দলীয় ক্যাডার ও জামাই কোটার বিচারপতিরা বহালতবিয়তে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে কটাক্ষ করে ‘ডাকাত’ বলেছিলেন এক বিচারক। আরেক বিচারপতি জুলাই বিপ্লবে পুলিশের দেখামাত্র গুলির নির্দেশনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তেমনি খুনের মামলায় আসামি ছিলেন একজন। আরেকজন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণাকে বৈধ করেছিলেন। নীতিমালা ও আইন না থাকায় শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক পদে নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি ছিল দলীয় ক্যাডার, পুরস্কার কোটা ও জামাই কোটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়োগের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পুরস্কারের তালিকায় আরও ছিলেন রাজনৈতিক মামলাগুলোতে নিম্ন আদালতে ফরমায়েশি রায় দেওয়া বিচারকরা। অনেকেই বিচারক হয়েছিলেন আওয়ামী নেতাদের ‘জামাই’ কোটায়।

এমনকি আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বহুল আলোচিত আদালত অবমাননার অভিযোগের পিটিশনারও পুরস্কার হিসেবে বিচারক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এসব কোটায় বিচারক হওয়া তাঁবেদাররাই এখনো হাইকোর্ট বিভাগে বহালতবিয়তে রয়েছেন। তাদের কাছেই বিচারাঙ্গনকে নিরাপদ মনে করছেন একদল সুবিধাভোগী আইনজীবী।

আওয়ামী আইনজীবীদের যারা একসময় ছিলেন রমরমা অবস্থায়, তারা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। তাদের জায়গা দখল করেছেন বিপরীত রাজনৈতিক চিন্তার আইনজীবীরা। তারাই নিয়মিত দলীয় আওয়ামী ক্যাডার, জামাই কোটা ও পুরস্কার কোটায় নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের বেঞ্চে গিয়ে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন, ক্ষেত্রমতে আবার ধমকও দিচ্ছেন বিচারকদের।

তাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন বিচারকরা। ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী আইনজীবীদের চেহারা দেখে আদেশ ও রায় দিতেন এসব বিচারক। এখনো রায় ও আদেশ দেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলের বিরোধী আইনজীবীদের চেহারা দেখে। আইন নয়, বরং আইনজীবীদের চেহারাই এসব বিচারকের কাছে সব সময় গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিশেষ সুবিধা পেতে আওয়ামী আইনজীবীদের চেম্বারের মামলার ফাইল যাচ্ছে এখন বিপরীত মতাদর্শের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের চেম্বারে।

আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে পিটিশনের পুরস্কার হিসেবে নিয়োগ

শেখ হাসিনার শাসনকালে ২০১০ সালের জুনে আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার পিটিশনকারীও পুরস্কৃত হয়েছেন বিচারকের পদে নিয়োগ পেয়ে। ২০১০ সালের ১ জুন পত্রিকাটির বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার মামলাটি বেশ আলোচিত এবং ঢাকা ল’ রিপোর্টে (ডিএলআর) রিপোর্ট হওয়া মামলা।

এ মামলায় ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’ বলে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানকে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে জেল-জরিমানা করা হয়। এই আলোচিত মামলায় আদালত অবমাননার পিটিশনার ছিলেন কট্টর আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত রিয়াজ উদ্দিন খান। পরে শেখ হাসিনা তাকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।

দলীয় ক্যাডার তালিকায় নিয়োগ

বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়রদের তালিকায় রয়েছেন নাঈমা হায়দার। তার বেঞ্চেই সুখরঞ্জন বালীর সন্ধান চেয়ে একটি ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আবেদন করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীর মামলায় এই সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনাল ও ভারতের যোগসাজশে গুম করা হয়।

২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর। ট্রাইব্যুনাল গেট থেকে বালীকে গুম করা হলেও নাঈমা হায়দারের বেঞ্চে কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি। কোনো আদেশ না দিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে গুমের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন। এ-ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্ট মামলায় শেখ হাসিনাকে খুশি রাখতেই তৎপর ছিলেন তিনি।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মো. রেজাউল হাসান। ব্যারিস্টার শফিক আহমদের রাজনৈতিক চিন্তার সহযোগী একসময়ের ব্যাংক কর্মকর্তা বিচারপতি পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০১০ সালে।

এ তালিকায় আরও আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রব। আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা নজির বিচারক হওয়ার পর এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও নিয়েছিলেন।

