পরিষদও একই ধারার দল।
নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, নতুন দলে নুরুল হক নুরের যোগ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শীর্ষ দুই পদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিদের মধ্য থেকেই সবাই চায়। সেক্ষেত্রে তার এই দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে।
জানা যায়, শুধু নাগরিক কমিটি নয়, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ তারুণ্যভিত্তিক কয়েকটি দল নিয়ে বৃহত্তর দল গঠন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে কারও সঙ্গেই এখনো অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়নি।
এ বিষয়ে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, সম্মিলিত এবং বড় আকারে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে হাজির হলে সেটি জাতি এবং নতুন রাজনৈতিক শক্তির জন্য ভালো। আলাপ চলমান আছে, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে অনেক স্টেকহোল্ডার জড়িত আছে।
অন্যদিকে একীভূত হওয়ার আলোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে, একসঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে তারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে, ডাকসু নির্বাচন করেছে। এখন দল গঠন করছে। সেক্ষেত্রে একসঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একেবারে দলে যোগদানের বিষয়ে আমরা ভাবছি না।
নতুন দলে তাকে ঘিরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নুর বলেন, এ ধরনের একটা আলোচনা ছিল। যেহেতু আমরাও কোটা সংস্কারের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। তাই উভয়পক্ষ থেকেই এ আলোচনা এসেছিল। তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা এখান থেকে অনেকটা সরে এসেছি। কেননা, আমরা গত সাত থেকে আট বছর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি; কিন্তু নতুন দলে নানা মতপার্থক্য রয়েছে, কাঠামোও ঠিক হয়নি। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে একীভূত হওয়া কঠিন। তাহলে আমরা কেন একীভূত হয়ে এ প্রক্রিয়ায় যাব?
এদিকে দল ঘোষণার বিষয়ে নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, নতুন দল গঠন নিয়ে মতভেদ আছে, দ্বন্দ্ব নেই। মত যেখান থেকেই আসুক না কেন সিদ্ধান্ত সবার সমন্বয়ে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন দলের ঘোষণা আসবে। সেটি ২৪ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে।কালবেলা