খাগড়াছড়ি:- দেরীতে হলেও হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেওয়া হলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছে তারা। উন্নয়ন প্রকল্প পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত পার্বত্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি। নেই আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কোন বরাদ্দ। পক্ষান্তরে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে বরাদ্দের প্রায় ২৫ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ কর্তন করে উন্নয়ন বোর্ডে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। বরাদ্দের অর্থ কর্তনে জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব পড়বে বলে মনে করে খোদ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাধছে মানুষের মাঝে। অর্থ ফেরত আনতে রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার প্রায় তিন মাস পর আগের পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে গত ৭ নভেম্বর জিরুনা ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু নতুন পরিষদ গঠনের এক মাস পার হলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পরিষদ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। তবে পরিষদে এখনো বহাল রয়েছে পরিষদে হাসিনার আসলে বদলী করা দুর্নীতিবাজ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অনুকূলে ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অপরদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৬১.৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম সহায়তা (কোড নং-২২১০০০৯০০) প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে ১৬৫ কোটি টাকার স্থলে ২৩০ কোটি টাকা এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ১৬২ কোটি টাকা স্থলে ৯৭ কোটি সংশোধিত বরাদ্দ বিভাজন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে ২৪.৭০ কোটি টাকা কর্তন করে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্দ খাগড়াছড়িবাসী।
নাম প্রকাশ না শর্তে জনৈক উন্নয়ন কর্মীর মতে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জনসংখ্যা বেশি। তাছাড়া বিগত আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলা হতে ছিলেন। এ দীর্ঘ সময়ে খাগড়াছড়ি জেলায় উন্নয়ন বরাদ্দ হলেও ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে জনকল্যাণে ব্যয় হয়নি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনৈক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হলেও এখনো প্রকল্প চূড়ান্ত হয়নি। অথচ অর্থ বছরের ৬ মাস প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ফলে কবে নাগাদ প্রকল্প চূড়ান্ত হবে, টেন্ডার আহ্বান হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কর্মকর্তারা। এছাড়া অন্যান্য খাতে কোন বরাদ্দ এখনো দেওয়া হয়নি। অথচ পরিষদে অনুকূলে বরাদ্দের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে নেওয়া হয়েছে।
এ দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পরিষদের বরাদ্দের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে হস্তান্তরের ঘটনায় জেলাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে। এতে করে জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব পড়বে বলে মনে করে খোদ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি মো: রাকিবুল হাসান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খাগগাছড়ি প্রতিনিধি মো: রফিক হোসেন অবিলম্বে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত পুনর্বাসন টাস্কফোসে, জেলা প্রশাসন ও অন্যান প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ও বদলী হয়ে আসা কর্মকর্তাদের অপসারণ ও অন্যত্র বদলীর দাবী জানিয়ে বলেন,তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পরিষদের বরাদ্দের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে হস্তান্তরের ঘটনায় জেলাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এতে করে জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব পড়বে।