কট্টর আওয়ামীপন্থি জেবিএম হাসান। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিশ্বস্ত হিসেবে দীর্ঘ সময় রিট বেঞ্চে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট রিট মামলাগুলোতে সরকারের পক্ষে আদেশ দিয়ে সব সময় আলোচিত-সমালোচিত তিনি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোনয়ন তিনটি আসনেই বাতিল ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং অফিসার। এই বাতিল আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করা হয়।

ওই আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদ ও ইকবাল কবিরের বেঞ্চে বিভক্ত রায় দেওয়া হয়। সৈয়দ রেফাত আহমদ নির্বাচন কমিশনের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ইকবাল কবির রায় দেন নির্বাচন কমিশনের আদেশকে বৈধ ঘোষণা করে। বিভক্ত রায়ের পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্তের জন্য জেবিএম হাসানকে একক বেঞ্চের দায়িত্ব দেন। তিনি শুনানি গ্রহণ করে ইকবাল কবিরের রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। অর্থাৎ, বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণাকে বহাল রাখেন।

আশরাফুল কামাল, যিনি অপ্রাসঙ্গিক মামলার রায়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তিনি রায়ে উল্লেখ করেন- ‘আমরা জানি ডাকাতরা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের যে নেতৃত্ব দেয়, তাকে ‘ডাকত সর্দার’ বলে। ডাকাতি করার সময় ডাকাতরা বাড়িটি বা ঘরটি কিছু সময়ের জন্য অস্ত্রের মুখে দখল করে এবং মূল্যবান দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করে।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গং দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র ও অবৈধ কলমের খোঁচায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ভেঙে ডাকাতদের মতো অবৈধভাবে জোরপূর্বক জনগণের ক্ষমতা ডাকাতি করে দখল করেন।’ এ রায়ে শহীদ জিয়াউর রহমানকে শুধু ডাকাতের সঙ্গেই তুলনা করে ক্ষান্ত হননি, আরও অনেক আপত্তিকর ভাষায় শহীদ জিয়াউর রহমানকে আক্রমণ করেছিলেন।

মজিবুর রহমান মিয়াকে নিয়োগ দেওয়া হয় দলীয় ক্যাডার হিসেবে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাকে প্রথমে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের অক্টোবরে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগের কয়েক মাস পরই অতিবিশ্বস্ত হিসেবে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওবায়দুল হাসান শাহিন, মজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে আবদুল কাদের মোল্লা ও মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়।

মোস্তফা জামান ইসলাম আওয়ামী ক্যাডার হিসেবেই পরিচিত। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় দেখামাত্র গুলির ঘোষণা দিয়েছিলেন ফ্যাসিবাদের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই নির্দেশনা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। রিট আবেদন খারিজ করে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য দেখামাত্র গুলির নির্দেশনার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বেফাঁস কথাবার্তা বলে এবং মডেলের সঙ্গে অসংলগ্ন অনৈতিক কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রতিমন্ত্রী মুরাদের ছোট ভাই মো. মাহবুব হাসান তালুকদার এখনো আছেন তার পদে। দলীয় এই ক্যাডারের স্ত্রী-সন্তান থাকেন আমেরিকায়। তিনি নিজেও আমেরিকান নাগরিক বলে জানা গেছে।

বিচারক হওয়ার আগে আমেরিকাতেই থাকতেন নিয়মিত। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রেগুলার প্র্যাকটিস না থাকলেও শুধু ওকালতি সনদের ১০ বছরের অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় হাইকোর্ট বিভাগে।

বিচারক হিসেবে আরও রয়েছেন আপিল বিভাগ থেকে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া ইনায়েতুর রহিমের সরাসরি জুনিয়র মো. খায়রুল আলম, প্রধান বিচারপতি পদ ছেড়ে যাওয়া ওবায়দুল হাসানের জুনিয়র মো. ইকবাল কবির, ফজলে নুর তাপসের সরাসরি জুনিয়র একেএম রবিউল হাসান।

খুনের মামলার প্রধান আসামি

রুহুল কুদ্দুস কাজল ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা। একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতাকে খুনের দায়ে প্রধান আসামি ছিলেন তিনি। মামলাটি থেকে রেহাই পেতে হাইকোর্ট বিভাগে কোয়াশিংয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট রায় আবেদন খারিজ করে বলে দেয় মামলাটি কোয়াশিং নয়, বরং নিম্ন আদালতে বিচার শুনানি চলবে।

এ অবস্থায় বিচারপতি পদে নিয়োগের আগের দিন মামলাটি নির্বাহী আদেশে প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এতে ভুক্তভোগী পরিবারকে বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অভিযুক্তকে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমার দেশে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল নিয়োগের আগেই। এতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তাকে শপথ পাঠে অপারগতা প্রকাশ করেন। ৬ মাস পর খায়রুল হক দায়িত্ব নিয়ে তাকে শপথ পড়ান।

‘জামাই’ কোটায় নিয়োগ

শেখ হাসিনার সময়ে আওয়ামী নেতাদের মেয়ের জামাই কোটায় নিয়োগ পেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে সন্ত্রাসের দায়ে পরিচিত খসরুজ্জামান। ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও প্রধান বিচারপতির এজলাসে নজিরবিহীন অরাজকতায় নেতৃত্ব দিয়ে সমালোচিত খসরুজ্জামান নিয়োগ পান ‘জামাই’ কোটায়।

আওয়ামী আইনজীবী নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের তৎকালীন সভাপতি মেসবাহুজ্জামানের মেয়ের জামাই খসরুজ্জামান। তখনই তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে অংশ নেওয়ার সচিত্র প্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল আমার দেশ-এ। এতে তাকে শপথ করাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। ফলে ছয় মাস শপথবিহীন অবস্থায় ছিলেন তিনি।

এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হয়ে নিয়োগের ছয় মাস পর তাকে শপথ দেন। হাইকোর্ট বিভাগে রাজনৈতিক মামলাগুলোতে শক্তভাবেই আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে সক্রিয় অবস্থানে ছিলেন তিনি।

এ বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার। জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন ফজলে রাব্বি মিয়া। তার মেয়ের জামাই খুরশীদ আলম ২০১০ সালে নিয়োগ পান বিচারপতি পদে। এ পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ব্রিটেনে ইমিগ্রেশন আইনজীবী ছিলেন। খুরশীদের বিরুদ্ধে গাইবান্ধায় একটি আসনে উপনির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশগ্রহণ এবং প্রভাব খাটিয়ে নিজের বাবার নামে ট্রাস্টে টাকা নেওয়ার বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।

‘জামাই’ কোটায় নিয়োগ পাওয়া বিচারকের মধ্যে আরও রয়েছেন সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের মেয়ের জামাই ইজারুল হক আকন্দ। কট্টর আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিতি তিনি। ২০০০ সালে কুখ্যাত জননিরাপত্তা আইনে তৎকালীন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, সাবেক বিচারপতি হাবিবুর রহমান ভুঁইয়াসহ ২৫ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি।

এ বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিচারকের মধ্যে রয়েছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ভাতিজি জামাই জাফর আহমদ। এছাড়া রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুধাংশু শেখর হালদারের মেয়ের জামাই শশাঙ্ক শেখর সরকার।

ফ্যাসিবাদের সরাসরি সেবক হিসেবে পুরস্কার

পুরস্কৃতদের মধ্যে আরও আছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফরমায়েশি রায় দেওয়া শাহেদ নুর উদ্দিন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া আখতারুজ্জামান ও কুদ্দুস জামান। জেলা জজ আদালতে বিচারক থাকাকালে ফ্যাসিবাদের সেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারা। পরে হাইকোর্ট বিভাগে এসেও তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায়ের পর হাইকোর্ট বিভাগে জামিন চান বেগম জিয়া। এ মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেন ওবায়দুল হাসান ও এসএম কুদ্দুস জামান। তারা বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে ফ্যাসিবাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এসএম মজিবুর রহমানকেও পুরস্কার হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফরমায়েশি রায় দেওয়ার পরপর তাকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক চার্জশিটে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর নিজামী নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং আবদুর রহিমকে সর্বোচ্চ কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায় ঘোষণার পরই বিচারক এসএম মজিবুর রহমানকে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে তিনি হাইকোর্ট বিভাগ থেকে অবসরে গেছেন।

আইননজ্ঞরা বলছেন, এসব বিচারক সুপ্রিম কোর্টকে দলীয়করণের চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন। রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্ট মামলায় আইনের তোয়াক্কা না করেই রায় দিতেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের পক্ষে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সুরাহা হতো না হাইকোর্টে।

এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সুখরঞ্জন বালী থেকে শুরু করে অনেক গুমের ঘটনায় হাইকোর্ট বিভাগে হেবিয়াস কর্পাস দায়ের করে সন্ধানের জন্য নির্দেশনা চেয়েছিলেন ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা। একটি ঘটনায়ও হাইকোর্ট থেকে মানবাধিকারের পক্ষে আদেশ পাওয়া যায়নি। বরং উল্টো সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে গুমের ঘটনাগুলোকে নীরব সমর্থন জানানো হয়।

অপরদিকে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান, শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতাসহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে নির্দেশনা জারির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেন এই বিচারকরা।আমারদেশ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions