শেখ হাসিনার ফাঁদে পড়ে আরও ক্ষয়ে যাচ্ছে আ. লীগ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- শেখ হাসিনার ফাঁদে পড়ে দিন দিন আরও ক্ষয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা না করে এখনো বিদ্বেষ ছড়ানো উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা, যা ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়াচ্ছে জনমনে। ফলে দেখা যাচ্ছে প্রতিক্রিয়া, তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে আওয়ামী লীগকে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা । প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিদেশে বসে বিভিন্ন ধরনের উসকানি ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ফোনকল করে দেশে-বিদেশে অবস্থান করা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কথিত এসব ফোনালাপ ফাঁসও হয়েছে। যেখানে নেতা-কর্মীদের উসকে দেওয়ার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিঘাংসা ছড়াতে দেখা যায় তাকে।

দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে যে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড চালানো হয় তার জন্য এখন পর্যন্ত তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাননি। এমনকি এর জন্য তার মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই, যার প্রকাশ তার বক্তব্য-বিবৃতিতেও বিন্দুমাত্র উঠে আসছে না। শুধু তাই নয়, কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও তার মধ্যে কোনো সতর্কতা লক্ষ্য করা যায় না।

আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় বসেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে তিনি ২০১৪ সালে নির্বাচন আয়োজন করলে তা বর্জন করে বিএনপি, জামায়াতসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। যা কুখ্যাতি পায় বিনাভোটের নির্বাচন হিসেবে। এর ধারাবাহিকতায় জনমত ও বিরোধী দলগুলোর মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি ২০১৮ সালে ও ২০২৪ সালেও করেন বিতর্কিত নির্বাচন, যা কুখ্যাতি পায় যথাক্রমে রাতের ভোট ও ডামি নির্বাচন হিসেবে।

এভাবে টানা ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত থাকতে তিনি বহু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যা, গুম ও নিপীড়ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া উন্নয়নের আড়ালে দেশকে ১৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি পাচার বা লুটপাট করা হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসছে।

তার সরকারের এহেন লুটপাট, দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ক্ষোভের দানা বাঁধছিল। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে তা দমনে নিষ্ঠুরভাবে বলপ্রয়োগ করে শেখ হাসিনার সরকার। রাজপথে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি হেলিকপ্টারও ব্যবহার হতে থাকে বিক্ষোভ দমনে। এতে ছাদে খেলতে যাওয়া শিশু থেকে শুরু করে বারান্দায় বাবার কোলে থাকা শিশুও গুলিতে প্রাণ হারায়।

সরকারি হিসেবে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে প্রায় আট শ’ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীদের হিসাবে, এ সংখ্যা দুই হাজারের মতো।

শিশু, নারী থেকে শুরু করে নিরীহ জনতার ওপরও হাসিনার সরকার খগড়হস্ত হলে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। যোগ দেয় দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত বছরের ৫ আগস্ট লাখো ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এলে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তার আগে-পরে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। গাঢাকা দেন দলটির দেশে থাকা নেতা-কর্মীরা।

হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনে সংঘঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের ঘোষণা দেয়।

এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা ও হত্যার অভিযোগে কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হতে থাকে। শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ওইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা, সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপি গ্রেপ্তার হন, যান কারাগারে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকের নামে হয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা।

এই পরিস্থিতিতে হাসিনার সমালোচক নিরীহ আওয়ামী লীগের কর্মীরা যখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার আশায় দিন গুনছেন, ঠিক তখন আওয়ামী লীগকে মাঠে নামাতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন শেখ হাসিনা। অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির ওপর রাতের আঁধারে চোরাগোপ্তায় লিখতে বলা হচ্ছে হাসিনার নামে নানান স্লোগান, যা অভ্যুত্থানের কর্মীদের বিক্ষুব্ধ করছে।

তার নির্দেশে এই ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনের জন্য নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

এছাড়া আন্দোলনকারীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে তার নানান বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে। এসব নিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে বিদেশে পালিয়ে নিরাপদে বিলাসী জীবনযাপন করতে থাকা দলটির কতিপয় নেতা-কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট। এতে ছাত্র-জনতার অসন্তোষ আরও বাড়ছে।

অসন্তোষের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন সেই শেখ হাসিনাই। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে আগে থেকে প্রচারণা চালাতে থাকেন। এই ভাষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। তাদের অভিযোগ, ভারতে বসে ভাষণ দিয়ে শেখ হাসিনা বিদ্বেষের আগুন ছড়াচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে মার্চ করার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতেই থাকতেন শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান। বাড়িটি পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হতো ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে। এমনকি হাসিনার অনুগত অনেক সরকারি আমলাও এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করতেন।

এই বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই সমবেত হতে থাকে ছাত্র-জনতা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ৯টায় শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের সময় নির্ধারিত ছিল। যদিও হাসিনার অডিও ভাষণ প্রচার হয়। তার এ ভাষণকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

এছাড়া খুলনায় একসময়কার প্রবল প্রতাপশালী ‘শেখ বাড়ি’, কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের স্থাপনায় ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধরা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেখ হাসিনাসহ দলটির যেসব নেতা-কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট জুলাই হত্যার জন্য অনুশোচনা না করে বা নমনীয় না হয়ে, উপরন্তু বিদেশে বসে বিদ্বেষ-উসকানি ছড়াচেছন, তা দেশে থাকা আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মী-সমর্থকদের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে। কোটা আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার হঠকারিতা তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও বজায় থাকলে তা আওয়ামী লীগের আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। শেখ হাসিনার ফাঁদে পড়ে আওয়ামী লীগ আরও ক্ষয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস উইংয়ের মিনিস্টার (প্রেস) গোলাম মোর্তোজা তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘গণহত্যাকারী হাসিনার বিচার নিশ্চিত করেন। গণহত্যাকারীর পক্ষ নিয়ে যারা গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রজেক্ট নিয়ে নেমেছে, এদের গণহত্যার অংশীজন হিসেবে বিচারের আওতায় আনেন। খুনির পক্ষ নেওয়ার অধিকার আছে শুধু তার উকিলের, অন্য কেউ গণহত্যাকারীর পক্ষ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেটে গঠিত সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারে। ভাঙ্গার চেয়ে খুনি অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখিয়ে ব্যাবস্থা নেওয়া জরুরি। খুনিরা বিদেশে পালিয়ে গেল, সেখান থেকে উস্কানি দিচ্ছে-উত্যক্ত করছে। এদের দেশের সম্পদের দিকে নজর দেন। শহীদ পরিবারের হক আছে খুনি-লুটেরাদের সম্পদে। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি মিনমিন করলে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। ’

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উসকানি মূলত দায়ী। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরে ধারণ করে না। এটি তার ঘৃণিত স্বভাব।’বাংলানিউজ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions