শিরোনাম
আগামী বিজয় দিবসের আগেই গণহত্যাকারীদের বিচারের রায়: আসিফ নজরুল ট্রাইব্যুনালে ‘টপ কমান্ডারদের’ বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে: চিফ প্রসিকিউটর সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন ‘পাহাড়ের মানুষ সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চাই, সেনাবাহিনীও তাই চাই’-খাগড়াছড়িতে ব্রি. জে. আমান শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ঢাকার অনুরোধকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত? পাহাড় ক্ষয়ের জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ নামমাত্রই,চাষিদের পুনর্বাসনে কোনো প্রজেক্ট নেই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের পাহাড়-প্রকৃতির টানে পর্যটকের ভিড় বান্দরবানে দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা,থমথমে সচিবালয়, আগুনের উৎস খুঁজছে কমিটি, কাজ শুরু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন খেল সরকার, চিংড়ি বারোভূতে জনমনে স্বস্তি ফিরছে না!

পাহাড় ক্ষয়ের জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ নামমাত্রই,চাষিদের পুনর্বাসনে কোনো প্রজেক্ট নেই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৫ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বিশেষায়িত চাষাবাদ পদ্ধতি জুম চাষ দীর্ঘকাল ধরেই করছেন পাহাড়ের জুমিয়া পরিবারগুলো। পাঠ্য পুস্তকেও উল্লেখ রয়েছে এই বিশেষ পদ্ধতির কথা। তবে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের বিপক্ষে অবস্থানে রয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের মতে, জুম চাষের ফলে পাহাড়ে বনভূমি কমছে। পাহাড়কে ন্যাড়া করার কারণে ভূমি ক্ষয়ের পাশাপাশি জুমের ফসল তোলার পর পাহাড়ে আগুন দেওয়ার কারণে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি হচ্ছে। এসব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে মূলত পাহাড়ের বন সুরক্ষায় জুমিয়াদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ প্রতিষ্ঠার করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪–৮৫ অর্থবছরে জুম নিয়ন্ত্রণের একটি প্রকল্পের আওতায় ৪৬১টি জুমিয়া পরিবারকে জুম আবাদে নিরুৎসাহিত করার অংশ হিসেবে প্রণোদনা দেয়া হয়। এরপর কার্যত আর কোনো উদ্যোগ নেই প্রতিষ্ঠানটির। বিগত প্রায় চার দশক ধরে নামেই টিকে আছে জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ!

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম ভূমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ১৭ দশমিক ৫ হেক্টর। এরমধ্যে রাঙ্গামাটি জেলায় ১২ হাজার ৭৯৯ হেক্টর, খাগড়াছড়ি জেলায় ১০ হাজার ৮০৩ হেক্টর এবং বান্দরবান জেলায় ১৩ হাজার ৪১৫ দশমিক ৫ হেক্টর জুম ভূমি রয়েছে। জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ বলছে, জুম নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বিভাগটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুরক্ষাসহ পারমিট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন মৌজার অধীনে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ৬ হাজার ৩২৯ একর ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৮ হাজার ২৪৯ একর সংরক্ষিত বন রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটির ২৯ হাজার ৮৫৩ একর ও খাগড়াছড়ির ১ হাজার ৮২৫ একর ভূমি সংরক্ষিত বন গড়ে তোলার নির্বাচিত ও অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলে পূর্বের ২৪ হাজার ৫৭৮ একর সংরক্ষিত বনসহ মোট ৫৬ হাজার ২৫৬ একর ভূমি তাদের সংরক্ষিত বন থাকবে।

সূত্র জানায়, জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন আটটি রেঞ্জ কার্যালয় রয়েছে। রেঞ্জসমূহ হলো– বীজ ও বীজতলা রেঞ্জ, ফুলগাজী রেঞ্জ, খাসখালী (কাঁশখালী) রেঞ্জ, উল্টাছড়ি রেঞ্জ, হাজাছড়ি রেঞ্জ, মেরুং রেঞ্জ, তিনকুনিয়া রেঞ্জ ও কুতুবদিয়া রেঞ্জ। রেঞ্জসমূহের সেবাদান ও কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে চারা বিক্রয় ও বিতরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা; বন ও বনায়ন এবং বনজ সম্পদের ক্ষতি না করার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধকরণ; অংশীদারত্বের মাধ্যমে বনায়ন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা, গণশুনানি, জোতপারমিট সংক্রান্ত কার্যক্রমে পারমিটকারীদের সহযোগিতা প্রদান। পরিবেশবাদীরা মনে করেন, জুম চাষকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নামমাত্র হলে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না এবং হয়নিও। জুমিয়াদের পুনর্বাসন, বিকল্প আয় বা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে চাষিদের জুম বিমুখ করার ভাবনা অদূরদর্শী ও অফলপ্রসূই হবে। বন বিভাগ নামমাত্র একটি প্রতিষ্ঠা খুলে রাখলেও কোনো কার্যক্রম না থাকায় সেই প্রতিষ্ঠানটিরও প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে।

জুম গবেষক তনয় দেওয়ান বলেন, জুম চাষিদের পুনর্বাসনের কোনো প্রজেক্ট তাদের (বন বিভাগ) মধ্যে নেই। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সেগুন বাগান সৃজন করার জন্য তারা জুম চাষিদের তখন ব্যবহার করেছে; এখন তো কোনো বনায়ন কার্যক্রম নেই। সামাজিক বনায়নে তাদের কোনো কার্যক্রমও নেই, আর সামাজিক বনায়ন জুম নিয়ন্ত্রণের অধীনেও নয়। প্রকৃতপক্ষে জুম নিয়ন্ত্রণ বিভাগের এখন আর কোনো কাজ নেই। ব্রিটিশ আমলে করা সংরক্ষিত বনের জন্য প্রয়োজন হলেও এখন অপ্রাসঙ্গিক।

জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪–৮৫ অর্থবছরে এক বারই ৪৬১ জনটি জুমিয়া প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। এরপর প্রকল্পটি আর কন্টিনিউ হয়নি। বাস্তব কথা হলো এখন দৃশ্যত আমাদের জুম নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যক্রম নেই। তবে আমরা বন রক্ষায় জুম নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।

প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ঢালু পাহাড়ের পাদদেশে গাছ–গাছালি কেটে আগুনে পুড়ে তৈরিকৃত জমি বা পাহাড়ে চাষাবাদ করার পদ্ধতিকে জুম চাষ বলা হয়। জুম চাষ এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষি পদ্ধতি। এটি সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ প্রথা। তবে এটি বর্তমানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তায় যোগান দিয়ে আসছে। জুমের ফসল উত্তোলনের পর ক্ষেতে আগুন দেওয়ার কারণে পাহাড়ের গাছপালা ও কীট–পতঙ্গ পুড়ে যাওয়ার ফলে জীববৈচিত্র্য বিপদাপন্ন হয়ে পড়া ও বনভূমির পরিমাণ কমে আসায় পরিবেশবাদীদের জুমে চাষ পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি থাকলেও স্থানীয় অধিবাসীদের খাদ্যনিরাপত্তা ও বিকল্প খাদ্য যোগানোর সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় এই চাষাবাদ পদ্ধতি এখনো গুরুত্ববহ।আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions