শিরোনাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকছে না সরকারি সাত কলেজ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন: চিকিৎসক নিবন্ধনে পরীক্ষা বান্দরবানে ডাকাত চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার বিএনপি-জামায়াত দূরত্ব,কার ক্ষতি কার লাভ গাজীপুরে বন্ধ ৫১ কারখানা, কর্মহীন অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক অনলাইনে আয়কর রিটার্ন সারাবছর, বকেয়ার ওপর মাসে ২% চার্জ খাগড়াছড়ি থেকে ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি করা সেই এসআই গ্রেফতার কক্সবাজারের সাবেক ডিসি-জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা,২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি সামরিক বাহিনীর সংস্কারে কমিশন গঠনের প্রস্তাব সুদানে হাসপাতালে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় ৬৭ জন নিহত

গাজীপুরে বন্ধ ৫১ কারখানা, কর্মহীন অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করছেন শ্রমিকরাবন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করছেন শ্রমিকরা

শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর জেলায় ৫১টি শিল্প কারখানা গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এসবের মধ্যে ৪১টি স্থায়ীভাবে এবং ১০টি অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা থাকায় আগামী মে মাস থেকে কেয়া গ্রুপের আরও সাতটি কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর দিনযাপন করছেন।

বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে ঘটছে মহাসড়ক অবরোধ করে ভাঙচুর, বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা। বর্তমানে গাজীপুর বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যানজটে দুর্ভোগে পড়ছেন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সামাল দিতে সড়কে যান চলাচলসহ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের মালিকানাধীন গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের তথ্যমতে, জেলায় ছোটবড় নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ১৫৪টি। নভেম্বর মাস থেকে ৩৫টি পোশাক কারখানা কর্মীদের বেতন দিতে পারেনি, যা মোট কারখানার ২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাস থেকে বেতন বকেয়া পড়েছে ৪৫ ভাগ কারখানার। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে গাজীপুরের ৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে। ৯ শতাংশ কারখানায় বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) নিয়ে জটিলতা চলমান। তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ৪১টি এবং অস্থায়ীভাবে ১০টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে মহানগরীর সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিল পার্কের ১৬টি, টঙ্গির সাতাইশ এলাকার টিএমএস অ্যাপারেলস, কোনাবাড়ীর এলাকার পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, টিআরজেড, দি ডেল্টা নিট, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল এবং মাহমুদ জিন্স। ব্যাংকিং এবং আর্থিক জটিলতায় এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ওই কারখানায় বেশির ভাগ শ্রমিক শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ ১ মে থেকে ৪টি এবং ২৭ মে থেকে ২টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের নোটিশ দিয়েছেন। এগুলো কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড (নিট কম্পোজিট গার্মেন্টস ডিভিশন, নিটিং বিভাগ, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন) ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড (জরুন, কোনাবাড়ী, গাজীপুর)।

নোটিশে কেয়া গ্রুপের মালিকপক্ষ উল্লেখ করেছেন, বর্তমান বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা এবং কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার জন্য কারখানাগুলোর সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধি অনুযায়ী সব পাওনা কারখানা বন্ধের পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।

কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে বিগত সরকারের সময় থেকে দুদক ৭টি মিথ্যা মামলা করেছে মালিকের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে ৫টিতে ইতোমধ্যে মালিক নির্দোষ প্রমাণ হয়ে খালাস পেয়েছেন। তা ছাড়া একটি ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে হিসাব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে রফতানি বাধাগ্রস্ত করছে। এসব কারণে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ধাপে শ্রমিকদের সব পাওনা শ্রম আইন অনুযায়ী পরিশোধ করা হবে।’

গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। বন্ধের কারণ হিসেবে জানা যায়, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধ ঘোষিত এসব কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক-মহাসড়কে নেমে আন্দোলন করছেন ৪২ হাজার শ্রমিক।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) এসএম আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের কারখানায় ৪২ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা লে-অফ তুলে নিয়ে সরকারের সহযোগিতা চাইছি। প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার কাছে আমরা অনুরোধ করছি, ব্যাক টু ব্যাক এলসি ওপেন করে সব ব্যাংকিং সুবিধাসহ লে-অফ তুলে নেওয়ার।’

এদিকে, বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। দুই শতাধিক শ্রমিক তাদের সাত মাসের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাত মাসের বকেয়া বেতনসহ প্রভিডেন্ট ফান্ড, সার্ভিস বেনিফিটের টাকা পাননি তারা। বেতনসহ অন্যান্য পাওনা সাত মাস আটকে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বারবার মালিকপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েও বকেয়া বেতন পরিশোধ করছে না বলে দাবি শ্রমিকদের।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর সভাপতি শফিউল আলম বলেন, ‘এক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা, সার্ভিস বেনিফিট, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা, নারী শ্রমিকদের প্রসূতিকালীন টাকা এখনও পরিশোধ করেনি। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার ইতোমধ্যে মালিককে সুদমুক্ত ১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ঋণ পাওয়ার একমাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সব শ্রমিক ও স্টাফের মাঝে টাকা বিতরণ করেননি মালিক। যার ফলে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ওই ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করার পরেও অবশিষ্ট ১৪ কোটির টাকার বেশি অর্থ বকেয়া থাকবে শ্রমিক-কর্মচারীদের। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতরে ধরনা দিয়ে কোনও কাজ হচ্ছে না।

ডার্ড গ্রুপের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে শ্রমিকদের আট ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করা যায় না। বাকি টাকা অবশ্যই পরিশোধ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানা বকেয়া বেতনের কারণে বন্ধ হয়েছে। কিছু কারখানার মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা নানা কারণে অনুপস্থিত থাকায় কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এখনও অনেকগুলো কারখানায় শ্রম অসন্তোষ রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা নেওয়া হয়নি। যেকোনও অসন্তোষ নিরসনে সরকারের উচিত শ্রমিকদের সড়ক থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। আলোচনার মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত সমাধানে শ্রমিকদের পাশে থাকা।’

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার (এসপি) একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে জেলায় ৫১টি শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ব্যাংকিং সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে। কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মহীন শ্রমিকদের অনেকেই সড়ক-মহাসড়কে নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব শ্রমিকদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions