শিরোনাম
বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হাসনাত আব্দুল্লাহকে আহ্বায়ক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি যে পর্যবেক্ষণে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় বিচারপতি সিনহাকে ‘কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি দেশ বা জাতি তৈরি হয়নি’ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের আলটিমেটাম পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেন আন্দোলনকারীরা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান এখন লন্ডনে, আমিরাতে আরও ৩০০ বাড়ির সন্ধান শাহবাগে না, সভা-সমাবেশ করতে হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বান্দরবানে ভিক্টরী টাইগার্সের ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন পাহাড়ে ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষীরা, কমেছে মিষ্টি কুমড়ার ফলন রাঙ্গামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান

‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪
  • ১০৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গতকাল মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলের তালা ভেঙে বের হন। মিছিলে যোগ দেন ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরাও। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

গতকাল মধ্যরাতে একযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ ওঠে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে কাটা পাহাড় সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক ছাত্রীসহ দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

গতকাল রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা যখন বের হই, তখন হলের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। আমরা দারওয়ান চাচাকে গেট খুলে দিতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পরে আমরাই তালা ভেঙে বেরিয়ে পড়ি।’ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল, শামসুন নাহার হল থেকেও ছাত্রীরা বেরিয়ে এসেছেন বলে তিনি জানান। আন্দোলনকারীরা জানান, সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের অবমাননা করা হয়েছে।

বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

এর আগে কোটা সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে স্মারকলিপি দেয়ার পর আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করব। আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন আরো কঠিন হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সেটা আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। আমাদের এক দফা দাবিই বহাল থাকবে।’

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর অজ্ঞাতনামা মামলা দেয়া হচ্ছে। এর আগে পুলিশকে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছি; এবার আরো ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। যদি মামলা তুলে নেয়া না হয় আমাদের কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এর দায় নিতে হবে।’

এর আগে গতকাল বেলা ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। সেখানে প্রতিনিধি দলে ছিলেন আরিফ সোহেল, সারজিস আলম, নাহিদ ইসলাম, আব্দুল হান্নান মাসউদ, আসিফ মাহমুদ, রাশিদুল ইসলাম রিফাত, আব্দুল কাদের, মো. মাহিন সরকার, আশিক, হাসিব আল ইসলাম, সুমাইয়া জাহান ও মেহেরুন নেসা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বেলা ১১টার আগে থেকে ছোট ছোট দলে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

দুপুর ১২টায় তারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু করেন। এতে ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হন। এ সময় মিছিলটি বঙ্গভবনের উদ্দেশে এগিয়ে যেতে থাকলে বেলা ১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে তাদের আটকানোর জন্য ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান। এরপর গণপদযাত্রা নিয়ে শিক্ষা ভবন এলাকা অতিক্রম করে সচিবালয়ের কাছে পৌঁছে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সচিবালয়ের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়।

সরকারের প্রতিক্রিয়া: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিষয়টি এখন আদালতে রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে, আমাদের কিছু করার থাকে না। এটা বাস্তবতা।’ আর এ বাস্তবতা আন্দোলনকারীদের মানতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সদ্যসমাপ্ত চীন সফর নিয়ে গতকাল গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন। তাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সব ফেলে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি পেরিয়ে, ঝড়বৃষ্টি সব মোকাবেলা করে যুদ্ধ করে এ দেশে বিজয় এনে দিয়েছিল। বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই তো আজ সবাই উচ্চ পদে আসীন। আজ গলা বাড়িয়ে কথা বলতে পারছে। তা না হলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে থাকতে হতো।’

কোটা প্রসঙ্গে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ: এদিকে গতকাল সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। ২৭ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর আগে ১১ জুলাই রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করা হয়। সেখানে সব কোটা বজায় রেখে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করলে সরকার কোটার হার পরিবর্তন বা বাড়াতে-কমাতে পারবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। আদালত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, ‘২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া রায় ও আদেশ, যেটি ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হলো। এছাড়া জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি–ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ যদি অন্যান্য থাকে, তাদের ক্ষেত্রে কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেয়া হলো। প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণীর ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন, অনুপাত বা শতাংশ কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ের পর নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তারা কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার চার দফা থেকে দাবি এক দফায় নামিয়ে আনেন আন্দোলনকারীরা। তাদের এক দফা হলো সব গ্রেড থেকে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল এবং অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করতে হবে।

ছাত্রলীগের তিন নেতার পদত্যাগ

ছাত্রলীগের তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ এবং আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম। তারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বণিক বার্তা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions