ডেস্ক রির্পোট:- প্রায় পঁচিশ বছর আগের এক গভীর রাত। আন্দামান সাগরের নির্জন দ্বীপ ল্যান্ডফলে আরাকান আর্মির নেতা জেনারেল খাইং রাজা এবং তার সঙ্গীরা স্বপ্ন বুনছিলেন এক স্বাধীন আরাকানের। কিন্তু তারা তখন জানতেন না যে সেই স্বপ্ন, সেই স্বাধীনতার প্রদীপ, অচিরেই নিভিয়ে দেবে তাদেরই অন্যতম সহযোগী ভারত।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা (RAW)-এর সাথে আরাকান আর্মির সম্পর্ক তখন বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। ১৯৯৭ সালে ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল বিশ্বজিত সিং গ্রেওয়াল, যিনি মায়ানমারে বেড়ে উঠেছিলেন, আরাকান আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (KNU) নেতাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তারা ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে নিরাপদ আশ্রয় পাবে। সেই আশ্বাসে ভরসা করেই ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আরাকান আর্মির নেতা জেনারেল খাইং রাজা এবং তার ৩৪ জন সঙ্গী ল্যান্ডফল দ্বীপে পা রাখেন।
কিন্তু পরদিন ভোরে ঘটে যায় এক নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী শুরু করে ‘অপারেশন লিচ’—একটি রক্তক্ষয়ী অভিযান।
১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আরাকান এবং কারেন নেতাদের ধরে নিয়ে যায়, কয়েকজনকে হত্যা করে। জেনারেল খাইং রাজা এবং তার সহযোদ্ধা মেজর সোহ তুন সেদিন শহীদ হন। ভারত তখন এই অভিযানকে ‘অস্ত্র চোরাচালান ধ্বংস’ বলে চালিয়ে দিলেও, আসলে এটি ছিল মায়ানমারের সেনাবাহিনীর চাপে ভারতের করা এক নৃশংস বিশ্বাসঘাতকতা।
১৯৯১ সালে জেনারেল খাইং রাজা আরাকানের রাখাইন জনগণের স্বাধীনতার জন্য আরাকান আর্মি গঠন করেন। কারেন বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ৬০ জনের একটি দল গঠন করেন জেনারেল রাজা। রওনা দেন মাতৃভূমি আরাকানের দিকে। কিন্তু মায়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পর মাত্র ৪০ জন নিয়ে পৌছান বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে। ধীরে ধীরে তাদের শক্তি সামর্থ বাড়তে থাকে। এক পর্যায় ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ে আরাকান আর্মি। এরপর প্রতারণা আর বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। আরাকানি জনগণের দীর্ঘশ্বাসে তা আজও টের পাওয়া যায়।
সেই দফায় আরাকান আর্মি ভাঙলেও ভাঙেনি আরাকানি জনগণের স্বাধীনতাকামী মন। ভারত যে একদিন তাদের সহযোগী ছিল, সেই ভারতই সেই দিন তাদের শেষ করে দিতে চেয়েছিল। এক সময় যে দেশটির মাটিতে আশ্রয় পাবার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই ভারতই তাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরদিনের জন্য গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আরাকানি জনগণ আবারও মুক্তিসংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। ২০সালে দ্বিতীয় দফায় আবারও গঠন করা হয় আরাকান আর্মি।
আজ রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির তাণ্ডবে মায়ানমার সেনাবাহিনী কোণঠাসা। বহুগুণ হয়ে ফিরে আসার এই গল্পে, সেই জেনারেল রাজা, সেই র কর্মকর্তার প্রতারণা- প্রেরণা হয়ে এসেছে। বাহিনীকে আরও পরিপক্ককরেছে।