শিরোনাম
৫ দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএফ ভিসা দেওয়া না দেওয়া ভারতের নিজস্ব ব্যাপার : উপদেষ্টা হাসান আরিফ ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব নির্বাচন চান সম্পাদকরা রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য,হাসিনার ষড়যন্ত্রে একের পর এক অস্থিরতার চেষ্টা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাচ্ছেন বড় গ্রুপের প্রভাবশালীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘুষের সিন্ডিকেট,বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে দেনদরবারেও জড়িত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রস্তুতি, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা

বান্দরবানের আলীকদমে ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রথম নারী ডাক্তার হলেন সংচাং ম্রো

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৭২ দেখা হয়েছে

বান্দরবান:- বান্দরবানের আলীকদমে পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো সম্প্রদায় কে বলা হতো সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ম্রোদের মধ্যে এখন অনেকে অনেক দূর এগিয়েছেন। তেমনি দুর্গম এই প্রান্তিক জনপদ থেকে উঠে আসা প্রথম ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারী ডাক্তার হলেন সংচাং ম্রো।

ডাঃ সংচাং ম্রো’য়ের বাড়ি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ১নং সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড পাইয়া কারবারি পাড়ার কাইংপ্রে ম্রো ও তুমলেং ম্রো’র মেয়ে বলে জানা যায়।

সংচাং ম্রোর শুরুর পথটা এতোটা সহজ ছিলো না কখনো। মায়ের দীর্ঘদিনের অসুস্থতা ও বোনের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কারণে তার বাবা কাইংপ্রে ম্রো তার সন্তানদের মধ্যে একজনকে চিকিৎসক বানাবেন বলে মনে প্রাণে স্বপ্ন বুনেন। শৈশবে বোনের বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার কারণে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে জাগে তার। বাবার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সংচাং ম্রো’য়ের অধ্যাবসায়ের কারণে প্রান্তিক এলাকা থেকে প্রথম ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার হিসেবে উঠে আসেন। সংচাং ম্রো রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ১৭-১৮ সেশনে ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে ডাক্তারি শেষ করে তিনি রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করছেন বলে জানা যায়।

ডাঃ সংচাং ম্রো এই প্রতিবেদকে জানান, শৈশবে বাবার কাছেই আমার প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয়। জুমের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাবা আমাকে মাটিতে একেঁ বা কখনো কলা পাতায় একেঁ একটা একটা করে বর্ণ শিখাতেন। বাবা ভেবেছিলো পড়াশোনা করলে হয়তো ওষুধের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবো, সেই উদ্দেশ্যেই আমাদের পড়াশোনা করাতেন। কারণ আমাদের এক বোন চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছিলেন। তাছাড়া আমার মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। সেই সময় থেকে বাবা সব ধরনের নেশা সেবন ছেড়ে দিয়ে নিজেই অন্যের কাছে বাল্যশিক্ষা পড়তে শুরু করেন এবং আমাদের ও পড়ান। কিন্তু গ্রামে স্কুল না থাকায় বাবা আমাকে গ্রাম থেকে অনেক দূরে লামা মিশন নামে হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেন। পরে ১ বছর থাকার পর সেই হোস্টেল বন্ধ হয়ে গেলে ফাদার লুপির পরিচালিত আলীকদম পানবাজারে তৈদাং হোস্টেলে আমাকে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই হোস্টেলে থাকা অবস্থায় আমি চম্পটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করি ২০১২ সাল পর্যন্ত। ৫ম ও অষ্টম শ্রেণিতে আমি টেলেন্টপুলে বৃত্তি পাই।

ডাঃ সংচাং ম্রো আরো জানান, আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের ভালো শিক্ষক না থাকার কারণে আমাকে যেতে হলো সেন্ট যোসেফস্ হাই স্কুল এন্ড কলেজে। অভাব অনটনের মধ্যেও অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা ও সিস্টাররা আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসএসসি পরীক্ষা পর আমি হলিক্রস কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হয়। টাকার অভাবে সেই সময়ে ভর্তি হতে পারি নি, খুব কেঁদে ছিলাম। কিন্তু নমিতা সিস্টার আবার তার কলেজে আমাকে নিয়ে যান এবং কলেজ ফি আমাকে ফ্রি করে পড়াশুনা করার সুযোগ দেন। কলেজের অনেক শিক্ষক আমাকে ফ্রিতে পড়িয়েছেন। মেরি মার্গারেট সিস্টার তো আমার হাত খরচও মাঝে মধ্যে দিয়ে দিতেন। আমার যখন এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয় তখনো আমার হাতে টাকা না থাকায় আমি বাসায় যাইনি। কলেজে থাকা অবস্থায় ২ ভাই বোনকে পড়িয়েছি। সেই জমানো টাকা দিয়েই মেডিকেল ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। বাবা বলে ছিল বাসায় এসে একটা চাকরির পরীক্ষা দিতে। কিন্তু আমি বাবাকে বলে ছিলাম যতক্ষণ কোথাও আমার চান্স না হবে ততদিন আমি বাসায় ফিরবো না। ভর্তির পরীক্ষা দেওয়া ছিল আমার জীবনে আরও কঠিন। ঢাকায় থাকলেও হোস্টেল বন্দি হওয়াতে আমি ঢাকার কিছুই চিনতাম না। যেখানে আমার সহপাঠীদের বাবা এসে হলে পৌঁছে দিচ্ছে, সেখানে আমি একা একাই ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সবথেকে খুশির দিন ছিল সেইদিন, যেদিন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের রেজাল্ট পেয়েছি। এরপরের দিনেই আমি বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিই, প্রায় ৩ বছর পর আমি বাসায় যাই।

মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমাকে আর টাকার জন্য পিছনে তাকাতে হয়নি। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা স্যার, সুবর্ণা ভূমি ফাউন্ডেশন, বিএসএসবি আমাকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। আমাদের সিনিয়র বড় বোন-ভাইরাও আমাকে বোন্স, বই খাতা দিয়ে আমাকে সাহায্য করতেন। তিনি আরও জানান, আমি চাই পাহাড়ের মানুষ যেন চিকিৎসার অভাবে আর মারা না যায়। পাহাড়ের এখনও সু-চিকিৎসার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

আলীকদম ম্রো কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক থং প্রে ম্রো বলেন, সংচাং ম্রো আলীকদম উপজেলায় ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার। তার এই কৃতিত্ব ম্রোদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।

আলীকদম কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাত পুং মুরুং বলেন, আমাদের আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে প্রতিবছর সঠিক চিকিৎসার অভাবে বহু মানুষ মারা যায়। সংচাং ম্রো যদি আলীকদমে অবহেলিত ও সু-চিকিৎসা বিঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ালে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions