ডেস্ক রির্পোট:- বাবা মিল্লাত হোসেন আলাদা সংসার পেতেছেন। ছোট্ট বোন লামিয়া খাতুন ও মা সাজেদা বেগমকে নিয়ে সংসার মো. শাহজাহানের (২২)। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চলতি মাসের শুরুতে রাজধানীর মহাখালী এসে কারখানায় চাকরি নেন তিনি। বসবাস মহাখালীর সাততলা বস্তির নিকেতন বাজার গেট এলাকায় টিনশেড ঘরে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই দুপুরে বাসা থেকে খাবার খেয়ে কর্মস্থলে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন শাহজাহান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে মারা যান তিনি।
শোকাহত পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর ৪১ ঘণ্টা পর সন্তানের লাশ পেয়েছেন। এজন্য ঘুরতে হয়েছে তিন থানা– শাহবাগ, তেজগাঁও ও বনানী। তাও এক-দু’বার নয়, ময়নাতদন্তের পর সাত চক্কর শেষে মেলে লাশ। এর পর ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ভালুকাপাড়া গ্রামের বাড়ি নিয়ে রাতে দাফন করেন স্বজনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢামেক মর্গে শাহজাহানের মায়ের সঙ্গে আসা এক স্বজন তাদের দুর্ভোগের বর্ণনা দেন। তিনি জানান, মৃত্যুর পরদিন বুধবার সকাল ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় জিডি শেষে তাদের ঢামেক পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। সেখানে তিন-চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বনানী থানায় পাঠায়। বনানী থানা থেকে দুপুর ২টার দিকে পাঠানো হয় তেজগাঁও থানায়। সেখান থেকে আবারও বনানী থানায় যেতে বলা হয়। বনানী থানায় গেলে এক এসআই স্বজনের সঙ্গে ঢামেক হাসপাতালে আসেন। তিনি কাগজপত্র ঢামেক ফাঁড়িতে রেখে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চলে যান এবং শাহবাগ থানায় যোগাযোগ করতে বলেন।
রাতেই স্বজনরা শাহবাগ থানায় গেলে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বনানী থানায় যেতে পরামর্শ দেয়। এ পর্যায়ে বনানী গেলে তারা আবারও শাহবাগ থানায় যেতে বলে। এবার এখানে আসার পর শাহবাগ থানার ওসি বলেন,আপনাদের কাজ হয়ে যাবে, ঢামেকে চলে যান। পরে ঢামেক ফিরে স্বজনরা দেখতে পান, তাদের সন্তানের লাশ দেওয়ার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ওই স্বজনের দাবি, লাশ নিতে বুধবার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছিল। সারাদিন বসিয়ে রেখে ৬ হাজার টাকা দিতে হয়। বৃহস্পতিবারও অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়। গোসল শেষে দাফনের জন্য প্রস্তুত করে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় গ্রামের পথে রওনা দেয় শাহজাহানের লাশবাহী গাড়ি।
সন্তানের লাশের পাশে বসে মা সাজেদার আর্তনাদ, ‘গুলি আমার সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। লাশ পেতেও প্রতি মুহূর্তে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। এমন ভোগান্তি যেন শত্রুকেও পোহাতে না হয়।’ স্বজনরা জানান, ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে ধোবাউড়া থেকে ছুটে আসেন সাজেদা বেগম। আশা করেছিলেন, সুস্থ ছেলেকে নিয়ে ছাড়বেন অভিশপ্ত শহর। কিন্তু ছেলের লাশ নিয়ে এখন রিক্ত হাতে বাড়ি ফিরছেন হতভাগা মা।
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শাহজাহানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা শাহবাগ এলাকায় ঘটেনি। মহাখালী নাকি তেজগাঁও, স্বজনরা পরিষ্কার বলতে পারছিলেন না। এজন্য তাদের অন্যান্য থানায় ঘুরতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন পরিস্থিতিতে অন্যান্য থানা থেকে কর্মকর্তা আসতে না পারায় আমরা অনেক লাশের সুরতহাল করে দিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ঘটনাস্থল সংলগ্ন থানাকেই কাজটি করতে হয়েছে। শাহবাগ থানার একজন কর্মকর্তা ঢামেকে দায়িত্বে থাকেন। আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুসহ এমন অসংখ্য ঘটনা আসে, সব তাঁকেই দেখতে হয়। ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীরচর, ধামরাই, সাভারের মতো দূরের থানাগুলোর ঘটনা আমরাই করে দিই।
সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহজাহানের বুকের মাঝবরাবর একটু নিচে দুটি এবং বাঁ হাতের কবজির উপরিভাগে একটি গুলি লেগেছে। হাসপাতালে ভর্তির পর অস্ত্রোপচারের সময় ৩০টি সেলাই দিতে হয়। পিঠের বাঁ পাশের নিচে কয়েকটি ছিদ্র রয়েছে।সমকাল