শিরোনাম
ভ্যানে লাশের স্তুপ করা ভিডিও আশুলিয়া থানা রোডের নির্বাচন আয়োজনে অযৌক্তিক সময় নষ্ট করবে না অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদে এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি নয়, হেফাজতসহ ৬ ইসলামি দলের প্রস্তাব সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া উপায় নেই: আলী রীয়াজ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা কলেজের হিসাব শাখায় রহস্যজনক আগুন! রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি আবারো বেড়েছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ-বিপনন খাগড়াছড়িতে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ বেতবুনিয়া থেকে ধাওয়া করে রাউজান এনে মারা হলো শ্রমিক লীগ নেতাকে ছাত্র–জনতার ধাওয়া খেয়ে পোশাক খুলে পালিয়ে গেল আনসার সদস্যরা

হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আহতরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪
  • ৩১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আরিকুল ইসলাম আরিফ। এগারো বছর বয়স। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। পাশে তার চার বছরের
বোন সিনহা ভাইকে খাইয়ে দিচ্ছিল। মা আয়েশা বেগমের চোখেমুখে হতাশা। আরিফের বাবা একজন গাড়িচালক এবং মা বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। গত শুক্রবার দুপুরে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিতে আহত হয় আরিফ। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসার জন্য ভর্তি দেয়া হয়। আরিফ ঢামেকের জরুরি বিভাগের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাধীন। আরিফ ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে জানায়, শুক্রবার দুপুরের দিকে আমি বাসা থেকে খেলার জন্য বাইরে বের হই।

এরপর রামপুরার পলাশবাগের মোড়ে আসলে পেছন থেকে হঠাৎ করে আমার পায়ে গুলি লাগে। তখন আমি চিৎকার দেই। পরে আশেপাশে থাকা লোকজন আমাকে ধরে একটা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে। এখন পায়ে খুব যন্ত্রণা হয়। ভয় পেয়েছি অনেক।

আরিফের মা আসমা বেগম বলেন, শুক্রবার খেলার জন্য রামপুরার পলাশবাগের মোড়ে বের হয়েছিল। সেখানেই আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। শুক্রবার ২টার দিকে পায়ে গুলি লাগে। পরে পাশে থাকা লোকজন বেটারল্যাব হাসপাতালে নিয়ে যায় এরপর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে। আমার দুই সন্তান। ছোট মেয়েটা ওর ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে অনেক ভয় পেয়েছে। ওর কান্নাই থামছে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শরীর থেকে অনেক রক্ত গেছে আমার ছেলের। এই কথা আমি কার কাছে বলবো, কে করবে এর বিচার? এমন গোলাগুলিতে আমরা কেউ নিরাপদ ছিলাম না। আমরা তো গরিব নিরীহ মানুষ, খেটে খাই। এখন যে অবস্থা আমার ছেলেকে ভালোমন্দ খাওয়াতে পারছি না। ওর শরীর থেকে যে রক্ত গেছে, এখনো রক্ত বের হচ্ছে। কখনো বুঝিনি এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হবে। ছেলেটা আমার ব্যথায় অনেক কান্নাকাটি করে। আমি মা হয়ে কীভাবে সহ্য করি।
শুধু আরিফ নয়, সহিংসতার ঘটনায় অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের অনেকে পথচারী সাধারণ মানুষ। সহিংসতার শুরু থেকেই চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন তারা।

ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অবজারভেশন ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের চার নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছেন গণমাধ্যমকর্মী আমিনুল ইসলাম ইমন (৪০)। হাতে পায়ে গুলিবিদ্ধ। হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন তিনি। আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় আমি মতিঝিল অফিস থেকে বাসার দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হই। আমার গলায় আইডি কার্ড ছিল। এবং প্রেস লেখা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট গায়ে ছিল। এদিকে ঝামেলা থাকায় মালিবাগ মোড় থেকে আমি খিলগাঁও ফ্লাইওভার হয়ে কেরানীগঞ্জ ফেরার চিন্তা করি। পরে মালিবাগ মোড়ে আসতে হঠাৎ পুলিশের গুলি। গুলি করার পরে পাশে থাকা কয়েকজন রিকশাচালক ছিল তারা কয়েকজন সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায়। আমিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যাই। আমার শরীরে যখন প্রেসের জ্যাকেটটা দেখলো তখন তাদের মুভমেন্ট চেঞ্জ হয়ে গেল। তখন তারা দ্রুত এম্বুলেন্স এনে মেডিকেলে পাঠানোর কথা বললো। এম্বুলেন্স আসতে আসতে আমার অবস্থা খারাপ, ঝাঁঝরা শরীর থেকে প্রচুর রক্ত যাচ্ছে। আমাকে কিছু মানুষ টেনেহিঁচড়ে একপাশে অন্ধকারে নিয়ে গেল। এরপর আধাঘণ্টা বা পৌনে একঘণ্টা পরে একটা এম্বুলেন্স আসলো। তাতে টেনেহিঁচড়ে ওঠানো হলো। হঠাৎ উরাধুরা গুলিতে আমার শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেন কি জন্য কিছু বুঝতে পারলাম না। সেখানে কাউকে দেখা যাচ্ছিলো না, শুধু ডিবি’র সাদা গাড়ি থামানো। এরপর যখন গুলি পড়লো তখন দেখি তাদের গায়ে লেখা পুলিশ। সিভিল পোশাকে তারা পুলিশ লেখা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিল। এরপর আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে। সেখানে একজন চালক ও পথচারীকে বলি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য। তারা বলছে, স্যার আমরা তো নিতে পারবো না। তখন আমি ওদেরকে জাপটে ধরে বলছি, তোরা আমার ধর্মের ভাই, আমাকে একটু বাঁচা’ আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে।

তিনি বলেন, আমার কোমরের নিচের অংশ, বাম হাত গুলিতে পুরো ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছে, এভাবে মানুষ মারে। এটা একটা ভয়ানক দৃশ্য ছিল, কতো লোক যে পড়ে গেছে সেটি বলতে পারবো না। অন্যদের পড়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলো শুধু চোখে ধারণ করেছি। একদিকে আমার রক্ত যাচ্ছে আরেক দিকে শরীর অবশ হয়ে আসছে। আমার কার্ড, সেফটি পোশাক সব ছিল, এমনকি পত্রিকাও ছিল গাড়িতে। মতিঝিল অফিস থেকে ডিউটি শেষ করে পরিস্থিতি ভালো না বলে আগেই বাসার দিকে যাওয়ার জন্য বের হই। আমার এই শরীর দেখে চিকিৎসকরাও ভয় পাচ্ছে। শরীরের ব্যথায় ঘুমাতে পারছি না। আমার যদি কিছু হয়ে যায় আমার দুই সন্তানের কি হবে? ওরা কোথায় যাবে? কে করবে এর বিচার। এখানে এসেও আতঙ্ক অনুভব করছি।

অটো রিকশাচালক সুজন (১৮)। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। তার বোন লাকি আক্তার বলেন, শনিবার দুপুরের দিকে রায়েরবাগে অটোরিকশা রেখে বাসার দিকে আসার সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। আমরা পাঁচ-ভাইবোন। আমার দুই ভাইয়ের আয়ে সংসার চলে। ছোট ভাই গার্মেন্টসে চাকরি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে আমাদের পরিচিত লোকরাই মেডিকেলে নিয়ে আসে। আমার ভাইয়ের পিঠ দিয়ে পুলিশের করা গুলি ঢুকে সামনের দিকে বের হয়। আমাদের বাসা পলাশপুরে। বাড়িতে বাবা-মা আছে। তারা কাজ করে না। ভাই শুধু এতটুকু বলছে, আসার সময় পুলিশ গুলি করেছে। এরপর আর কিছু বলতে পারেনি। আমার ভাই কোনো দল করে না, বাসায় আসার সময় আমার ভাই আহত হয়। অনেক টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। অনেকে সাহায্য করছে। পাঁচ ব্যাগের মতো রক্ত দেয়া হয়েছে। এক একটা ইনজেকশন দশ হাজার টাকার মতো লাগছে। এখনো কেনা হয়নি। ওর অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। এর আগে আরেকটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল সেখান থেকে ফেরত দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সুস্থ হলেও সে কোনো ভারী কাজ করতে পারবে না বলে চিকিৎসক জানায়।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions