শিরোনাম
পাহাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া ডিম ফুটিয়ে গড়েছে বনমোরগের খামার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন,প্রথম খসড়া তালিকায় নিহত ৮৫৮ জন, আহত সাড়ে ১১ হাজার আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা, বিএনপি কোন পথে সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে না, যন্ত্রগুলো কী করবে ইসি মঞ্চ প্রস্তুত আরেকটি এক-এগারোর? আসছে হাসিনা আমলের চেয়ে বড় বাজেট,আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি,দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি! বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, জয়া আহসান ও ফাহিম আহমেদ

পাহাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া ডিম ফুটিয়ে গড়েছে বনমোরগের খামার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১২ দেখা হয়েছে

বান্দরবান:- বান্দরবানে পাহাড়ের বনমোরগের খামার গড়ে তোলেছেন মারমা দম্পতি। পাহাড়ে বনের ভিতরে কুড়িয়ে পাওয়া বনমুরগীর ডিম গৃহে পালিত স্থানীয় জাতের দেশীয় মুরগীর মাধ্যমে উত্তাপ লাগিয়ে মুরগীর বাচ্চা ফুটিয়ে চমকে দিয়েছেন স্থানীয়দের। সফল খামারি হিসাবে এ দম্পতি বেশ সাড়া ফেলেছেন পার্বত্য জনপদে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের নয় নাম্বার ওয়ার্ডের মেওয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দার হ্লাশৈঅং মারমা এবং শৈমেচিং মারমা দম্পতি চার বছর আগে বনমোরগের খামার গড়ে তোলে। খামার গড়ে তোলতে বাড়ির চারপাশে উঁচু বেড়া তৈরি করে আঙ্গিনায় বিভিন্ন জাতের গাছপালা লাগিয়ে প্রাকৃতিক বনের পরিবেশ সাজিয়ে তোলে। জেলা সদর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে এই খামারের অবস্থান। ঘন্টা দেড়েক মোটর সাইকেল চালিয়ে এবং পায়ে হেঁটে পাহাড়ের উঁচুনিচু পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় বনমোরগের খামারে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পাাহাড়ের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে তোলা বনমোরগের খামারে ছোট-বড় ৭০টি মোরগ-মুরগী রয়েছে। এগুলোর জন্য প্রতিদিন ৫ কেজির মতো ধানের প্রয়োজন হয়। বনমোরগ আকারে দেশীয় মোরগের থেকেও ছোট। ওজনেও দেশী মোরগের চেয়ে হাল্কা। বড় সাইজের একেকটি মোরগের ওজন সর্বোচ্চ ৮শ গ্রাম থেকে ১ হাজার গ্রামের মত হয়। মুরগীর ওজন ৬শ থেকে ৭শ গ্রামের মত।

সফল খামারি দম্পতি হ্লাশৈঅং মারমা ও শৈমেচিং মারমা বলেন, চার বছর আগে পাহাড়ে জুম খেতে কাজে যাওয়ার পথে পাহাড়ের জঙ্গলে ৫টি ডিম’সহ বনমুরগীর একটি বাসা দেখেতে পান। শখের বসে বনমুরগীর ডিমগুলো সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে যতœ সহকারে স্থানীয় দেশী জাতের মুরগীর ডিমের সঙ্গে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেন। প্রথম দফায় ৫টি ডিমের মধ্যে ৩টি ডিম নষ্ট হয়। তবে বনমোরগের ২টি ডিমের বাচ্চা ফোঁটাতে সক্ষম হয়। দুটির মধ্যে ১টি মুরগী, অপরটি মোরগ হয়। দেশীয় মুরগীর বাচ্চাদের সঙ্গেই বড় হয়ে মায়ের আদরে বেড়ে উঠে । বন মুরগীকে মারমা ভাষায় “তোয়াইং গ্যাং বা তইক ক্যাং”। পোষ মানা বনের মোরগের গঠন, আকার-আকৃতি, ডাক সবই অভিন্ন। তাই পাহাড়ের বন মোরগকে ফাঁদে ফেলে জীবন্ত উপায়ে শিকার করার জন্য তোঁয়াইং গ্যাং বা তইক ক্যাংকে ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে পাহাড়ের জঙ্গলে বনমোরগের সংখ্যা কমলেও এদের চাহিদা অনেক। তাই দেশী মুরগীর মতো কিছুটা হলেও চাহিদা মেটাতে এই বনমুরগীর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বড় আকারে খামার করার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

সফল খামারি হ্লাশৈঅং মারমা জানান, দেশীয় মুরগির বাচ্চাদের সাথে বেড়ে উঠার সময়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে বনমুরগী বাচ্চারা। অপ্রাণ চেষ্টা করেও যখন বাচ্চা গুলো সুস্থ হচ্ছেনা, তখন মানষিক ভাবেও ভেঙে পড়েন স্বামী স্ত্রী দুজন।

বুদ্ধি করে খাবার বদলিয়ে ধানের শক্তদানা এবং পাহাড়ের জঙ্গল থেকে পিঁপড়ের ডিম’সহ হরেক রকমের পোকামাকড় ধরে এনে খাওয়ান। এতে আস্তে আস্তে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে বনমোরগের বাচ্চা। বনমুরগীর বাচ্চা দুটিকে আলাদা যতœ এবং ভিন্ন খাবার দেওয়ার মাধ্যমেই মূলত বনমোরগের খামারটি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। কুড়িয়ে পাওয়া ডিমের ফোটানো দুটি বাচ্চা থেকেই বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে গড়ে উঠে বনমোরগের পরিকল্পিত একটি খামার। খামার গড়ে তোলার পর থেকে তিনি নিজে মুরগীর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। সন্তানের মত লালন করেন মুরগীগুলো।

খামারি পতœী শৈমেচিং মারমা বলেন, গড়ে তোলা খামারের মুরগী বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন স্বামী স্ত্রী দুজন। কয়েকবছরে খামারে দেড়শ”র মতো বনমোরগ-মুরগী হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে গুটিবসন্ত আর পাতলা পায়খানা রোগে ৩০টি মুরগী মারা গেছে। পাহাড়ের বন বিড়ালেও ১০টি মুরগী খেয়ে ফেলেছে। বড় সাইজের একেকটি মোরগ ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার এবং মাঝারী সাইজের মোরগ ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ সমস্যায় মোরগ মুরগী কম বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বেশকিছু অর্ডার আছে।

স্থানীয় বাসিন্দার পাইসা থোয়াই মারমা বলেন, বন মোরগ পোষ মানিয়ে লালন করে খামার গড়ে মারমা দম্পতি সাড়া জাগিয়েছে পার্বত্য জনপদে। খামারের মুরগী বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবেও এখন স্বাবলম্বী। তাদের সফলতার খবরে আশপাশের লোকজন খামারটি দেখতে আসেন দূরদূরান্ত থেকে। দর্শনার্থীরা মুরগীও কিনে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা: জুলহাস আহমেদ জানান, বনমুরগীর কুড়িয়ে পাওয়া ডিম স্থানীয় দেশী মুরগীর মাধ্যমে বাচ্চা ফুটিয়ে বনমুরগীর খামার গড়ে তোলার সাফল্য সাড়া জাগিয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। সফল এ খামারি পাহাড়ি দম্পতি সবার জন্য অনুপ্রেরণা খামার মুরগী বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবেও অনেকটা স্বাবলম্বী। মোরগ-মুরগির গুটিবসন্ত বা ফক্স, কলেরা রোগ হচ্ছে, এগুলোর জন্য টিকা আছে। রোগের প্রতিকারে সার্বিক পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions