ডেস্ক রির্পোট:- ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনে নানা ধরনের সংস্কার চলছে। এরই মধ্যে কিছু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করা হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের পদ ফাঁকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন অধিদপ্তরও চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। মাঠ প্রশাসনের ডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা আট জেলায়।
আওয়ামী লীগের নিয়োগ পাওয়া পাঁচ জেলার ডিসিরা এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। আবার ফাঁকা পদে অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। এতে অনেকের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। যদিও ভিতরে-বাইরে আলোচনা হচ্ছে যোগ্য লোক সন্ধান নিয়ে। উপযুক্ত কর্মকর্তা পেলেই পদায়ন করা হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনে এ মুহূর্তে দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন লোক প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান প্রধান যিনি হবেন তার নেতৃত্ব হবে সরকারকে সহযোগিতামূলক। বিগত দিনগুলোতে অনেকেই সিনিয়রিটি পেলেও কাজের ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ। আবার বিচক্ষণ কর্মকর্তা আলোচনায় থাকলেও তারা জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক বছর আগে বঞ্চনার শিকার হয়ে অবসরে যাওয়া ১৯৮২, ১৯৮৫ ব্যাচ থেকেও কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে এনে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরপরও নানা জায়গায় পদ পূরণ হয়নি। এতে বর্তমান কর্মরতদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বিসিএস ১৫ ব্যাচ থেকে সচিব হওয়ার কথা থাকলেও পূর্বের ব্যাচ থেকে সচিব নিয়ে আসার কারণে ১৫ ব্যাচ পিছিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না তারা। সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, প্রশাসনে যোগ্য লোক পাওয়া না গেলে যারা ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন সেখান থেকে আনতে হবে। জিয়াউর রহমানের সময় এবং এরশাদ আমলেও পুরনোদের ফেরানোর ঘটনা আছে। ১৯৪৫ ব্যাচের আবদুল মোমেন খান, ১৯৪৯-এর সিএসপি শফিউল আজম, ১৯৫৬ ব্যাচের কাজী শহিদুর রহমান, সাইদুজ্জামান, ১৯৫৭ ব্যাচের খোরশেদ আলম এবং ১৯৬৭ ব্যাচের ড. শাহ মোহাম্মদ ফরিদ এদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা মুখ্য সচিবের মর্যাদা দিয়ে রাখা হয়েছিল অবসরের পরও। যদি সার্ভিসে না পাওয়া যায় তাহলে সাবেক যারা খুব সুপরিচিত যোগ্য তাদের একই রকম মর্যাদা দিয়ে অফার দিতে পারে। কাজ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে, তবে মর্যাদা হবে একটু বেশি। তবে সবাই যে এ অফারে আসবেন সেটিও নয়। আর নিয়মিত ব্যাচে যোগ্য লোক থাকলে দ্রুত পূরণ করা উচিত। দায়িত্বশীল পদ ফাঁকা রাখা ঠিক নয় বলে জানান এ জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনেক ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে বঞ্চিতদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে গিয়েও ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগী কর্মকর্তাদের সরাতে হচ্ছে। যেখানে নিয়োগ দিতে গিয়ে অনেক সময় তথ্যগত ত্রুটি এবং কারও কারও অসাধু তৎপরতায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেগুলো পরে সংশোধন করেও নিতে হচ্ছে। এতে অনেকের পদায়নের আদেশ দিয়ে বাতিল করতে হচ্ছে।
ইতোমধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অনেককে। কেউ কেউ হচ্ছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি)। একই সঙ্গে বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে সচিব পদমর্যাদার আটটি পদ। এক মাস ১১ দিন খালি থাকার পর ঢাকা ও রংপুরে নতুন কমিশনার দেওয়া হয়। এক মাস ১০ দিন পর তথ্য সচিব নিয়োগ দেওয়া হয় গত বুধবার (২৩ অক্টোবর)। এখনো খালি পড়ে আছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের একটি সদস্য (কার্যক্রম বিভাগ), সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সচিব একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ পদে বসানোর ক্ষেত্রে অনেক বিষয় কাজ করে, যাকে দেওয়া হবে দায়িত্ব তার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিচক্ষণতা, প্রতিষ্ঠান চালানোর নেতৃত্ব নানা বিষয় দেখা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে এমনভাবে প্রশাসনে দলীয়করণ করা হয়েছে যে নিরপেক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে পদ পূরণ হচ্ছে, বাকিগুলো দ্রতই পূরণ হবে। প্রশাসনের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, যারা এসব পদ পূরণ করবে তারা কেমন যোগ্যতা চাচ্ছে সেটা বড় বিষয়। যোগ্যতার ধরন ও মাপকাঠি হয়তো একেকজনের কাছে একেক রকম। অনেক মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ ফাঁকা থাকার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ বলেন, ওই প্রক্রিয়ায় জনপ্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই এসব করা হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, আমরা অনেক কিছু চাচ্ছি। যোগ্য অফিসার পাওয়া যে কী দুরূহ হয়ে গেছে। বয়স বাড়ছে, টেনিওর বাড়ছে, এটা চাই, সেটা চাই। কিন্তু আমরা ফর্মুলা মোতাবেক যেটা চাচ্ছি, সেই অফিসাররা খুবই কম। তবু আমাদের এর মধ্য থেকেই দিতে হবে। শিগগিরই দেব।
খালি থাকা সচিব পদগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব।বাংলাদেশ প্রতিদিন