দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা,থমথমে সচিবালয়, আগুনের উৎস খুঁজছে কমিটি, কাজ শুরু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। গতকাল ছুটির দিনেও সারা দেশে একটাই আলোচনা-দুর্ঘটনা নাকি নাশকতার আগুনে পুড়ল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের এই গুরুত্বপূর্ণ ভবন। সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাসহ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি। গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় সচিবালয় ঘেরাও থাকলেও কমিটি এ ঘটনায় কার্যক্রম শুরু করে।

পুরো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে সচিবালয় এলাকায়। ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকার, রাজনৈতিক দল ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সবার প্রশ্ন-এত কড়া নজরদারির জায়গায় কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটল? এটা কি পরিকল্পিত কোনো ঘটনা ছিল? কয়েক স্তরে নিরাপত্তা থাকে সচিবালয়ে। পাশাপাশি উচ্চক্ষমতার সিসি ক্যামেরা আছে। এর পরও এ ঘটনায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে। পুরো আগুন নেভাতে লাগে ১০ ঘণ্টা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগাসহ দীর্ঘ সময় ধরে সে আগুন নেভানো হলো না কেন-এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় কাজ শুরু করেছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। গতকাল সচিবালয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কমিটির সদস্যরা। পরে তাঁরা সচিবালয়ে বৈঠক করেন। আজ আবারও বৈঠক হবে বলে জানান কমিটির সদস্যরা। তবে গতকালও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্যসচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তা তদন্তের পর বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিকা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থা হয়নি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছি। বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্ত সাপেক্ষে বাকি কথা বলা যাবে।’ উচ্চপর্যায়ের এ কমিটির আহ্বায়ক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটও সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল সচিবালয় পরিদর্শন করে। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিনই ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনের আশপাশে তল্লাশি চালানো হয়েছে, যদি এসব জায়গায় কোনো আলামত পাওয়া যায়। আগুন নেভানোর পর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ভবনের ছয়, সাত, আট ও নয় তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আট ও নয় তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে। এদিকে সচিবালয়ে অগ্নিকাে র তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। বিএএসএ জানায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা। বড়দিনের ছুটির পর রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত মর্মে বিশেষজ্ঞদের মত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে, এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসররা এখনো কর্মরত রয়েছেন এবং ওই ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের অনেকের কাছে এখনো সচিবালয়ে প্রবেশের পাস থাকায় তারা সচিবালয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। কাজেই স্বৈরাচারের দোসরদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা ও প্রবেশের ফলে সংঘটিত ঘটনাটির সঙ্গে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠন। জানা গেছে, সচিবালয়ের যে চারটি ফ্লোর পুড়েছে সেখানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ রয়েছে। জানা গেছে, এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে কম্পিউটার ও আসবাব। দেয়াল ও মেঝেতে বড় ক্ষতি হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions