রাঙ্গামাটি :- রাঙ্গামাটির পাহাড়ে উৎপাদিত চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলার কদর এখন সারাদেশে। টকটকে সুস্বাদু রসালো এ কমলা এখন পাহাড়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফল। ডলার সংকটের কারণে বিদেশি কমলা আমদানি কমায় এবং স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ায় রাঙ্গামাটির চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের। জেলার নানিয়ারচরসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কমলার আবাদ করে অসংখ্য মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে রাঙ্গামাটিতে কমলার আবাদ হয়েছে ৮০৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় কমলা চাষ হয়েছে ১২৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চায়না কমলার আবাদ হয়েছে প্রায় ৬ হেক্টরে। উৎপাদিত কমলা বিক্রি করে এ বছর ২১০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পানি সেচের ব্যবস্থা করা গেলে কমলা উৎপাদন দ্বিগুণ হবে এবং উৎপাদন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
জানা গেছে, জেলার নানিয়ারচর উপজেলার রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে ১৬ মাইল এলাকায় হেডম্যান সুদত্ত চাকমা তার পতিত চার একর জমিতে প্রথমবারের মতো চায়না কমলা আবাদ করেন। পাশাপাশি দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে ব্যাপক ফলনও পেয়েছেন তিনি। সুদত্ত চাকমার বাগানে ৪০০টি চায়না কমলা ও ৪৫০টি দার্জিলিং কমলার গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা। চায়না কমলা যেমন দেখতে লাল টকটকে, তেমনি সুস্বাদু। আবার দার্জিলিং কমলার আকারও বড়, রসে ভরা, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
কৃষক সুদত্ত চাকমা প্রথমে চায়না ও দার্জিলিং কমলা চাষ করলেও পরে শান্তি চাকমা নামের এক কৃষককে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বাগানটি বর্গা দেন। পরে শান্তি চাকমা আবার ব্যবসায়ী পঞ্চশীল চাকমার কাছ পুরো বাগানটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। বর্তমানে পঞ্চশীল চাকমা এ বাগান থেকে প্রতিদিন কমলা বিক্রি করে যাচ্ছেন। বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকেই বাগান থেকেই পাইকারি দরে কমলা কিনছেন এবং গাছের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের নব কারবারীপাড়া, যাদুখা ছড়া, হরিণাথ ছড়াসহ বিভিন্ন এলাকার অনেকে স্থানীয় ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন বাজারে চায়না কমলা প্রতি কেজি দুই থেকে ২৫০ টাকা ও দার্জিলিং কমলা আকার অনুযায়ী প্রতিকেজি ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, রাজস্থলী ও বরকল উপজেলাসহ অনেক এলাকায় স্থানীয় জাতের কমলার আবাদ করা হয়েছে।
সুদত্ত চাকমার বাগানে আসা দর্শনার্থী তুষার কান্তি চাকমা বলেন, ‘শুনেছি নানিয়ারচরে প্রত্যান্ত এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর কমলা বাগান করা হয়েছে। তাই দেখতে এসেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলে অর্গানিকভাবে কমলা চাষ করা হয়েছে, এটা খুবই আশাব্যঞ্জক। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এসব কমলা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
চায়না কমলা চাষি সুদত্ত চাকমা জানান, চার একর জমিতে কমলা চাষ করেছেন। বেশ ভালো ফলন হয়েছে, আয়ও করেছেন। তবে তিনি কৃষক শান্তি চাকমার কাছে বাগানটি বিক্রি করে দিলেও কমলা চারা কলপ করে চারা বিক্রি করছেন। লোকজন কমলা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বর্গা নেওয়া আরেক কৃষক শান্তি চাকমা জানান, ছয় মাস আগে তিনি কমলা বাগানটি কিনে নিয়েছেন। বাগান পরিচর্চা করে ভালো ফলন পেয়েছেন। উৎপাদিত কমলাগুলো খুবই সুস্বাদু ও টকটকে।
ব্যবসায়ী পঞ্চশীল চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের চায়না কমলা ও দার্জিলিং কমলা উৎপাদন অনন্য উদাহরণ। আশা করছি চায়না ও দার্জিলিং কমলা বিক্রি করে এবার ভালোই লাভবান হতে পারব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,রাঙ্গামাটির উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড়ের মাটি কমলা চাষের উপযুক্ত। শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করা গেলে কমলা উৎপাদন অনেক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে চায়না কমলাসহ সব ধরনের কমলা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে যদি সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা যায়। মূল সমস্যা হচ্ছে পাহাড়ে শুস্ক মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। পানির সংকটের সমস্যা সমাধান করা গেলে পাহাড়ে কমলা চাষে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।’ সমকাল