রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ও রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর ফাইল গায়েব হয়ে যাচ্ছে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৬১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আর্থিক এবং পরিষদের নেয়া পুরনো অনেক সিদ্ধান্তের ফাইল গায়েব করা হচ্ছে। এরইমধ্যে শতাধিক ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব ফাইলের বেশির ভাগই আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরও ফাইল গায়েব করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। ইতিমধ্যে যেসব ফাইল গায়েব হয়েছে তাতে শতাধিক কোটি টাকার হিসাব রয়েছে। পরষিদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব ফাইল গায়েবের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মচারীকে টাকার বিনিময়ে ফাইল গায়েবের মিশনে নামানো হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর চেয়ারম্যান সদস্যসহ অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়মিত অফিস করছেন না। তারা বাইরে থেকে টাকা দিয়ে কর্মচারীদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ফাইল গায়েব করছেন। তবে এসবই হচ্ছে খুবই গোপনে। পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তারা জানান, জেলা পলিসদের পাশাপাশি পরিষদের নিকট হস্তান্তরতি বিভিন্ন বিভাগের জেলা পলিসদের অনেক দপ্তর ও কমন শাখার অনেক ফাইলের হদিস নেই। আবার কমিটি শাখার অনেক ফাইল রাতারাতি গায়েব হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ফাইলে কমিটির নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর ফাইল সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বিষেশ করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পলিষদের নিকট হস্তারিত বিভাগ গুরুত্বপুর্ণ ফাইলসমুহ। যে সকল বিভাগ গুলোতে আওয়ামীলীগ সরকারের গত ১৫ বছর ধরে এই সকল খাত থেকে শত শত কোটি টাকালুট করা হয়েছে। এই লুট পাটে বিশেষ ভাবে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ দীপংকর তালুকদার,সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাজি মো. মুছা মাতব্বর, সহসভাপতি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা,পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা,রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকব্বর হোসেন চৗধুরী, মোহাম্মদ সেলিমসহ অনেকে যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। মুল জেলা পলিষদের বাইরে যে সকল বিভাগ গুলো পরিষদের নিকট হস্তারিত হয়েছে সে সকল বিভাগ গুলোতেও করা হয়েছে ব্যাপক লুটপাঠ যেমন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ,স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা পরিকল্পনা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ, জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, আইন ও কুটির শিল্প (বিসিক) জেলা সমবায় অধিদপ্তর, সমাজ সেবা অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, জেলা ক্রীড়া অধিদপ্তর, সাই নৃ সাংস্কৃতিক সংস্থা, জেলা শিল্পকলা একাডেমী,জেলা সরকারী গণগ্রেগার, জেলা গঠন উন্নয়ন অধিদপ্তর, টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি হার্টিকালচার কেন্দ্র,তুলা উন্নয়ন বোর্ড, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নার্সিং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিডিসি (সেচ ও বীজ),মাধ্যম শিক্ষা, স্থানীয় পর্যটন তাছাড়াও বাজারফান্ড,বাজার ফ্রন্টের জমি এবং এলজিডি, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, গণপূর্ত, পর্যটন, সড়কের টোল, ফরেস্ট অফিস, কৃষি অফিসজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও পাবলিক হেলথসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিণত হয় তার বাণিজ্যিক কেন্দ্রে।
ইতিমধ্যে এসব প্রতিষ্টানের অনেক ফাইল গায়েব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। বর্তমান সরকারের হাতে যেন এসব ফাইল না যায় সে চেষ্টার অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে এসব কিছুই হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। এসব বিভাগ গুলোর কমিটির বেশির ভাগই কোনো মিটিং করেনি। অথচ মিটিংয়ের নামে অর্থ বরাদ্দ ও কমিটি সদস্যদের নামে মিটিংয়ে হাজিরার টাকা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বেশ কিছু ফাইল গায়েব করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অথচ এসব ফাইল ৫ই আগস্টের পরেও দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন তারা। পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, এরইমধ্যে পরিষদের দায়িত্বে থাকা ও আওয়ামীলীগের অনেক নেতার বিরুদ্দে একাধিক মামলা হয়েছে। তাদের নামে আরও মামলার শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্য আওয়ামীলীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। তারাও বিভিন্ন উপায়ে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী জানান, প্রায় প্রতিদিনই পরিষদ থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ভেতরে পুরো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। ৫ই আগস্টের দোহায় দিয়ে এসব ফাইল টাকার বিনিময়ে গায়েব করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বাইরে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন। পরে ভেতরে এসে নির্দিষ্ট ফাইলটি সরিয়ে রাখছেন। মূলত ওইসব ফাইল নিয়ম ও আইন মেনে তৈরি করা ছিল না। এসব ফাইলের বেশির ভাগই হচ্ছে আর্থিক সংশ্লিষ্ট। এসব নজরদারি করার মতো অবস্থা পলিসদে নেই। কারণ পলিষদের ভেতরে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ কেউ অফিস করছেন আবার কেউ কেউ অফিসে হাজিরা দিয়েই চলে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে পার্বত্যাঞ্চল অর্থাৎ রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ছিল দলীয় নেতাদের দখলে। তাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন। চলত নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অন্যায়। তার ক্ষমতার সামনে অসহায় ছিলেন বিএনপি, জামাতের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম ভুট্টো অভিযোগ করে বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি দীপংকরের দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। এমনকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির (ওটিএম) মাধ্যমে লোপাট হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে ২০০ কোটি, জেলা পরিষদে ৪০০ কোটি, পাবলিক হেলথে ১০০ কোটি, এলজিডিতে ২০০ কোটি এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগে ১০০ কোটি টাকার ওটিএম টেন্ডারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন ক্ষমতাশীন দলের নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট মো. মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ক্ষমতায় থেকে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কি-না করেনি। সবখানে তাদের দুর্নীতিতে টইটম্বুর ছিল। দখলে ছিল তাদের স্বর্গরাজ্য। শহরের মানিকছড়ি এলাকায় বিএনপির অফিস দখল করে নিজেদের দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন। রাঙ্গামাটি শহরের ফিসারি বাঁধ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের জমি দখল করে বানিয়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়। শুধু তাই নয়, রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলাও বাদ পড়েনি। ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য ও নিয়োগবাণিজ্য ছিল তাদের অবৈধ টাকার উৎস। সাধারণ মানুষ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জিম্মি। পৌরসভার দুর্নীতির কারণে সাধারণ নাগরিকরা ছিলেন সুবিধাবঞ্চিত। এসব ঘটনায় দুর্নীতির মামলা হলেও ক্ষমতার দাপটে কার্যকর হয়নি। রাঙ্গামাটিতে ঘরে ঘরে সাধারণ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বেকার। কারণ টাকা কিংবা ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া অসম্ভব ছিল। এসব ঘুষবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল ছোট থেকে শীর্ষ নেতারাও। প্রকাশে ঘুষের লেনদেন চললেও মুখ খুলতে পারতেন না কেউ। প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলা হয়রানির শিকার হতেন। দুর্নীতির কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টের বেহাল দশা। শোচনীয় অবস্থা রাঙ্গামাটি জেলার জেনারেল হাসপাতালও। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষ। এসবই হতো সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদারের ছত্রছায়ায়। তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
এই লুট পাটে বিশেষ ভাবে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ দীপংকর তালুকদার,সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাজি মো. মুছা মাতব্বর, সহসভাপতি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা,পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা,রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকব্বর হোসেন চৗধুরী, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাওয়ার উদ্দিন এবং  মোহাম্মদ সেলিমসহ অনেকে যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।
এ প্রসঙ্গে সংসদ কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ফাইল গায়েব করা হলে চিরস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হবে। যারা এখন পলিষদের দায়িত্বে আছেন তাদের উচিত হবে অভ্যন্ত্ররীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর ও ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। এ সময় তারা স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপদের কক্ষসহ ৯ তলা ভবনের প্রায় সব কক্ষ তছনছ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ই আগস্ট সংসদ ভবনের গেটে প্রথমে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রবেশে বাধা দিলেও লোকসমাগম বাড়লে আর তাদের আটকানো যায়নি। সংসদ ভবন চত্বরের দক্ষিণ প্লাজা, খেজুরবাগান মাঠ, টানেলে ঢুকে পড়ে অসংখ্য মানুষ। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ওইদিন বিকাল থেকে রাতভর একদল মানুষ সংসদ ভবনের প্রায় সব কক্ষেই লুটপাট চালায়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions