ডেস্ক রির্পোট:- নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এটা জাতির প্রতি একটা মস্ত অপমান। এ অপমান আমাদের সহ্য করা উচিত না। বিচার বিভাগের প্রতি আবেদন জনাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাঁচাগুলো সরিয়ে ফেলেন। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালতে অর্থ আত্মসাতের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এদিন ড. ইউনূসসহ ১৪ জন আদালতে হাজিরা দেন। হাজিরা শেষে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ভালো লাগলো আজকে আমাকে খাঁচার মধ্যে নেয়নি। এটার ব্যবহার থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। এটা সবাইকে জানিয়ে গেলাম। আপনারাও (সাংবাদিকরা) বারে বারে লেখেন যেন এটা হয়। এটা মানবতার প্রতি অপমান।
কেন মানুষকে পশুর মতো খাঁচায় ভরে রাখবে? তিনি বলেন, এটা আমার বিষয়ে বলছি না। খাঁচাটাই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া উচিত। কারও ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে মামলা, বিচার শেষ করতে চাচ্ছে। এটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছি। কিছু একটার শিকার তো হচ্ছি। এটা পরিষ্কার। এটাকে প্রতিহিংসা বলেন, হিংসা বলেন, বিদ্বেষ বলেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। এর ব্যাকগ্রাউন্ডে কী আছে, কীভাবে আছে, সেটা দেশের মানুষ সবাই বোঝেন, তারা বুঝে নেবেন।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জন আদালতে হাজিরা দেন। মামলার বাদী সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হন। এরপর অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলাটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। অন্যদিকে, দুদকের প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল মামলাটির সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতে শুনানি করেন। তিনি বলেন, মামলাটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও সাক্ষ্য দেয়া যায়। এদিকে আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আবেদন মঞ্জুর করে প্রথমে ২৩শে জুলাই দিন ধার্য করেন। সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সংক্ষিপ্ত সময় হওয়ায় এতে আপত্তি জানান ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানোর আবেদন করেন। এতে আপত্তি জানান দুদক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। এ সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতকে বলেন, আপনার আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। অন্যান্য মামলায় লম্বা তারিখ দিলেও এটা কেন সংক্ষিপ্ত হবে। তখন বিচারক তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার আদালতে একটা মামলার তারিখ তিনদিন পরও পড়েছে। পক্ষপাতমূলক বিচারের অভিযোগ আগে কেউ কখনো করেনি। এরপর ড. ইউনূসের আইনজীবী আদালতে দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে আদালত আগামী ৫ই আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে ১২ই জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করে আদালতে চার্জ গঠন করে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলার অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এ ছাড়া এডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, এডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলা করেন। চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। এ মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। পরে চার্জশিটে নতুন একজন আসামির নাম যুক্ত হয়। ২রা এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করে মামলার বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন।