গাজা যুদ্ধের এক বছর,রক্ত, লাশ আর বারুদের গন্ধের ভেতর বসবাস

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- চারদিকে রক্ত। লাশ আর লাশ। ছিন্নভিন্ন মানব-অঙ্গ। বাতাসে বারুদের গন্ধ। মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে লাশ। সন্তানের লাশ নিয়ে মায়ের আহাজারি। কে তাকে সান্ত্বনা দেবেন! সবার একই অবস্থা। কেউ হারিয়েছেন ভাই। কেউ স্বামী। কেউ বোন। কেউ মা-বাবা। আবার কোথাও পুরো পরিবার শেষ। যেসব মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তা দাফন করার মতো স্থান নেই। চারদিকে কংক্রিটের বিধ্বস্ত ভবন। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র- কোনো স্থানই নিরাপদ নয়। যারা বেঁচে আছেন, তারা শুধু প্রাণ হাতে নিয়ে এক স্থান থেকে ছুটছেন অন্য স্থানে। ইসরাইল গণহত্যা উল্লাসে এমনইভাবে মেতেছে। গাজাকে ‘নির্জন দ্বীপে’ পরিণত করার মিশন নিয়ে তারা সেখানকার মাটিকে তাঁতিয়ে দিয়েছে। মানুষ বেঁচে আছে মানবেতরভাবে। গাজার এ চিত্রকে গণহত্যা আখ্যায়িত করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করা হয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে)। বিশ্ব মোড়লরা ইসরাইলকে বিরত হতে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে সচেষ্ট। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, গত বছর ৭ই অক্টোবর ইসরাইল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে কমপক্ষে ৪১,৮৭০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হাত-পা হারানো শিশুর দেহকে নিয়ে পিতা, অভিভাবকদের দৌড়াদৌড়ি বিশ্ববিবেককে কাঁদিয়েছে গত এক বছর। জাতিসংঘ বার বার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সব আহ্বানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অব্যাহতভাবে গাজায় নির্মমভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই যুদ্ধে হামাসকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তারা মাঝে মাঝেই ইসরাইলে রকেট হামলা চালিয়েছে। তার জবাব দিতে গিয়ে এখন লেবাননে পুরো মাত্রায় যুদ্ধ করছে ইসরাইল। তারা বেপরোয়াভাবে বোমা ফেলছে সেখানে। লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে লোকালয়কে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। হিজবুল্লাহও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। তারা হত্যা করেছে ইসরাইলি বেশ কিছু সেনাসদস্যকে। ধ্বংস করেছে ট্যাংক। কিন্তু পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় এসব খবর আসছে কম। তা সত্ত্বেও কোনো কোনো মিডিয়া লেবাননকে আরেকটি গাজা যুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে। লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারুল্লাহকে হত্যার সময় সেখানে ইরানের একজন ডেপুটি কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এর বদলা নিতে ইসরাইলে এ সপ্তাহে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। তারা বলেছে, ইসরাইল পাল্টা হামলা না চালালে এখানেই ইতি। কিন্তু ইসরাইল অঙ্গীকার করেছে, তারা ইরানের হামলার জবাব দেবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য একটি উত্তপ্ত কড়াইয়ের উপর বসে আছে। যেকোনো সময় সেখান থেকে উত্তেজনার আগুন পোড়াতে পারে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে। এমন অবস্থায় গাজা যুদ্ধের এক বছরের প্রাক্কালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লেবাননে ইসরাইলের সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, আঞ্চলিক উত্তেজনাকে অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। শনিবার তিনি ফ্রাঞ্চ ইন্টার টেলিভিশনকে বলেন, আমি মনে করি এখন আমাদের অগ্রাধিকার হলো রাজনৈতিক সমাধানে ফেরা। গাজা যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা। বর্তমানে ফ্রান্স কোনো অস্ত্র সরবরাহ দিচ্ছে না। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি স্থায়ী সদস্য এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ফ্রান্স এমন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গাজা যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সেপ্টেম্বরে বৃটেন ঘোষণা দেয় যে, পরিষ্কার ঝুঁকি থাকায় ইসরাইলের কাছে কিছু অস্ত্র রপ্তানি সাময়িক স্থগিত করছে তারা। কারণ, এসব অস্ত্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করে এমন কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। এরই মধ্যে বার বার যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও গাজায় ধ্বংসলীলা ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোন। লেবাননে ইসরাইলের স্থল অভিযানে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তে তিনি নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, অগ্রাধিকার হওয়া উচিত উত্তেজনা এড়ানো। তিনি বলেন, লেবাননের মানুষকে জীবন উৎসর্গ করা উচিত নয়। আরেকটি গাজা হতে পারে না লেবানন। তার এ মন্তব্যে নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, বিরক্তিকর। তবে ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের বিবৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ বলে মত দিয়েছেন কাতারের মধ্যস্থতাকারী। তার মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে জর্ডান। তারা বলেছে, ইসরাইলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা যা করেছে তার জন্য এটা বাস্তবিক পরিণতি।
কিন্তু গাজায়, লেবাননে ইসরাইলের নৃশংসতা বন্ধ হয়নি। তারা আরও জোরালো করেছে হামলা। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বার্ষিকীর আগে তারা মধ্য গাজায় একটি মসজিদে বোমা হামলা করেছে। সেখানে কমপক্ষে ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক ডজন। ইসরাইলি সেনারা সেখানকার সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে এ রিপোর্ট লেখার সময় জাবালিয়া ছেড়ে পালাচ্ছিলেন হাজারো ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে বৈরুতের দক্ষিণে নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। তাতে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাজধানী বৈরুত থেকে দেখা গেছে আকাশে উঠে গেছে অগ্নিশিখা। এরই মধ্যে লেবাননের নিরাপত্তা বিষয়ক একটি সূত্র আল জাজিরাকে বলেছে, হিজবুল্লাহ’র নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান হাশেম সাফিদ্দিনের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে তারা। নাসারুল্লাহ’র পর তাকেই হিজবুল্লাহ’র গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে মনে করা হয়। এসব হামলার প্রতিবাদে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক, কেপটাউন পর্যন্ত প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে, এবং এখনো হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions