ডেস্ক রির্পোট:- মিয়ানমার ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্থিরতায় নিমজ্জিত। এ অভ্যুত্থানটি দেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। এতে ব্যাপক বিক্ষোভ সৃষ্টি করে। যা পরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়।
জাতিগত গোষ্ঠী ও নাগরিক নেতৃত্বাধীন বাহিনী সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এ বাহিনীগুলির মধ্যে একটি হল আরাকান আর্মি (AA)। যারা পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখল করতে প্রায় সফল হয়েছে। আরাকান আর্মির সাফল্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
মিয়ারমারের পশ্চিম রাখাইন প্রদেশে থাকা সামরিক সদর দফতর দখলের মধ্য দিয়ে আরো অগ্রসর হলো আরাকান আর্মি। এর মধ্যে রাখাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে নেয়া আরাকান আর্মি সেখানে নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে নতুন সরকারও গঠন করতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
কক্সবাজার সীমান্তের ওপাড়ে থাকা প্রতিবেশি রাখাইনকে নিয়ে আরাকান আর্মি এমন ঘটনার জন্ম দিলে নতুন স্বাধীন দেশ হবে ‘আরাকান’। তাহলে কি বাংলাদেশের প্রতিবেশি মিয়ানমার আর থাকছে না? হাতছানি দিচ্ছে নতুন প্রতিবেশি দেশের!
আরাকান আর্মি কি?
আরাকান আর্মি হল ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান(ULA) নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সামরিক শাখা। যা মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। আরাকান আর্মি ও ইউএলএ রাখাইন রাজ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেখানে বৌদ্ধ রাখাইন জনগণ ও মুসলিম সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গত দেড় বছরে আরাকান আর্মি যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। অনেকগুলি শহর ও সামরিক পোস্ট দখল করেছে। সম্প্রতি এ গ্রুপটি সামরিক শাসকদের পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড দখল করেছে। যা এ বছর বিদ্রোহী বাহিনীগুলির দ্বারা দখল করা দ্বিতীয় সামরিক কমান্ড।
রোহিঙ্গা সংকট ও আরাকান আর্মি-
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালায়। যার ফলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। তাদের প্রত্যাবর্তন অনিশ্চিত। অন্যান্য দেশগুলি মিয়ানমারের এ গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এটিকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
যদিও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সমন্বয়ের দাবি করেছে। তবে এটি জটিল। অতীতে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনতা চায় তবে খাদ্য ও ওষুধের জন্য মিয়ানমারের অন্যান্য অংশের উপর নির্ভরশীল। প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন ছাড়া, আরাকান আর্মির জন্য ভারত ও বাংলাদেশে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি-
কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে তাদের নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রবহির্ভূত গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয় না, তবে সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হতে পারে।