পার্বত্য তিন জেলায় প্রাণ ফিরেছে পাহাড়ি পর্যটনে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫৫ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি,ডেস্ক:- ভ্রমণে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর আবারও পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বান্দরবান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম থাকছে মেঘলা, নীলাচল ও শৈলপ্রপাত। দর্শনার্থীরা উপভোগ করছেন সবুজ পাহাড়, নৈসর্গিক প্রকৃতি আর শীতল হাওয়া। অনেকে লেকের স্বচ্ছ পানিতে কায়াকিং করছেন। কেউবা চড়ছেন ঝুলন্ত কেবল কারে। আবার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য পাশে রেখে নিজেকে ক্যামেরা বন্দি করছেন অনেকে।

পাহাড়-ঝর্ণা-ঝিরিখ্যাত বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটিতে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা। সাগরকন্যা কুয়াকাটার সৈকতেও ভিড় জমিয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এসব জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকায় চলতি মাসের শুরুর দিকে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ভ্রমণের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে।

নীলাচল ঘুরতে আসা ঢাকার একটি গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজিংয়ে চাকরি করা মাহফুজ খান বলেন, বন্ধ থাকার কারণে এতদিন আসতে পারেনি। এখন পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। খুবই সুন্দর। পাহাড়ের আবহাওয়া খুব গরম নয়, হালকা ঠান্ডা। ভালোই লাগছে। দুদিন থাকার পরিকল্পনা। এরপর চিম্বুক, নীলগিরি যাব।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনার শিক্ষার্থী দেবাশীষ পাল বলেন, খুব ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর। আগে কখনো আসা হয়নি। পাহাড় প্রকৃতি এখনো সবুজ। রংপুর থেকে মেঘলায় ঘুরতে আসা শাহানা আক্তার বলেন, অনেক সুন্দর। ঝুলন্ত ব্রিজটা দুলছে। পার হওয়ার সময় ভয় লাগছিল। এতদিন পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় আসতে পারিনি।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়ের সহিংস ঘটনার কারণে গত ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়। পরে তা বাড়ানো হয়। এতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় দর্শনার্থীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এরপর ৬ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে পর্যটক ভ্রমণের বিধিনিষেধ তুলে নেয় জেলা প্রশাসন।

বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, পর্যটক আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সেক্টরে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি পর্যটক আসবেন এবং বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।

পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি নাসিরুল আলম বলেছেন, পরিবহনে ২০ শতাংশ ভাড়া ছাড় দেওয়া হবে। এই ছাড় ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, বান্দরবানের সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির সঙ্গে নীলগিরি পর্যটকের জন্য ভ্রমণে উন্মুক্ত করা হয়। জননিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অন্য তিন উপজেলা রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিতে ভ্রমণে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে প্রাণচঞ্চল ফিরছে। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর প্রথম শুক্রবার (গতকাল) সকাল থেকেই খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ও রিছাং ঝর্ণায় পর্যটকের উপস্থিতির দেখা মিলেছে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে কথা হয় চট্টগ্রাম থেকে আসা জসিম উদ্দিন ও মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তারা বলেন, পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত। ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান নোয়াখালী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আবু সাঈদ।

পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন জানিয়ে খাগড়াছড়ির পরিবহন শ্রমিক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বড় ধরনের ক্ষতির পরও ভালো লাগছে পর্যটকের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের দোকানি হৈমন্তী ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এর পরও দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় আমরা খুশি।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, এখানকার পর্যটন খাতের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। পর্যটন কেন্দ্র আবারও চালু হওয়ায় পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

রাঙ্গামাটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। সাজেকে ১১৬টি কর্টেজ রিসোর্ট রয়েছে, যার প্রায় ৮০ শতাংশ বুকিং হয়েছে গতকাল ছুটির দিনে। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, সুবলং ঝর্ণা, কাপ্তাই হ্রদসহ পর্যটন স্পটগুলোয় দেখা গেছে দর্শনার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য। কাপ্তাই উপজেলায়ও বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা।

জামালপুর থেকে পরিবার নিয়ে রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু ঘুরতে আসা পর্যটক মাহফুজ জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। নোয়াখালী থেকে ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসা পর্যটক ওমর ফারুক জানান, আমি সুবলং ঝর্ণা, কাপ্তাই হ্রদ, পলওয়েল পার্ক ঘুরে ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। ঘুরে খুব ভালো লাগছে, সবদিক শান্ত পরিবেশ।

রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের মোটেল রিসিভশন অফিসার নাঈমুর ইসলাম সানি জানান, এখন পর্যটন মৌসুম চলছে। পর্যটক আসতে শুরু করেছে। প্রতিনিয়ত বুকিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। সাজেক কর্টেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানিয়েছেন, সাজেক ভ্রমণ এখন নিরাপদ। ভ্রমণপিপাসুরা সাজেক এসে ঘুরে যেতে পারবেন। প্রতিদিন অনেকে আসছেন।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জানিয়েছেন, পর্যটকের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিগত কয়েকমাস পর্যটক খরায় ছিল সাগরকন্যাখ্যাত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। সে খরা কাটিয়ে উঠতে শুরু করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এখন নিয়মিত বিরতিতে সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে ভরপুর থাকে কুয়াকাটা সৈকত। তবে পর্যটকের উপস্থিতি বেশি হলেও আবাসিক হোটেলে অবস্থান করা পর্যটকের সংখ্যা খুবই নগণ্য—এমনটাই জানিয়েছেন আবাসিক হোটেল বেস্ট সাউদার্নের জেনারেল ম্যানেজার মো. আবুল কালাম। তিনি আরও জানান, পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে অক্টোবর থেকেই; কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে পর্যটক আসলে তারা দিনে এসে দিনে চলে যায়।

সরেজমিনে বিকেলে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যাস্ত দেখার জন্য হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নামে। যে যার মতো করে ছবি ধারণ করে এবং বালিয়াড়িতে হাঁটাহাঁটি করে সময় পার করছে। আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা কুয়াকাটার কুয়া, শ্রীমঙ্গল এবং সীমা বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন মহিলা মার্কেট, ঝিনুক-আচার মার্কেট, শুঁটকি মার্কেটে কেনাকাটাসহ নৌপথে বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন।

ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, পর্যটক আগমন করায় আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। পর্যটক আগমনের ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে আমরা আবারও ক্ষতির মুখে পড়ব।

পটুয়াখালীর হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে নানা ইস্যুতেই পর্যটকশূন্য ছিল কুয়াকাটা। ফলে পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই লোকসানের মুখে ছিলেন। এখন সাপ্তাহিক ছুটিতে আশার আলো দেখতে শুরু করছেন তারা। ব্যবসায়ী আশা করছে, খুব শিগগিরিই তাদের সংকট কাটিয়ে উঠবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের পুলিশ সুপার একে আজাদ বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা নজরদারি আছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট পুলিশ আগামীতে পর্যটক সেবার মানোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions