তৎপর আন্তর্জাতিক মহল

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪
  • ৮৭ দেখা হয়েছে

জাতিসংঘ মহাসচিব ম্যান্ডেট অনুসারে বাংলাদেশের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অবিচল সমর্থন দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র বেআইনি হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি ইইউ’র

ডেস্ক রিরোট:- ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ততা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশের গুলিতে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি, কয়েক শত শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ, কয়েক হাজার মানুষ আহত, অগ্নি সংযোগ, দেশব্যাপী ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেফতার ও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় চলছে। ইন্টারনেট বন্ধ এবং দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের সংঘাত-সংঘর্ষ ও হত্যা-নিপীড়নের প্রকৃত চিত্র না এলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে ভয়াবহ সচিত্র খবর প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশে কারফিউর মধ্যেই আন্দোলনসহ চলমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন নজরদারির মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে জাতিসংঘ মহাসচিব তার ম্যান্ডেট অনুসারে বাংলাদেশের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নিরস্ত্র মানুষকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি, কারফিউয়ে সেনাবাহিনীর টহলে জাতিসংঘের লোগোযুক্ত যানবাহন ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারী প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘আন্দোলনের সময়কার পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে মানবাধিকার লংঘনের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক পরিসরে চাপ বাড়ছে। এর কারণ, সরকার যেভাবে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা নিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে অভিযোগগুলো তুলছে, তার সপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণ এরই মধ্যে তারা সংগ্রহ করেছে। সরকারের উচিত সবকিছু ঢালাওভাবে অস্বীকার করার অবস্থান থেকে সরে আসা। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে যদি বিষয়টি ওঠে, আলোচনা হয়, এই কাউন্সিল যদি বাংলাদেশ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিশন গঠন করে, আর জাতিসংঘ যদি বিষয়গুলোর ওপর নজরদারির জন্য বিশেষজ্ঞ (র‌্যাপোর্টার) নিযুক্ত করলে সেটা সরকারের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’
জানা গেছে, গত কয়েকদিনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে বাংলাদেশিরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন। এমনকি সউদী আরবে কয়েক হাজার প্রবাসী শ্রমিক সমবেত হয়ে বর্তমান সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স না পাঠানোর শপথ পাঠ করেছেন। আরো অনেক দেশের প্রবাসী শ্রমিক ও বাংলাদেশ নাগরিকরা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব প্রচারণা ও বিক্ষোভ কারা করেছে, সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সতর্ক না হলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ভবিষ্যতে চাপ আরো বাড়তে পারে। তারা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নিরস্ত্র মানুষকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, দেশের ভেতরকার অভিযানে জাতিসংঘের লোগোযুক্ত যানবাহন ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে। আর সরকার স্বীকার না করলেও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। এগুলো জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গেছে।

জাতিসংঘ বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমাণ পেয়েছে : জাতিসংঘের মহাসচিবের অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিবিড় নজর রাখছে জাতিসংঘ। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে জাতিসংঘ মহাসচিব তার ম্যান্ডেট অনুসারে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। সংবাদ সম্মেলনে স্টিফেন ডুজাররিক প্রথমে বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করেন। শুরুতেই বিবৃতিতে তিনি সব রকম সহিংসতার দ্রুত, স্বচ্ছ এবং পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এর জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ডুজাররিক বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে আমার কাছে আপডেট আছে। আমি আপনাদের বলতে পারি যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি নতুন করে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার বিষয়ে অবহিত এবং তিনি শান্ত ও সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হাজারো তরুণ এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এ সময় ডুজাররিক বলেন, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ রাজধানী ঢাকায় এবং নিউ ইয়র্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনা পাঠানো শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আমরা মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের ভিতরে জাতিসংঘের চিহ্ন সম্বলিত কোনো যানবাহন আর ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতি আমরা পেয়েছি। আমরা এটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবারও বলতে চাই যে, জাতিসংঘে সেনা ও পুলিশ দিয়ে অবদান রাখা দেশগুলো শুধু তখনই জাতিসংঘ চিহ্নিত এবং জাতিসংঘের চিহ্ন সম্বলিত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে, যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের অধীনে তাদেরকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কোনো ম্যান্ডেটেড কাজ দেয়া হয় তখন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক তাকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিতে থাকলে বিরক্তি প্রকাশ করেন স্টিফেন ডুজাররিক। এর আগের দিন এক ব্রিফিংয়েও লাভলু আনছারী নামের ওই সাংবাদিককে ডুজাররিক তার প্রশ্নের মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিলেন।

এ পর্যায়ে অন্য একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট আছে। এসব নিয়ম লংঘনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে জবাবদিহিতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ডুজাররিক বলেন, এটা পরিষ্কার যে আমরা বাংলাদেশের ওপর এবং বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ওপর নির্ভর করি। তারা মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং এর সম্মানার্থে শান্তিরক্ষী মিশনগুলোতে কাজ করে চলেছেন। মুশফিকুল ফজল আনছারী নামের ওই সাংবাদিক জানতে চান, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেছেন, তার অফিস তাদের (বাংলাদেশের) তদন্তে সহায়তা করতে প্রস্তুত। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞজন এবং নোবেলবিজয়ীরা পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি জানিয়ে আসছেন। এর প্রেক্ষিতে মহাসচিবকে ব্যবস্থা নিতে কতটা তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন হবে? এ প্রশ্নের জবাবে ডুজাররিক বলেন, ম্যান্ডেন্টের অধীনে সবসময় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ মহাসচিব।

শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল জানান, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যেকোনো শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অবিচল সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় তারা। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

বেআইনি হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চায় ইইউ : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের ‘শ্যুট অন সাইট নীতি’ এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
জোসেপ বোরেলকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই লাওসে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের যোগ দিয়ে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করি। এ সময় সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের ‘শ্যুট অন সাইট নীতি’ এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাই। তিনি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হত্যা, সহিংসতা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার এবং সংঘটিত সম্পত্তির ক্ষতি নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও ছোট শিশুসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত এবং প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের অসংখ্য ঘটনার জন্য অবশ্যই পূর্ণ জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া হাজার হাজার লোকের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার করতে হবে। আমরা এ সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব। ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের মৌলিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে সব ধরনের মানবাধিকারকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা হবে বলে আশা করি।

যুক্তরাজ্য-জার্মানি-কানাডা-অস্ট্রেলিয়া-ভারত : বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পৃথক দুটি প্রস্তাব এনেছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত দুই সদস্য রুপা হক ও আপসানা বেগম। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে যে গুলি রক্তাক্ততা চলছে, তা নিয়ে সম্প্রতি রোম, প্যারিস, ম্যানচেস্টার ও লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে রুপা হক গত ২৫ জুলাই পার্লামেন্টে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য সরকারের ভূমিকা দরকার। এর আগে আপসানা বেগম ২২ জুলাই বাংলাদেশে প্রাণহানির ঘটনায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে প্রভাবশালী স্বতন্ত্র এমপি জেরেমি করবিনসহ ২২ জন ব্রিটিশ এমপি স্বাক্ষর করেছেন। ওই প্রস্তাবের জবাবে পার্লামেন্টে লেবার সরকারের মুখপাত্র লুসি পাওয়েল এমপি জানান, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এতো প্রাণহানি অগ্রহণযোগ্য। তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ হালনাগাদ তথ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপস্থাপনের নিশ্চয়তা দেন।

গতকালও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি রুপা হকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ‘সমতা ও ন্যায়ের জন্য ছাত্র আন্দোলন’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সের গ্র্যান্ড কমিটি হল রুমে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে সোমবার এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশি কমিউনিটির সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। এ সময় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রুপা হক বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা ভালো না, মানুষ চিন্তা করছে কি হচ্ছে, আমরা কিছুই জানতাম না, কারণ ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা এবং ক্র্যাকডাউন স্বাধীনতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে, ১৫০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্ল্যাকআউট করে দেয়া হয়েছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন এক বার্তায় এ আহ্বান জানায়। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আইনের শাসন সমুন্নত রাখা এবং মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগকারী অপরাধীদের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেয় অস্ট্রেলিয়া। সমাবেশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারসহ সর্বজনীন মানবাধিকারের প্রতি অস্ট্রেলিয়া সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।

ঢাকায় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ওপার বাংলার নির্যাতিতদের জন্য বাংলার দরজা খোলা রয়েছে। মমতার এমত বক্তব্যে বাংলাদেশ দিল্লিকে চিঠি দিয়ে অসন্তোষের কথা জানায়। অতঃপর দিল্লিও মমতার বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছে, নয়াদিল্লির প্রত্যাশা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিগগিরই শান্তি ফিরে আসবে। গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার ২৩ জুলাই এক এক্স- পোস্টে (সাবেক টুইটার) জানান, তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির বিরুদ্ধে সহিংস নিপীড়নকে ভুল পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এতে অস্থিরতা বাড়বে।’
জার্মান সরকার ২৫ জুলাই বিবৃতিতে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনাগুলোর তদন্ত এবং তাতে জড়িত এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের তাগিদ দেয়। একই দাবি জানিয়েছে কানাডা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ঊর্ধ্বতন পরিচালক ডিপ্রোজ মুচেনা ২৫ জুলাই বিবৃতিতে বলেছেন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সক্রিয় পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিক্ষোভ দমনে বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী উভয় ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

ব্রাসেলসভিত্তিক ক্রাইসিস গ্রুপের পরিচালক পিয়েরে প্রকাশ গত ২৫ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ধুঁকছে, তার ভেতর সরকার নিজেই এই আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসহ সবার সঙ্গে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পিয়েরে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ভারতকেও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। ক্রাইসিস গ্রুপ একই সঙ্গে সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions