ডেস্ক রির্পোট:- ছাত্র-জনতার অভূত অভ্যুত্থানে উৎখাত হয়েছেন শেখ হাসিনা। পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। রেখে গেছেন দোসর এবং মাফিয়াতন্ত্রের প্রেতাত্মাদের। প্রশাসনের ভাঁজে ভাঁজে ঘাপটি মেরে থাকা এই প্রেতাত্মাদের বর্তমান এজেন্ডা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করা। সেই সঙ্গে হাসিনার মাফিয়াতন্ত্র ও ফ্যাসিজমকে বর্তমান সরকারের চেয়ে ‘উত্তম’ হিসেবে উপস্থাপন করা। দিল্লিতে বসে কলকাঠি নাড়ানো শেখ হাসিনা তার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মাদের এখন ‘কাজে’ লাগাচ্ছেন নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নে। এই এজেন্ডার অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সংঘটিত হয় জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কাল্পনিক ইস্যু। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতে আন্দোলন প্রস্তুতি, তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা, ঢাবি-জাবিতে তরুণ হত্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টিসহ একের পর এক ঘটনা। পুলিশ প্রশাসনে শৈথিল্য, আমলাদের অসহযোগিতাতো আছেই। যেকোনো বিপ্লবের পর একটা ‘চেইন-রিঅ্যাকশন’ থাকে। এ কারণে প্রতিপক্ষকে সময় না দিয়ে বিপ্লবোত্তর সরকারের উচিৎ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বৃহৎ কিছু পরিবর্তন আনা। এর মধ্যে ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের পাকড়াও এবং বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি যাদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে হাসিনার ফ্যাসিজম প্রবলম্বিত হয়েছিলো সেই শক্তিকে নস্যাৎ করে দেয়া। কিন্তু উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনযন্ত্র এখন অবধি বিগত সরকারের সাজিয়ে যাওয়া ছক অনুযায়ী চলছে। কাঠামো রয়েছে অক্ষত। প্রশাসনের ভেতর থেকে হাসিনার নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নে ঘুণ পোকার মতো কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে সময় যত যাচ্ছে, ততোই ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগীরা রঙ পাল্টাচ্ছে। ভোল পাল্টে মিশে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে। ভেতরে থেকে নানাদিক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে পরাস্ত করতে চাইছেন।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ সরকার গত দেড় দশকে জনপ্রশাসনে অনুমোদিত সংখ্যার তুলনায় অন্ততঃ দেড় গুণ বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে সিনিয়র সচিব ও সচিব করেছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব পদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা দুই গুণের বেশি। ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে আ’লীগকে ক্ষমতায় আনার পুরস্কারস্বরূপ তাদের এ পদোন্নতি দেয়া হয়।
সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা হয়েও যারা চিন্তা-চেতনা, অস্থি-মজ্জায় ‘অধিকতর আ’লীগার’ হিসেবে শেখ হাসিনার কাছে নিজ অবস্থান দৃঢ় করেছিলেন তাদেরই একজন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিনিয়র সচিব) জাকিয়া সুলতানা (৫৬২১)। শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ বিক্রি করে এই নারী আমলা প্রশাসনে সৃষ্টি করেন কল্পনাতীত প্রভাব। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে যখন যে মন্ত্রণালয়েই গেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। আড়ৎ খুলে বসেন ঘুষ-বাণিজ্যের।
জাকিয়া সুলতানার ক্ষমতার দাপট আন্দাজ করা যায় একের পর এক পোস্টিং দেখে। চাকরি জীবনে কখনো ঢাকার বাইরে চাকরি করেছেন কেউ মনে করতে পারছেন না। নানা কায়দা-কৌশলে পোস্টিং নিয়েছেন ঢাকায়। ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সচিব) থেকে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। ২০২২ সালে অক্টোবরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে মকবুল হোসেনকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় জাকিয়াকে। কিন্তু ‘হাসিনা ঘনিষ্ঠতা’র প্রভাবে থেকে গেছেন লোভনীয় শিল্পমন্ত্রণালয়েই। একই প্রভাবে গতবছর ২৭ সেপ্টেম্বর ‘সিনিয়র সচিব’ হিসেবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। ‘সচিব’ হিসেবে থেকে যান শিল্প মন্ত্রণালয়ে। ১০ম ব্যাচের বিসিএস (প্রশাসন)র এই কর্মকর্তার পৈতৃক বাড়ি নাটোরের সিংড়ায়।
তার স্বামী মো: আতিকুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলিশ মহা-পরিদর্শক। হাসিনার ফ্যাসিজমের দোসর আতিক জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শত শত ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে গত ২১ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে স্বপদে বহাল রয়েছেন ছাত্র-জনতা হত্যার সমর্থক ও ইন্ধনদাতা আতিকের স্ত্রী শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। জানাগেছে, তিনি ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে এখনো নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিশেষ সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিনিয়র সচিব) জাকিয়া সুলতানা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার দায়িত্ব পালনকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। সারা জীবন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। একটি মহল আমার বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সচিব হিসেবে একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে সম্পর্ক থাকার দরকার সেটুকু সম্পর্কই ছিলো। এর বেশি কিছু নয়।
তবে শিল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা এবং মন্ত্রণালয়ের ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, জাকিয়া সুলতানার দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনার দোসর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আতিকুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালেও তারই স্ত্রী জাকিয়া সুলতানাকে স্বপদে রেখে দেয়াটা বিস্ময়কর। তিনি সরকারের ভেতরে থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করছেন। ফ্যাসিবাদের দোসর, হাসিনা-ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ জাকিয়া সুলতানাকে স্বপদে রেখে হাসিনার প্রভাবমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তারা জাকিয়াকেও তার স্বামীর মতো অবিলম্বে বরখাস্ত কিংবা অবসরে পাঠিয়ে গ্রেফতার করা উচিৎ। উভয়ের কৃত অপরাধ ও দুর্নীতির বিচার প্রয়োজন।
জাকিয়া সুলতানার দুর্নীতি : ১৯৯১ সালে চাকরিতে যোগদেন জাকিয়া সুলতানা। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তিনি ঢাকায় পোস্টিং নেন। মাঠপর্যায়ে তাকে কাজ করতে হয়নি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এসব মন্ত্রণালয়ে তিনি যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বাক্ষর। স্বামী পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় উভয়ে দুর্নীতির দিক থেকে ছিলেন বেপরোয়া। দুর্নীতিলব্ধ অর্থে বাগিয়ে নিয়েছেন রাজধানীতে অবস্থান করার মতো লোভনীয় পোস্টিং। প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার দম্পতির দুর্নীতি যেন রূপকথার গল্প। তাদের আয়কর নথিতে যেসব সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ রয়েছে তা নামমাত্র। এর মধ্যে আতিকুল ইসলামের আয়কর নথিতে অনেক সম্পদ দেখানো হয়েছে ‘স্ত্রী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িসূত্রে প্রাপ্ত’ হিসেবে। আবার জাকিয়া সুলতানার আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে ‘স্বামীসূত্রে প্রাপ্ত’ সম্পত্তি হিসেবে। এভাবে দুর্নীতিতে তারা হয়েছেন একে অন্যের পরিপূরক।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ১৪৫ জনকে সুপারসিড করে ‘সচিব’ হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয় জাকিয়া সুলতানাকে। এই পদোন্নতির পেছনে দুর্নীতিবাজ দম্পতির লগ্নি ছিলো প্রায় ১০ কোটি টাকা। পোস্টিং নেন লোভনীয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং হলেও তিনি অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)র অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি: (কাফকো)র চেয়ারম্যান পদও রয়েছেন। প্রধান নির্বাহী হিসেবে তিনি সেখান থেকে মাসে ৪ লাখ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। কিন্তু কার্যত বিসিআইসি পরিচালনা করেন জাকিয়া সুলতানা। বিসিআইসি’র কাছে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নিয়মিত অর্থ আসে জাকিয়ার কাছে।
সূত্র মতে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে ৪টি করপোরেশন। বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। শেষোক্ত ‘বিসিক’ দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এ প্রতিষ্ঠানের চলমান ৬টি প্রকল্পে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে পিডি নিয়োগ দেন জাকিয়া সুলতানা। তার সহযোগিতা, শৈথিল্য ও পৃষ্ঠপোষকতায় বিসিকের কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ, বিসিক শিল্প পার্ক, টাঙ্গাইল, বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী, মুন্সিগঞ্জ, বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী, মুন্সিগঞ্জ, বিসিকের ৮টি শিল্প নগরী মেরামত ও পুনঃনির্মাণ, বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও প্রকল্পে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা এবং ঠিকাদার মনোনয়নেও রয়েছে জাকিয়ার অর্থের খেলা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম), পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদফতর (ডিপিডিটি), ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এবং প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় (বয়লার)। বোর্ড রয়েছে ২টি। বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড (বিএবি), বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ড (বিএসআরবি)। রয়েছে দুটি ফাউন্ডেশনÑ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন, ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমসিআইএফ)। এসবের মধ্যে শেষোক্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা স্বয়ং। দুর্নীতিপ্রবণ বিএসটিআইকে তিনি আরো দুর্নীতিপ্রবণ করে তোলেন। জাকিয়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের বড় বড় টেন্ডারের ডিল করেন স্বামী আতিকুল ইসলামের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে বলে জানা গেছে।
জাকিয়ার যত অবৈধ সম্পদ : জাকিয়া সুলতানা-আতিকুল ইসলাম দম্পতির অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ-সম্পদ বেশিরভাগই পাচার করে দিয়েছেন। দেশে যতটুকুন সম্পদ রয়েছে তা মোট পরিমাণের তুলনায় নগণ্য। রাজধানীর হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজায় জাকিয়া দম্পতির নামে-বেনামে অন্ততঃ ১৪টি দোকান রয়েছে। মিরপুর মধ্যপাইকপাড়ায় রয়েছে জাকিয়ার বাড়ি। যদিও এটি ‘বাপের বাড়ির সম্পত্তি’ বলে দাবি করেন জাকিয়া-আতিক উভয়ে। ঢাকায় রয়েছে অন্ততঃ এক ডজন প্লট ও ফ্ল্যাট। গাজীপুরে রয়েছে কয়েক শ’ বিঘা জমি। আতিক শিল্প এলাকা গাজীপুরের এসপি থাকাকালে এসব সম্পত্তি ‘ক্রয়’ করেন। জাকিয়া দম্পতি মালয়েশিয়ায় করেছেন সেকেন্ড হোম। তার এক ভাগ্নে এবং আতিকের ঘনিষ্ঠ ৩ বন্ধুর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেন। সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বাড়ি। মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ডহোম’ করেছেন আতিকের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে।
ক্ষতি ৪শ’ কোটি টাকা : কৃত্রিম সারসঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা
সরকারি ক্ষতি ৪শ’ কোটি টাকা : চলতি অর্থবছরে পিক সিজনে (ডিসেম্বর-মার্চ) ইউরিয়া সারের চাহিদা ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। চাহিদা মতো সারের যোগান দিতে জিটুজি আমদানিকৃত সারের মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে শেষ দিকে আমদানি মূল্য সময়মত পরিশোধ করতে না পারায় চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মাসে ১টি লটের বেশি (৩০,০০০ মেট্রিক টন) সরবরাহ দিতে সরবরাহকারীরা রাজী হচ্ছে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সার আমদানি করতে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সিসিইএ’র অনুমোদন চেয়ে গত ২ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। কিন্তু যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর ফলে যথাসময়ে সার আমদানি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সার আমদানি বিলম্ব হলে চলতি পিক সিজনে সার সংকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের বিলম্বিত সিদ্ধান্তকে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের পরিকল্পিত কালক্ষেপণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দুই আমলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলতে কালক্ষেপণ করছেন তারা।
সরকারের ৪শ’ কোটি টাকা ক্ষতি : কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিসিআইসি নিজস্ব কারখানা এবং আমদানিকৃত সার সরবরাহ করে। মোট চাহিদার ৮-১০ লাখ টন উৎপাদন করে বিসিআইসি। ১৬/১৭ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করে। সার আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত শিল্প মন্ত্রণালয়। সরকারের পারচেজ কমিটিতে সার ক্রয় প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী আমদানির প্রস্তাব আটকে দেন শিল্প সচিব। আমদানির সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু খোড়া যুক্তি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় সার আমদানির। ফলে ওই বছর ৯৪,২০১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কম আমদানি হয়। এতে টনপ্রতি সরকারের আর্থিক ক্ষতি ৪,৬২,৮০,০০৯.২৯ টাকা। বাংলাদেশী মুদ্রায় ক্ষতির পরিমাণ ৩শ’ ৯৮ কোটি ২৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সরকারি এ ক্ষতির জন্যও তদন্ত সাপেক্ষে জাকিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।ইনকিলাব