শিরোনাম
এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া মানবিক করার উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনের কানাডা, মেক্সিকো, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অ্যাকশন শুরু ১৮ দিনের কর্মসূচি নিয়ে আজ মাঠে নামতে চায় আ. লীগ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অভিযানেও থামছে না ফসলি জমির মাটি কাটা,বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সবুজ অরণ্য ঘেরা পাহাড় পরিণত হচ্ছে বিরান ভূমিতে,হচ্ছে সংরক্ষিত বনের কাঠ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে শিশুদের ডায়াবেটিস মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্প খাত সাইম আইয়ুবকে ছাড়াই পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল যুক্তরাষ্ট্রে এবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিধ্বস্ত, ৬ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা শত্রু শত্রু খেলা কেন? দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কোন দিকে ধাবিত

পেশাদার নেতৃত্ব, ঘুষ রোধ ও কার্যকর সংস্কারে জোর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘গুন্ডা প্রতিরোধ বাহিনী বা অ্যান্টিগুন স্কোয়াড’ গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। তাদের দীর্ঘ মেয়াদের সুপারিশে সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যকর করতে দক্ষ ও যোগ্য টেকনোক্র্যাট নিয়োগের মাধ্যমে পেশাদার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে টাস্কফোর্সের ৫৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তুলে দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের হাত ধরে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, তা কার্যকর ও টেকসই করতে তরুণ সমাজকে কাজে লাগানোরও সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নে গত ১০ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। এর প্রধান করা হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দর আগামী বিনির্মাণে সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিকের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক দায়িত্ব পালনের বন্দোবস্ত দরকার। শক্তিশালী নেতৃত্ব, সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া গেলে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তর সম্ভব হবে।

বিগত সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫০ বছরে সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত শ্রেণির উত্থান হয়েছে, যা অর্থনীতির মূল ভিত্তি দুর্বল করেছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। বিগত সব সরকারকেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনিয়মের দায় নিতে হবে। তবে গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্দ নীতির কারণে সুশাসনের ব্যাপক অবনতি হয়।

জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, জুলাই বিপ্লবে তরুণরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ সক্ষমতা দেখিয়েছে। এখন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আর্থসামাজিক যে কোনো সংস্কার উদ্যোগেও তারা সাহসী এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সংস্কার উদ্যোগ যাতে অতীতের মতো পরিণতি না পায়, সে জন্য তরুণদের কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংস্কারে তরুণ সমাজ
টাস্কফোর্স মনে করে, জুলাই বিপ্লবে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর শক্তিমত্তার প্রমাণ মিলেছে। ন্যায় ও সুবিচারের পক্ষে তাদের লড়াকু মনোভাব, আশাবাদ এবং অঙ্গীকার চলমান সংস্কারের গতি ও টেকসই করতে কাজে লাগাতে হবে। তরুণদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও নাগরিক উদ্যোগ এতে যুক্ত করতে হবে। এ জন্য একটি কাঠামোগত কৌশল নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সরকারের কর্মকাণ্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

একটি রূপান্তরিত বাংলাদেশ গঠনে মৌলিক মানবাধিকার ও জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সংস্কার প্রস্তাবকে প্রাথমিক পথনকশা মনে করে টাস্কফোর্স। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার নিশ্চয়তা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উপযোগী প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।

গুণ্ডা প্রতিরোধ বাহিনী
টাস্কফোর্স মনে করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে বাধ্যতামূলক ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা বেসরকারি খাতেও ছড়িয়েছে। এ কারণে জনগণের সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। এমন বাস্তবতায় প্রতিবেদনে ‘গুন্ডা প্রতিরোধ বাহিনী’ কেমন হতে পারে, তার নকশা প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়, শুধু নির্দিষ্ট কাজের জন্যই নিয়োজিত এ বাহিনী সরকারি খাত কিংবা বেসরকারি সিকিউরিটি ফার্ম থেকেও হতে পারে। বাহিনীর অপব্যবহার প্রতিরোধেও পাল্টা ব্যবস্থা থাকতে হবে। অ্যান্টিগুন স্কোয়াডের কার্যক্রম তদারকে তরুণ সমাজ ও নাগরিক সমাজকে মূল ভূমিকায় রাখার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক দশকের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার এখন অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার মতো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে যত বড় হোক, সমস্যা কখনও সমাধানের অযোগ্য নয়। কাঠামোগত সংস্কারের অনন্য সুযোগ রয়েছে সরকারের সামনে। একটি গ্রহণযোগ্য সংস্কারই পারবে দেশকে টেকসই ও অন্তর্বর্তীমূলক উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে।

জনমতে স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস ফেরাতে সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে উপযোগী নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, যথাযথ নীতি পদক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্যপণ্য সাশ্রয় ও সহজলভ্য করা এবং জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। এ জন্য সুশাসন-সংক্রান্ত কাঠামো সংস্কার, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও বৈষম্যহীন মানবসম্পদ উন্নয়নে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণের কথা বলেছে টাস্কফোর্স।

অতীতে অনেক সংস্কার প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কারণ, বাস্তবায়ন যোগ্যতার কথা মাথায় রাখা হয়নি। এবারও ব্যর্থতা না চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারকে ভালো সংস্কার পদক্ষেপের পাশাপাশি বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করে টাস্কফোর্স। সঙ্গে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে।

প্রতিবেদনে পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে খাতভিত্তিক পৃথক পাঁচটি সংস্কারে উদ্যোগ নিতে বলেছে টাস্কফোর্স। এগুলো হলো–

১. একটি মন্ত্রণালয়ের সংস্কার
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি মন্ত্রণালয় পরীক্ষামূলকভাবে বেছে নিয়ে এর সব কাজের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ ব্যবস্থার আওতায় মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগ, অধিদপ্তর ও দপ্তরের কাজের গুরুত্বপূর্ণ সূচক বা কেপিআইগুলোর অবস্থা দ্রুত দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কেপিআই দেখে সব প্রকল্প, কর্মসূচি ও উদ্যোগের বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থার অভাবে অকার্যকারিতা ও অপচয়ের ঘটনা ঘটে আসছে। এ ঘাটতি পূরণ করা হলে তা সুশাসনের ক্ষেত্রে বড় উন্নতি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

২. সরকারি হাসপাতাল
ঢাকার একটি নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে পরীক্ষামূলক সংস্কারের জন্য বেছে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাধারণ প্রশাসকের পরিবর্তে যোগ্য হাসপাতাল প্রশাসকদের নিয়োগ এবং একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। পাশাপাশি রিয়েল-টাইম মনিটরিং ড্যাশবোর্ড চালু করা যেতে পারে। এটি হাসপাতালের সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ সংগ্রহে সহায়তা করবে। পাশাপাশি তরুণ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের অনলাইনে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষমতার সূচকগুলো (কেপিআই) পর্যবেক্ষণ এবং এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সেবাগ্রহীতার অভিযোগ, মতামতের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে হাসপাতালের সেবার মান ও কার্যকারিতা বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।

৩. গ্রামীণ বিদ্যালয় ও ক্লিনিক
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামের একটি সরকারি বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্বাচন করে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি হাসপাতালের মৌলিক বিষয়গুলো চালু করা যেতে পারে। তবে এ সম্পর্কিত উদ্যোগগুলো সাজাতে হবে গ্রামীণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো বিবেচনায়।

৪. বিআরটিএ সংস্কার
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইরটিএ) সংস্কারে প্রস্তাবিত কৌশল অন্যান্য খাতের মতোই হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআরটিএর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও ব্যবহারকারীদের মতামতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহার করার জন্য তরুণ ও নাগরিকদের মনিটরিং গ্রুপ গঠন করা করা যেতে পারে। এটি সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

৫. বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুজ্জীবন
প্রতিবেদন বলা হয়, বুড়িগঙ্গা নদী বিলুপ্তির পথে। এটির পাশাপাশি ঢাকার টিকে থাকার জন্য জরুরি পদক্ষেপ দরকার। সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিও থাকতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি আইন করে এ-সম্পর্কিত পাইলট প্রকল্প ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এর নেতৃত্ব থাকতে হবে উপদেষ্টা বা মন্ত্রীকে। সহায়তায় থাকবে শক্তিশালী প্রযুক্তি ও আইনি দল। বিশেষ বিচারিক ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।

এ ছাড়া সেন্টার অব গ্লোবাল এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ বিমানের আধুনিকায়ন, রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন (আরআরসি) গঠন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রম তদারকিতে কমিটিসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions