ডেস্ক রির্পোট:- মামলা থেকে মুক্ত হতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আর কত অপেক্ষা? অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অনেকে মামলা থেকে খালাস পাচ্ছেন। গত ফ্যাসিস্ট সরকার ১৫ বছরে রাজনীতিবিদসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে অসংখ্য মামলা দিয়েছিল। এসব রাজনৈতিক মামলায় যারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ছিলেন তারা হলেন- বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান।
বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের চার মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো মামলামুক্ত হতে পারেননি বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তান মামলার কারণে দেশান্তরী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যে কারণে দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন, মামলামুক্ত হতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীসহ দেশবাসী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চায়। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে এখনো ছয় থেকে সাতটি মিথ্যা মানহানি মামলা চলমান রয়েছে। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা চলমান। পাশাপাশি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের (প্রায়) ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৪ লাখ মামলাও সেই একই তিমিরে রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা এসব মামলা প্রত্যাহার চাই।
আরও যত মামলায় দন্ড আছে তারেক রহমানের : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৭ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে অন্তত ৮৪টি মামলা হয়। এই ৮৪ মামলার মধ্যে পাঁচটিতে দন্ড হয় তারেক রহমানের। আর খারিজ, খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন ৩৯ মামলায়।
অর্থ পাচার মামলায় সাজা স্থগিত : অর্থ পাচারের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদন্ড স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এটি ছিল তারেক রহমানের প্রথম সাজা। এই সাজার বিরুদ্ধেই আপিল বিভাগে আবেদন করা হয় এবং তা স্থগিত করা হলো।
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদন্ড দেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়। তবে দুদকের আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাই কোর্ট।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন : জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে নয় বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদন্ড দেন।
মানহানি : ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও পাকবন্ধু আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য দেন তারেক রহমান। সেই খবর প্রকাশিত হয় দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে। এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে সে সময় নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস নড়াইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এই মামলায় নড়াইলের একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদন্ড দেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা বিচারাধীন : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা বেশ কিছু মামলা একে একে খারিজ হয়েছে। এরই মধ্যে নাশকতা ও মানহানির ২৩টি মামলা খারিজ হয়েছে। মূলত খালেদা জিয়ার যে দুটি মামলা নিয়ে বেশি আলোচনা সে দুটি হলো জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। কারণ এই দুই মামলাতেই কারাদন্ড ভোগ করতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। সম্প্রতি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদন্ড স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এর আগে ?আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিনই দুর্নীতির এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি দুর্নীতি মামলা থেকে। বিচারিক আদালতে কার্যক্রম চলছে আরও দুটি দুর্নীতির মামলার। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, তার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা ছিল। এর মধ্যে বেশির ভাগই নাশকতা ও মানহানির মামলা। আর বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। শুধু দুটি মামলায়ই খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছিল।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা : ২০১১ সালের আগস্টে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ট্রাস্টের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেন করা হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ টাকার কোনো উৎস তারা দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ করা হয়। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালত। খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এ মামলায়। বিচারিক আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির জন্য হাই কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
নাইকো দুর্নীতি মামলা : কানাডার জ্বালানি কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে এই মামলাটিও হয় ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত সরকারের সময়। মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছিল। কারণ এই চুক্তিটি প্রথম করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, তখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আদালত শেখ হাসিনাকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। তবে মামলাটি রয়ে যায় এবং আসামি হিসেবে থেকে যান খালেদা জিয়া। তার আইনজীবী কায়সার কামাল জানান, এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা : ঢাকার কমলাপুরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গ্যাটকো নামে একটি কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগে এই মামলাটিও হয় ২০০৭ পরবর্তী সেনাসমর্থিত সরকারের সময়। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জানান, সম্প্রতি অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীরা সব মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পাবেন। এক মাসের মধ্যেই দলের সব নেতা-কর্মীর সর্বস্তরের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা হবে। এখনো মামলার খড়গ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের মতোই অনেকটা স্থির হয়ে আছে। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ সারা দেশের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।