শিরোনাম
রাঙ্গামাটি জোন’র আয়োজনে কাউখালীতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অগ্রাধিকার, পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য আলাদা চ্যাপ্টার প্রস্তাব করবে কমিশন রাঙ্গামাটির কর্ণফুলী নদীতে নেমে ২ তরুণ নিখোঁজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে পার্বত্যবাসী অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে-ইউপিডিএফ বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতি: হাসিনার বিরুদ্ধে ফের তদন্ত শুরু হাসিনা পরিবারের দুর্নীতি: দেশে-বিদেশে লেনদেনের সব নথি তলব গাজায় একদিনে নিহত আরও ৫৮ পরিচয় মিলল জাহাজে ডাকাতের হাতে নিহত ৭ জনের আ.লীগ আমলে আইসিটি খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ১০ হাজার কোটি টাকা- তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আশুলিয়ায় ৬ মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা কমানোর সুপারিশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- – দেশি-বিদেশি অংশীজন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিচারপতি ও সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিচার বিভাগের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে এ-সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতিসহ উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা, কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই সর্বোচ্চ আদালত এবং জেলা আদালতে সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস (পরিষেবা) গঠন এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় ‘স্বাধীন তদন্ত সংস্থা’ গঠনের সুপারিশ করা হচ্ছে সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরপেক্ষ জনবল কীভাবে নিয়োগ করা যায়, কমিশন সে ব্যাপারে দীর্ঘদিনের প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তনের সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব করতে গত ৩ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। এর পর থেকেই কমিশন সরেজমিন বিভিন্ন আদালত পরিদর্শন, মতবিনিময়সহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে। গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাধারণ নাগরিক, আইনজীবী, বিচারক এবং আদালত সম্পর্কিত সহায়ক কর্মচারীসহ মোট ১২ হাজার ৭২১ জন কমিশনের ওয়েবসাইটে বিচার বিভাগ সংস্কার বিষয়ে তাদের মতামত দেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইমেইল এবং চিঠির মাধ্যমেও মতামত পাঠিয়েছেন। এসব মতামত ও সুপারিশ থেকে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবগুলো কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

সংস্কার কমিশনের সদস্য সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, ‘বিচার বিভাগ সংস্কারের সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। যেসব মতামত ও সুপারিশ ইমেইল, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে, সেগুলো কম্পাইলেশন হচ্ছে। আশা করছি, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

এদিকে গত ১১ ডিসেম্বর, কমিশন তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত সব সংস্কার কমিশনের সমন্বয়ক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে প্রাথমিক প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পাঠিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রাখার সাংবিধানিক বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সমুন্নত রাখা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা অনেকাংশে নির্ভর করে বিচার বিভাগের নেতৃত্বদানকারী তথা শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে প্রধান বিচারপতির ওপর। এই বাস্তবতার আংশিক প্রতিফলন দেখা যায় বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে। উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কারও পরামর্শ ব্যতিরেকে রাষ্ট্রপতি নিজস্ব প্রজ্ঞা অনুসারে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নানা সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বর্ণিত অবস্থায় কমিশন মনে করে, প্রধান বিচারপতির নিয়োগকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্যে সংবিধানে এই মর্মে বিধান থাকা প্রয়োজন যে, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ বা অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি রাখা যাবে না।’

আপিল বিভাগের বিচারপতি সাতজন নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগীয় ও অন্যান্য দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সংবিধানের ৯৪(১) অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিধানে বলা হয়েছে যে, ‘আপিল বিভাগে বিচারকের ন্যূনতম সংখ্যা হবে সাত এবং প্রধান বিচারপতির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী তার বেশি বিচারক নিয়োগ করা হবে’। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক সময়ে সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ করা হবে।’

প্রধান বিচারপতি ব্যতীত অন্যান্য বিচারক নিয়োগের জন্য পৃথক কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিচারক নিয়োগ বিষয়ে বিদ্যমান সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে এককভাবে প্রধান বিচারপতির সুপারিশ এবং নির্বাহী কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিধান আছে। এই পদ্ধতির পরিবর্তে যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা, সততা ও দক্ষতার মূল্যায়নকারী একটি কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নিয়োগ-পদ্ধতি প্রবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। সেই লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস অ্যাপয়েনমেন্ট কমিশন’ (সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন) নামে একটি কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। কমিশনের অন্য আট সদস্য হবেন আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম ২ জন বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম দুজন বিচারক, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্য একজন আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে এই নিয়োগ কমিশনের মতামতই প্রাধান্য পাবে।’

হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নয় সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিশন হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের কাছ থেকে কমিশন দরখাস্ত আহ্বান করবে। যোগ্যতার বিষয়টি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রস্তাব করা হবে। আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত তথ্য ও দলিলপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করবে। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের নাম ও তথ্যাদি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হবে, যাতে জনগণ কোনো প্রার্থীর উপযুক্ততা বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা কমিশনের নিকট প্রেরণ করতে পারে। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীগণকে কমিশনের সামনে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। কমিশন নিজেদের মধ্যে প্রার্থীদের কর্মদক্ষতা ও উপযুক্ততা নিয়ে আলোচনা শেষে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করবে। কমিশনের সুপারিশ পাঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ দান করবেন।’

হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত পরিহারের লক্ষ্যে কমিশনের কার্যক্রমে অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী-সদস্য অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে কমিশন হবে ৬ (ছয়) সদস্যবিশিষ্ট। কমিশন একজন অতিরিক্ত বিচারক কর্তৃক নিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা, রায়ের গুণাগুণ, আদালত ও মামলা। ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং তার সার্বিক আচরণ মূল্যায়নক্রমে নিয়োগের সুপারিশ করবে।’

আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের কার্যক্রমে স্বার্থের সংঘাত পরিহারের লক্ষ্যে হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারক-সদস্য, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী-সদস্য অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে কমিশন হবে ৪ (চার) সদস্যবিশিষ্ট। আপিল বিভাগে বিচারকের শূন্যপদে নিয়োগে কমিশন প্রাথমিকভাবে হাইকোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারকদের বিবেচনা করবেন (ক্রমানুসারে)। শুধু দায়িত্ব পালন, কর্মদক্ষতা এবং সার্বিক আচরণের প্রশ্নে জোরালো নেতিবাচক কারণ থাকলেই কমিশন জ্যেষ্ঠতার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে পারবেন। কমিশন হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারক কর্তৃক নিষ্পন্ন রায়ের সংখ্যা, রায়ের গুণাগুণ এবং আদালত ও মামলা ব্যবস্থাপনার দক্ষতা মূল্যায়নক্রমে নিয়োগের সুপারিশ করবে। কমিশন সদস্যরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’

বিচার বিভাগে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটানোর ব্যাপারে কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণ এবং অনুচ্ছেদ ১১৬তে বিচার-কর্মবিভাগে কর্মরত বিচারকদের স্বাধীনতার ঘোষণা আছে; কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে বিচারিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। নিম্ন আদালতের বিচারকরা কর্তৃক নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও কার্যকরভাবে বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হচ্ছে বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৬-তে বিধৃত দ্বৈত প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এ অবস্থায় মাসদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত ১২ দফা নির্দেশনা এবং অনুবর্তী একাধিক আদেশের মাধ্যমে ৩টি মৌলিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত কর্মকর্তারা নির্বাহী বিভাগের অংশ নন বরং তারা একটি সাংবিধানিক সার্ভিসের সদস্য এবং তাদের জন্য স্বতন্ত্র চাকরিবিধি প্রণয়ন করতে হবে। ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসরণের ক্ষেত্রে ১১৬ক অনুচ্ছেদের আলোকে (স্বাধীনতা) সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যাবলিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি রূপে চিহ্নিত করা হয় এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচার-কর্মবিভাগের কর্মকর্তাগণের পদায়নের বিধান করা হয়।

‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন’

সরকারি মামলা পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন প্রস্তাব করা হয়েছে কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের পদকে একটি সাংবিধানিক পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মূলত সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিপুলসংখ্যক মামলা পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে। কিন্তু তাকে সহায়তা করার জন্য তিনটি স্তরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলেও তাদের বিষয়ে সংবিধানে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়াও জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোয় সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনার জন্য তিনটি স্তরের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং দুটি স্তরের গভর্নমেন্ট প্লিজার রয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সব স্তরের আইন কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং অপ্রতুল আইনি কাঠামোর আওতায়। আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন বিষয়ে জবাবদিহির কোনো আইনি কাঠামো নেই। যোগ্যতা বা দক্ষতা বা সততা নয়, মূলত আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে।

এতে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের মান মোটেও সন্তোষজনক নয়। বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা এবং জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ওপরে বর্ণিত পরিস্থিতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।

ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় তদন্ত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ফৌজদারি মামলার গতি প্রকৃতি এবং ফলাফল প্রাথমিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভরশীল। তদন্ত কর্মকর্তা সৎ, সাহসী, দক্ষ ও পেশাদার না হলে তদন্ত প্রতিবেদনে নানা রকম দুর্বলতা থেকে যায়। তা ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে না। তদন্ত কার্যক্রমের এসব সমস্যার কারণে বেশিরভাগ ফৌজদারি মামলায় আসামি খালাস পাচ্ছে।

অধিকাংশ ফৌজদারি মামলা রুজু হয় থানায়। এসব মামলায় তদন্তের দায়িত্বও থাকে পুলিশের। তা ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে দায়েরকৃত নালিশি মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্বও অনেক সময় পুলিশের ওপর অর্পিত হয়। পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত দ্রুত ও মানসম্পন্ন তদন্তের ওপর মামলার ফল অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফৌজদারি মামলার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো মিথ্যা মামলা অথবা এমন মামলা যাতে মিথ্যা তথ্য মিশ্রিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্দোষ ব্যক্তিদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার প্রকৃত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হয় বা মূল ঘটনাকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে তদন্ত সুষ্ঠু না হলে নিরপরাধ ব্যক্তির হয়রানির সম্ভাবনা থাকে বা প্রকৃত অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়। আমাদের দেশে বিরোধী পক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের ও পুলিশকে ব্যবহারের মাধ্যমে হেনস্তার ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। তার ওপর রয়েছে পুলিশের কিছু সদস্যের দুর্নীতি, যা রোধ করার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই।

এতে বলা হয়েছে, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও পুলিশের কোনো নিবেদিত একক ইউনিট নেই; বরং একাধিক বিভাগকে একই ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুলিশের বিদ্যমান তদন্ত ব্যবস্থা যথেষ্ট সুসংগঠিত ও সুদক্ষ নয়। মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সময় সরকারি প্রসিকিউটর কর্তৃক তদারকির সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সমন্বয়ের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই আদালতে মামলার বিচার শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। প্রচলিত তদন্ত ব্যবস্থা এবং তাতে নিয়োজিত জনবলকে সুসংগঠিত করার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থায় তদন্ত প্রক্রিয়ার যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র, কার্যকর, দক্ষ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব এবং প্রভাবমুক্ত তদন্ত সংস্থা গঠন প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions