রাঙ্গামাটি মিনি চিড়িয়াখানার ১৭ বন্যপ্রাণীর নতুন ঠিকানা ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- ২০০৮ সালে রাঙ্গামাটিতে মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপনের পর সেখানে আনা হয় কয়েকটি ভালুকছানা। প্রায় ১৬ বছরের মধ্যে ভালুকগুলোর একটি ছাড়া বাকি সবগুলো মারা যায়। এরপর একটি ভালুকের দিন–রাত পেরিয়েছে একাকীত্বে। অবশেষে সেই নিঃসঙ্গতার অবসান হলো। নিঃসঙ্গ ভালুকটিকে উদ্ধার করে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। একই সঙ্গে মিনি চিড়িয়াখানার অন্য সব বুনো প্রাণীকেও উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত মিনি চিড়িয়াখানাতে গিয়ে বন্যপ্রাণীগুলো উদ্ধার করে। এরপর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় কঙবাজারের চকরিয়ায় অবস্থিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। এর আগে অবশ্য জেলা পরিষদ বন বিভাগের বিশেষ এই ইউনিটকে বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তরের কথা জানায়।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ পরিচালিত মিনি চিড়িয়াখানাটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায় ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট। যদিও অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই সেখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আনতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে, খাবার সংকট ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে কিছু বন্যপ্রাণী মারা গেছে। চিড়িয়াখানাটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়বর্ধক প্রকল্প না হওয়ায় এটির প্রতি মনোযোগী ছিল না প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক বরাবর চিঠি লিখে মিনি চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণীগুলো বন বিভাগকে হস্তান্তরের কথা জানায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। চিঠিতে তিনি বন বিভাগকে জানিয়েছেন, কিছু বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে ২০০৮ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করে জেলা পরিষদ। চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো বর্তমানে অভিজ্ঞ জনবলের অভাবের কারণে প্রতিপালন ও সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। তাই বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটি।

জেলা পরিষদের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মিনি চিড়িয়াখানাটিতে প্রাণীর সংখ্যা রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে একটি ভালুক, ৫টি বনমোরগ, ৪টি বানর, একটি হরিণ, ৬টি কচ্ছপ, ও দুটি সজারু রয়েছে। তবে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট জেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯টি প্রাণীর মধ্যে দুটি ব্যতীত ১৭টি প্রাণী উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করে প্রাণীগুলোর কঙবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে কোয়ারেন্টাইন ও যথাযথ চিকিৎসা শেষে প্রাণীগুলো বনে অবমুক্ত করা হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, রাঙামাটি জেলা শহরের এক প্রান্তে সুখীনীলগঞ্জ এলাকায় নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে চিড়িয়াখানা প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশে স্থাপন করা হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে উদ্যোগটি বিফলে গেছে। উল্টো বন্য প্রাণী ধরে এনে লোহার খাঁচায় বন্দি করায় খাবার ও অসুখে মারা গেছে প্রাণী।

মিনি চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী পালনকারী সোনাবী চাকমা বলেন, এখানে বনবিড়াল, খরখোশ, ভালুক, হরিণ ও গুইসাপ ছিল। কিছু কিছু প্রাণী মারা গেছে। আমি চেষ্টা করেছি প্রাণীগুলো যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারে। ভালুকটাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমার খুব খারাপ লাগছে। ছোট থেকে আমি পালন করছি। ডাক দিলেই সে আমাকে চেনে। কুকুরের ছানার মতো ছিল; এখন তো অনেক বড় হয়েছে।

বন অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন বলেন, বন্যপ্রাণীগুলোর মধ্যে ভালুকের শারীরিক অবস্থা ভালো। হরিণের অবস্থা মোটামুটি, চামড়ায় কিছুটা সমস্যা আছে। বানরের চামড়ায় সমস্যা আছে। অন্যান্য প্রাণীগুলো মোটামুটি আছে। এগুলোকে আমরা সাফারি পার্কে নিয়ে যাব। আমি মূলত সাফারি পার্কেই দায়িত্বপ্রাপ্ত আছি। প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। সে কারণেই এখানে আসা। বন বিভাগের প্রাণী চিকিৎসক কম থাকায় আমাকে চট্টগ্রাম, কঙবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি সবখানেই যেতে হয়।

ভালুকটি প্রসঙ্গে বলেন, নিঃসঙ্গ থাকলে অবশ্যই ভালুকটির মধ্যে মানসিক প্রভাব পড়বে। যদি ছোট অবস্থা থেকেই এখানে মানুষের সংস্পর্শে থাকে, তাহলে তার মনের মধ্যে প্রেসার কম পড়বে। পরিবেশ–প্রকৃতি বোঝার পর যদি প্রাণীকে আলাদা করা হয় তাহলে সে প্রাণীর মনের মধ্যে চাপটা বেশি পড়ে। ভালুকটি যেহেতু ছোট অবস্থা থেকেই মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে, তার এত সমস্যা হবে না। তবে ভালুকটির আচরণগত কিছু পরিবর্তন হবে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, মিনি চিড়িয়াখানার নামে প্রায় বিগত দুই দশক ধরেই বন্যপ্রাণীগুলো আটকে রাখে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এটি নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সভা–সেমিনারে প্রসঙ্গ উঠলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি জেলা পরিষদ। মিনি চিড়িয়াখানাটিতে শিশুপার্ক তৈরিসহ নানা কথা উঠলেও কোনোটিতে নজর দেয়নি বিগত পর্ষদ। অবশেষে অন্তর্বর্র্র্তীকালীন পরিষদ গঠনের পর তারা বন্যপ্রাণীগুলো বন বিভাগকে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দ্বীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রধান বন সংরক্ষকের মাধ্যমে এটি অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন উনারা বলেছেন কিছু প্রাণী রাখতে চান। পরে নিঝুম দ্বীপ থেকে কিছু হরিণ আনার বিষয়ে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে বন অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু প্রাণী এনেছিলেন। পরবর্তীতে অন্য যে প্রাণীগুলো এসেছে, সেগুলো কিভাবে এসেছে সেটি বন অধিদপ্তর জানে না। এখানকার প্রাণীর ওপর যথেষ্ট অবহেলা ও পরিচর্যার অভাব রয়েছে। তাই বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বন্যপ্রাণীগুলো উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়। জেলা পরিষদ বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তরের জন্য সম্মত হওয়ায় আমরা আজ (সোমবার) উদ্ধার করেছি। বন্যপ্রাণীগুলো প্রথমে কঙবাজারের চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নিয়ে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। এরপর যেগুলো প্রকৃতিকে অবমুক্ত উপযোগী সেগুলোকে অবমুক্ত করা হবে। যেগুলোকে বেষ্টনীতে রাখতে হবে, সেগুলোকে বেষ্টনীতে রাখা হবে।

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ২০০৮ সালে মিনি চিড়িয়াখানাটি স্থাপন করার পর এখানে কিছু বন্যপ্রাণী রাখা হয়। বর্তমানে এটি ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন পরিপন্থী। এই আইনের অধীনে কোনো ধরণের দেশীয় প্রজাতির বন্যপ্রাণী ক্রয়–বিক্রয়, বন্দি রাখা, লালন–পালন করা আইন পরিপন্থী।আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions