৬ বছরের রিয়াকে বাঁচানো গেল না

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪
  • ৭১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ। স্ট্রেচারে কম্বলে ঢাকা তার নিথর দেহ। শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল শিশুটি। পাঁচদিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থেকে গতকাল মারা যায় সে। হাসপাতালে আসার পর থেকে তার আর জ্ঞান ফেরেনি। এ কারণে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করাও সম্ভব হয়নি।
সন্তানের লাশ স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার সময় কথা বলতে পারছিলেন না শিশুটির বাবা দীপক কুমার গোপ। শোকে আকুল দীপক কোনো কথাই বলতে চাইলেন না। শুধু বললেন- আমার মেয়েকে কেন মারা হলো। আপনারা কি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? কথা বলে আর কী হবে?

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। তাকে নিয়ে বাবা-মায়ের বড় স্বপ্ন ছিল।
তাদের বিয়ের দীর্ঘদিন পর জন্ম হয় রিয়ার। সারাক্ষণ চঞ্চলতায় ঘর আলো করে রাখতো শিশুটি। গুলিতে আহত হওয়ার পর থেকে শিশুটির মা নাওয়া- খাওয়া ছেড়ে পাগলপ্রায়। দীপক গোপ বার বার বলছিলেন, মেয়ের লাশ নিয়ে কীভাবে এখন মায়ের কাছে যাবো।
শিশুটির স্বজনরা জানান, নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটিতে তাদের বাড়ি। শুক্রবার বিকালে খেলার জন্য বাড়ির ছাদে যায় রিয়া। এ সময় কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে আহত হয় সে। চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বুধবার সকাল ৯টায় মারা যায় শিশুটি।

দীপক কুমার গোপ বলেন, আমার তো সব ছিল। কী হবে এখন? কার কাছে চাইবো বিচার। অনেক সাধনার ধন ছিল আমার। বিয়ের দীর্ঘদিন পরে আমার সন্তানটি হয়। আর এই সন্তানটির লাশ আজ আমার কাঁধে, মর্গে মর্গে ঘুরতে হচ্ছে। ঘর মাতিয়ে রাখতো বাচ্চাটি।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের সংঘাতে নিহতদের মরদেহের অপেক্ষায় এখনো রয়েছেন স্বজনরা। সেখানে অপেক্ষারতরা আর্তনাদ করছেন। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য থানায় থানায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। আবার কেউ এক থানা থেকে আরেক থানায় ঘুরছেন।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন শাজাহান (২২)। তিনি বাসায় ফেরার পথে মহাখালীতে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে তাকে ভর্তি করে নেয়া হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত শাজাহানের বোন ফাতেমা বলেন, ভাই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। শুক্রবার অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে মহাখালীতে পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরে তাকে পরিচিতরা হাসপাতালে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাই মারা যান। সকাল থেকে থানায় থানায় ঘুরছি। এক থানা থেকে আরেক থানায় পাঠায়। এই পর্যন্ত তিন থানায় ঘোরা হয়ে গেছে। আমার ভাই মহাখালীতে থাকতো আর আমরা শ্যামলীতে থাকি। ভাইয়ের মরদেহটি মর্গে রাখা আছে। এগুলো কীভাবে সহ্য করবো। ভাইয়ের পেটে ও হাতে গুলি লেগেছিল। ঢামেকের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। থানা থেকে সই দিলে ভাইয়ের ময়নাতদন্ত করবে। কিন্তু কখন কি হবে কেউ সঠিক বলছে না। এদিকে শাজাহানের মা মর্গের সামনে শোকে পাথর হয়ে বার বার বুকে চাপড়াচ্ছিলেন। তিনি বারবার বলছেন, আমার সব শেষ। কি হবে আমার? কোথায় পাবো এর বিচার।

ঢামেকের মর্গে থাকা শাহবাগ থানা সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার অজ্ঞাতনামা আট জনের মরদেহ দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমাদের কাছে ছবি এবং ডিএনএ প্রোফাইল রয়েছে। কোনো স্বজন আসলে সবকিছু মিললে পরিচয় শনাক্ত করতে পারবো।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, বুধবার সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত দুই জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। প্রথম আলো

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions