ডেস্ক রির্পোট:- নগর পুলিশের বিভিন্ন থানা থেকে লুণ্ঠিত ১৯টি চাইনিজ রাইফেল, ৮টি সাব–মেশিনগান (এসএমজি), ৬৪টি পিস্তলসহ ১৬৩টি অস্ত্রের কোনো হদিস নেই। থানা থেকে লুণ্ঠিত ৯৪৮টি অস্ত্রের মধ্যে নষ্ট করে ফেলা ৬৭টিসহ ৭৮৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একইসাথে ১৮ হাজারেরও বেশি গুলিরও কোনো হদিস নেই। লুট হওয়া ৮৬ হাজার ৪৭৯ রাউন্ড গোলাবারুদের মধ্যে নষ্ট করে ফেলা ২৩শ’সহ উদ্ধার করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৩৭১টি। লুণ্ঠিত অস্ত্রের বেশীর ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে বলে নির্ভর যোগ্য সুত্রে জানা গেছে। হদিস না মেলা অস্ত্র ও গোলাবারুদের খোঁজে নগর পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট সিএমপির থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে ১০টি থানা পরিণত হয় প্রায় ধ্বংসস্তূপে। থানার অস্ত্রশস্ত্র এবং আসবাব থেকে শুরু করে নথিপত্র পর্যন্ত জ্বালিয়ে কিংবা লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় সিএমপির থানাগুলো থেকে চাইনিজ রাইফেল, এসএমজি, পিস্তলসহ সর্বমোট ৯৪৮টি অস্ত্র এবং ৮৬ হাজার ৪৭৯ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। পরিস্থিতির প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তারা ওই সময় বলেছিলেন যে, থানাগুলোতে হামলা করে যার যা ইচ্ছে করেছে। কেউ আগুন দিয়েছে, কেউবা ব্যস্ত ছিল লুটপাটে। অস্ত্র সম্পর্কে কোন ধারণা নেই এমন লোকজনও অস্ত্র নিয়ে গেছে। কিশোর বয়সীদেরও অস্ত্র লুট করে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন পুলিশ সদস্যরা।
পরবর্তীতে থানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে অনেকেই নিজ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেরত দিয়ে গেছেন। যৌথবাহিনী, র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়েও বেশ কিছু লুণ্ঠিত অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ১৬৩টি অস্ত্র ও ১৮হাজার ৮০১ রাউন্ড গোলাবারুদের কোনো হদিস মেলেনি।
সিএমপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, হদিস না মেলা অস্ত্রগুলোর মধ্যে ১৯টি চাইনিজ রাইফেল, ৮টি এসএমজি, ৬৪টি পিস্তল, ৫৬টি শর্টগান এবং ১৬টি গ্যাসগান রয়েছে। লুট হওয়া ৮৬ হাজার ৪৭৯ রাউন্ড গোলাবারুদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৩৭১ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ২৩শ রাউন্ড গুলি অকেজো হয়ে গেছে। গতকাল পর্যন্ত উদ্ধার না হওয়া গোলাবারুদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৮০১ রাউন্ড বলে পুলিশ স্বীকার করেছে।
পুলিশ বলেছে, সরকার পতনের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে যারা অস্ত্র নিয়ে গিয়েছিলেন তারা নিজেরাই তা ফেরত দিয়েছেন। আবার পুলিশের অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে লুট করেছিলো যারা তাদেরও অনেকের কাছ থেকে তা উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু যেসব অস্ত্রের হদিস মেলেনি সেগুলো দাগি ক্রিমিন্যালদের হাতে রয়েছে। তারা ইচ্ছেকৃতভাবেই অবৈধ ব্যবহারের জন্য এসব অস্ত্র লুট এবং লুকিয়ে রেখেছে। হদিস না পাওয়া চাইনিজ রাইফেল, সাব মেশিনগান কিংবা পিস্তলের মতো অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা সমাজের জন্য নিরাপদ নয়। এসব অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ দৃঢ়প্রতিক্ষ।
সিএমপির এডিসি (মিডিয়া) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ লুণ্ঠিত অস্ত্রের মধ্যে যেগুলো এখনো উদ্ধার হয়নি সেগুলো উদ্ধারে পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানান। তিনি বলেন, লুট হওয়া অধিকাংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়ে গেছে। এখনো যেগুলোর হদিস পাওয়া যায়নি সেগুলোও যে কোনো মূল্যে উদ্ধার করা হবে। পুলিশের অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে থাকতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, যৌথবাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। স্বাভাবিক পুলিশি কার্যক্রমের পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ উল্লেখ করেন।