ডেস্ক রির্পোট:- দেশের বাজারে ১ হাজার ৬৫০ জেনেরিকের ২০ হাজার ওষুধের মধ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র ১১৭ জেনেরিকের ৪১৭ ওষুধ। গেজেটভুক্ত এ অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বাদে অন্যগুলোর দাম নির্ধারণে কাঁচামাল, উৎপাদন খরচ, প্যাকেজিং খরচ যুক্ত করে দাম সমন্বয়ের আবেদন করে কোম্পানিগুলো। এগুলো যাচাইবাছাই করে ভ্যাটযুক্ত মূল্য নির্ধারণের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জানা যায়, দেশে উৎপাদিত এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। আইন অনুসারে প্রতিটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই এই তালিকার ৬০টি ওষুধ উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ উৎপাদনকারীই এর মধ্যে অল্প কয়েকটি ওষুধ উৎপাদন করে। এই ১১৭টির বাইরে অন্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল সরকারের। কিন্তু ১৯৯৪ সালে মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম সরকারের হাতে রেখে এবং বাকিগুলো কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকঋণের সুদ, জ্বালানি খরচ এবং ডলারের চড়া দরের কারণে ওষুধের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে- এ অজুহাত দেখিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেকগুলো ওষুধের দাম বাড়ানোর আবেদন জমা দিয়ে রেখেছে। গত দুই বছরে প্রায় সব ধরনের ওষুধের কয়েক দফা মূল্যবৃদ্ধির পর ওষুধ কোম্পানিগুলো আরও দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের কাঁচামাল ও মোড়কের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ না হওয়ায় অনেক কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তখন বাজারে ওষুধের প্রাপ্যতা কমে যায়। মানুষ যাতে ওষুধ না পেয়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটিও আমরা দেখি। ওষুধ কোম্পানি দাম বাড়ানোর আবেদন করলেই যে আমরা দাম বাড়াব তা নয়। আমরা তাদের খরচ যাচাই করে দাম নির্ধারণ করি। তিনি আরও বলেন, ‘পাইপলাইনে দাম বাড়ানোর আবেদন আছে। আমাদের জেনেরিক আছে ১ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে ১১৭টা। এর বাইরের ওষুধগুলোর দাম বাড়াতে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা তা যাচাই করে তার আবেদিত মূল্য বা তার চেয়ে কম মূল্য নির্ধারণ করে দিই।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ওষুধের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির খরচ বাড়বে। এ জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে উৎপাদন খরচ কিভাবে কমানো যায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওষুধের খরচ কয়েকটি কারণে বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশের মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কিনতে পারে এবং অপ্রয়োজনে ওষুধ খায়। কোয়াকদের কাছে গেলে তারাও ইচ্ছামতো ওষুধ দেয়, অনেক অসাধু চিকিৎসকও অতিরিক্ত ওষুধ দিয়ে থাকেন। এজন্য দায়ী কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং। কোম্পানির আগ্রাসী মার্কেটিং বন্ধ হলে খরচ কমবে, এতে ওষুধের দামও কমবে। ওষুধ সেবনের পরিমাণ এবং দাম যৌক্তিক হলে চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে।