ডেস্ক রিপোট:- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিও লেটারে চাকরি হওয়া খুলনা ওয়াসার ১০ কর্মকর্তা এখনো বহাল রয়েছেন। তাঁদের পদোন্নতি দেওয়ারও গুঞ্জন চলছে। অন্যদিকে কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলে এত দিন ঝুলিয়ে রাখা হলেও তাঁদের বেলায় পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) আর্থিক সহযোগিতায় খুলনা ওয়াসার ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ নামের দুই হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পে নিয়োজিত ১০ জন কর্মকর্তাকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাওয়া হয়।
তিন পৃষ্ঠার ওই সারসংক্ষেপের শেষ পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষর করেন ওই বছরের ১৪ নভেম্বর। সারসংক্ষেপে ১০ জনকে জনস্বার্থে অপরিহার্য বলে খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পে বিশেষ বিবেচনায় রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাওয়া হয়। পরে ২৮ নভেম্বর সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্রের দাবি, ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই ১০ কর্মকর্তাকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ বলে উল্লেখ করা হয়।
পত্রটি দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর।
খুলনা ওয়াসার সূত্র বলছে, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তাঁদের পদোন্নতির বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, গত মঙ্গলবার সকালে খুলনা ওয়াসার সচিব কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে বিষয়টি খোলাসা করেছেন। ওই সব কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এ কারণে গত বুধবার বিষয়টি নিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকের আলোকে বৃহস্পতিবার খুলনা ওয়াসার সচিব বরাবর আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়ে তাদের বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া হয়। যাতে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দেওয়া ওই পত্রে স্বাক্ষর করেন কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জি এম আব্দুল গফফার।
সূত্র মতে, যাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলছে।
অন্য এক সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক পানির মিটার খোয়া যাওয়ার অভিযোগ এবং একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আট শতাধিক পানির মিটার খোয়া যাওয়ার অভিযোগসহ অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ একাধিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগ আমলে। অন্য দুজন প্রকৌশলীর মধ্যে একজন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সাবেক মেয়রের ‘হাত ধরে’ এবং অন্যজন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর হাত ধরে চাকরি পান খুলনা ওয়াসায়।
কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কবির হোসেন বলেন, যদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিও লেটারে চাকরি পাওয়াদের পদোন্নতি হয়, তবে সেটি হবে আত্মঘাতী। তবে এমন গুঞ্জন শুনে বুধবার সকালে ইউনিয়ন নেতারা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তাঁদের জানানো হয়, পদোন্নতি হলে কর্মকর্তা-কর্মচারী উভয়েরই হবে।
এদিকে খুলনা ওয়াসার অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যস্থাপনা পরিচালক মো. তবিবুর রহমানের কাছে গত ১ জানুয়ারি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট ৯টি পদের বিপরীতে ২৬ জনের (আলোচিত ১০ জনসহ) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে কতটি আবেদন জমা পড়েছিল (নামসহ), কতজনকে (নামসহ) পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল ও কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাওয়া হয়। তবে তা পাওয়া যায়নি।কালের কন্ঠ