ডেস্ক রির্পোট:- ইসরায়েলি বোমা হামলা আরও জোরদার হয়েছে। বোমার আঘাতে ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট। প্রাণ বাঁচাতে লেবানিজরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছাড়ছেন। গতকাল সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্তবর্তী লেবাননের মানসা এলাকায়।tছবি: এএফপিইসরায়েলি বোমা হামলা আরও জোরদার হয়েছে। বোমার আঘাতে ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট। প্রাণ বাঁচাতে লেবানিজরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছাড়ছেন। গতকাল সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্তবর্তী লেবাননের মানসা এলাকায়। ছবি: এএফপি
রাস্তাঘাট, বেসামরিক ভবন, হাসপাতাল– কোনো কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না ইসরায়েলের হামলা থেকে। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত চার দিনে তারা লেবাননের দুই হাজার স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হিজবুল্লাহর কমান্ডারসহ ২৫০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পাল্টা হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহও।
এদিকে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, লেবাননে এ কদিনের হামলায় ৩৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। গতকালও চার স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বিমান হামলা চালিয়েছে তারা।
হিজবুল্লাহকে নির্মূলে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এ লক্ষ্যে চার দিন ধরে হামলা জোরদার করেছে তারা। এরপর গতকাল ইসরায়েল জানায়, তারা এ পর্যন্ত দুই হাজার স্থানে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, এসবই হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনা। গত বৃহস্পতিবার রাতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে এই হামলার মাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে। গতকাল থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১০০ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ ২৫০ যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। গতকালের হামলায় সিরিয়া ও লেবাননের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের হামলার জেরে অনেকে এই সড়ক দিয়ে সিরিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছিল।
গতকালের হামলায় সিরিয়া ও লেবাননের মধ্যকার একটি টানেল ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, এই পথে অস্ত্র চোরাচালান হতো। এই বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর যোগাযোগ বিভাগের শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ রশিদ শফিককে হত্যা করেছে তারা। যদিও হিজবুল্লাহ এখনো এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি করলেও বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনাতেও হামলা চলছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। গতকাল ইউএনপিএফ জানায়, এ পর্যন্ত ৩৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯টির অর্থায়ন করত জাতিসংঘ।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, লেবাননে বুধবার ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী ইসরায়েলের হামলা নিহত হয়েছেন। এরপর গতকাল লেবাননের মারজাইয়ুন শহরে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় চার স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হন। গতকাল লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে মানবিক সংকট দিন দিন বাড়ছে লেবাননে। অনেকে হামলা থেকে বাঁচতে সিরিয়ায় যাওয়া জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছে। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১২ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী। ইসরায়েলের হামলার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
লেবাননে ইসরায়েলের হামলা যারা আহত হচ্ছে, তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। চিকিৎসা সরঞ্জামের পাশাপাশি চিকিৎসকেরও সংকট দেখা দিয়েছে। হামলার কারণে অনেকে কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে রক্তদাতার সংকটও দেখা দিয়েছে। দেশটির রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রক্তের জন্য আবেদন জানিয়েছে গতকাল। তারা বলছে, আহতদের বাঁচাতে হলে এখনই অনেকের রক্ত দরকার।
এদিকে গাজায় গতকালও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল এসব হামলায় মারা গেছে ১৪ জন। এ নিয়ে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ৪১ হাজার ৮০২ জন ফিলিস্তিনি নিহতের খবর পাওয়া গেল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। এ নিয়ে প্রায় ৯৭ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।
গাজায় বিমান হামলা চালালেও পশ্চিম তীরে এমন হামলা চালায় না ইসরায়েল। তবে বৃহস্পতিবার সেই হামলা হলো। প্রায় ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে সেখানে বিমান হামলা চালাল ইসরায়েল। এতে ১৮ জন নিহত হয়েছে।
এদিকে পাল্টা হামলায় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া দুজন আহত হয়েছে।
এ ছাড়া হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। হাইফা শহরেও হামলা চালিয়েছে তারা। হিজবুল্লাহ ছাড়াও ইরাকের ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সের পক্ষ থেকেও হামলা চালানো হয়েছে ইসরায়েলে। দেশটির তিনটি স্থাপনায় গতকাল হামলা চালিয়েছে তারা।
এরপরও হামলা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা লেবাননের আরও ৩০ গ্রামে অভিযান চালাতে চায়। এ জন্য এসব এলাকা ফাঁকা করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া সীমান্তে জাতিসংঘের যেসব শান্তিরক্ষী রয়েছেন, তাঁদেরও সরে যাওয়ার কথা বলেছে আইডিএফ।