বান্দরবান:- সেনা বাহিনীর সহায়তায় দীর্ঘ দশ মাস পর বান্দরবানের রুমা ও থানচি দুই উপজেলা সীমান্তে রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের বাকলাই বম পাড়ার ১০টি পরিবারের ২৬ জন সদস্য নিজ বাড়িতে ফিরেছে। বুধবার দুপুরে রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাকলাই বম পাড়ায় প্রবেশ করেন তারা। এ সময় পাড়াবাসীকে বাকলাই সেনাবাহিনীর সাব জোন ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেন।
বাকলাই বম পাড়াবাসী জানায়, ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংক দুইটিতে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যরা ভর দুপুরে ডাকাতি চালাই এবং পরবর্তীতে বাকলাই পাড়া সেনা সাব জোন ক্যাম্পে সেনা সদস্যরা সশস্ত্র কুকিচিংদের আস্তানায় আটক করতে অভিযানের মাঠে নামলে একই মাসের কুকিচিং সদস্যদের সাথে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে পাহাড়ে বাকলাই পাড়া আশপাশে বন্দুকযুদ্ধে দুইজন কুকিচিং সদস্য নিহত হয়। পরে সেনাবাহিনীও কেএনএফের আস্তানায় অভিযান চালালে গোলাগুলিতে সেখানকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ওই সময় নিরাপদে আশ্রয় নিতে মোট ৩৮টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হওয়ার কারণে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানের ১০টি বম পরিবারের ২৬ জন সদস্য বুধবার পুনরায় বাড়িতে ফিরেছে।
বাকলাই বমপাড়ার বাসিন্দা জোয়ার মনি বম (৬২) বলেন, কেএনএফ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমস্যার কারণে আমরা দীর্ঘ ১০ মাস যাবৎ বনজঙ্গলে, বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলাম। আজকে বাড়িতে ফিরতে পেরে খুব খুশি লাগছে।
বাকলাই বম পাড়ার আরেক সদস্য জিলি বম (৩৭) বলেন, প্রায় ১০ মাস বনজঙ্গলে পালিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। অনেক দিন পর নিজ পাড়ার বসতভিটায় ফিরতে পেরেছি। এত আনন্দ বলার মতো না।
বসতবাড়িতে ফিরে আসা লালমিনসাং বম বলেন, দীর্ঘ ১০ মাস আগে তাঁরা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নিজ বাড়ি বাকলাই পাড়ায় ফিরতে পেরে খুব আনন্দবোধ করছেন।
২০২২ সালে ২২ জুন তৎকালীন পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে পরিষদ চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ১৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। একই বছরে ১৯ জুলাই, ৪ আগস্ট, ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক স্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ সদস্য ও কেএনএফের চার সদস্য ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন। ২০২৩ সালে ৫ নভেম্বর সরাসরি তাঁদের প্রথম বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন করেন। এরপর ২০২৪ সালে ২ এপ্রিল থানচি উপজেলা সদরে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের ডাকাতি পরবর্তীতে সেনা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকে। অভিযানের এই প্রথম ১০ পরিবারের নারী, পুরুষ, শিশুসহ মোট ২৬ জন ফিরলেন নিজেদের বাড়ি বাকলাই পাড়ায়।
বাকলাই সেনা সাব জোন ক্যাম্পের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মঈন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।