কোটা ইস্যুর সমাধান আদালতে, আমার বাসার পিয়ন এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক–সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪
  • ৫৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই চূড়ান্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড হলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে রোববার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে নাকি তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, পিএসসি’র প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। দুর্নীতির প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার বাসার এক পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক যাকে বের করে দেয়া হয়েছে।

চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পরে কোর্ট যখন কোনো রায় দেয় সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারা তো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কি তারা চিনবেন না। বা একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে…। একটা সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নাই। কোনো জ্ঞানই নাই।

ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে, তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজ হয় সেটা কি তাদের জানা আছে? ধারণা তো দেখি না। তিনি আরও বলেন, যখন আদালতে চলে গেল, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালি বিধিও বলে না। কিছুই না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই। রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ করে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত তোলা, গাড়ি ভাঙচুর, আক্রমণ করতে যায়, তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার নেই। কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দেখা উচিত ছিল যে কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধা কার কতো, সেটা পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে, লিখিত পরীক্ষায়, তারপর ভাইভা হয়। সেই সময় যেটা সেটা বাস্তবতা তো যদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয় সেই পাবে। আর সবসময় সব কোটা পূর্ণ হয় না। যেটা বাকি থাকে তা তালিকা থেকেই দেয়া হয়। অনেক চাকরিতে মেধার তালিকা থেকে দেয়া হচ্ছে। এ নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা অগ্রাধিকার পাবে, এটা দিতে হবে।

আগের বারের কোটা বিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এ ধরনের আন্দোলন, শুধু আন্দোলন না, যে সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছিল। আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতর বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিলো। এ সমস্ত দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা। তিনি বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন, ফরেন সার্ভিসে দুই জন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চার জন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম যে কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তী থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হলো সব বন্ধ করলাম। বন্ধ করার পর ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনোদিন ভাবেনি। এমনকি কোথায়ও পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম সচিব আমি করি। ডিসি, এসপি, ওসিসহ সমস্ত জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করবো, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? এই বড় কথাগুলো না বলতো, কোথাও না কোথাও চাকরি করতো। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেসব মানুষের কি কোনো অধিকার থাকবে না? সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা নেন তাহলে, কোন কোন জেলা, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি বা প্রশাসন বা কোথাও না। ৪২ বিসিএসে বিশেষ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে ভালো লাগে না: পাকিস্তান আমলের বাঙালিরা যে সমস্যার সম্মুখীন হতো তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েরা তো সেগুলো দেখেনি। ১৫-২০ বছর আগের কী অবস্থা ছিল সেটাও সকলে জানে না। বিএনপি’র আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজি-সেশনজট, দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের ছিল না। আজ সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সকলে ফটাফট সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করে আন্দোলন করে। এ মোবাইল ফোন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে কার হাতে ছিল? মোবাইল বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। অনগ্রসরদের সুবিধা দেয়ার কথা সংবিধানে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কি সংবিধানটা পড়ে দেখছে কখনো? আর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? মুক্তিযোদ্ধারা জীবনে কষ্ট করেছে। পঁচাত্তরের পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিচয় দিতো না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনা সবকিছু মুছে ফেলা হয়েছিল। মনে হয়েছিল পাকিস্তানিদের প্রদেশ হয়ে গেছি আমরা। সেইখান থেকে বাংলাদেশ ফিরে এসেছে। জয়বাংলা ফিরে এসেছে। সাতই মার্চের ভাষণ ফিরে এসেছে। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে ভালো লাগে না! মানে গায়ে জ্বর আসে!

আমার বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক: দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাসায় কাজ করে গেছে পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। এটা বাস্তব কথা। কী করে বানালো এই টাকা। যখন আমি জানছি, তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা তো হয়। তিনি বলেন, ধরার পর এগুলো চোখে আসে। তাছাড়া তো হয় না। যখনই ধরা পড়ে তখনই আমরা ব্যবস্থা নেই। এটা এক ধরনের মানসিকতা। আরেকটা কথা, সারাবিশ্বেই যে দেশটায় অর্থনীতিতে উন্নতি হয়, সেখানেই এ ধরনের কিছু অনিয়ম হয়, কিছু লোকের হাতে চলে যায় কিছু টাকা-পয়সা। তারা তো অপেক্ষা করে থাকে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। সরকার কঠোর হওয়ার কারণেই দুর্নীতিবাজরা ধরা পড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এভাবে অভিযান করেনি। এর আগে জঙ্গিবাদমুক্ত করেছি। দুর্নীতি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এসব জঞ্জাল সাফ করতে হবে। নানা খাতে দুর্নীতির চিত্র সামনে আসছে। ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিষয়ে অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজদের ধরলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা বিশ্বাস করি না। আমার দায়িত্ব, অনিয়মগুলো ধরে দেশকে একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। দুর্নীতি নিচের দিকে বেশি হচ্ছে।

তাদের তো চাকরি করার কোনো অধিকারই থাকবে না: ফাঁসকৃত প্রশ্ন কিনে যারা বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাস করেছেন, তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে? এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ বা ২০০৩ সালের দিকে, বিএনপির সময়। বিএনপি’র আমলে যে পরীক্ষা হতো, চাকরি হতো এটা কিন্তু কোনো পরীক্ষা-টরীক্ষা না। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো, আর সেই তালিকাই (চূড়ান্ত) হতো। তৎকালীন বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে ঢাকা কলেজে পরীক্ষা হয়। একটি বিশেষ কামরা তাদের জন্য রাখা হয়, যেখানে বসে তারা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ঢোকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অনিয়মগুলো তো তখন থেকেই শুরু। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এসব অনিয়ম বন্ধ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে ওখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের পরে এই কোটা আন্দোলন-টান্দোলন হওয়ার পর এই গ্রুপটা আবার কীভাবে যেন জায়গা করে ফেলে, যেটা এখন ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, অনেক সময় এগুলো ধরতে গেলে অনেকে বলে যে এগুলো ধরলে ভালো হবে না, ইমেজ নষ্ট হবে। আমি এসব কথায় বিশ্বাস করি না। কিসের ইমেজ নষ্ট হবে? অন্যায়-অবিচার যে করবে, তাকে আমি ধরবোই। তাতে যা হয় হোক আমি পরোয়া করি না। তাদের ধরতেই হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এগুলো চলতেই থাকবে। এটা যাতে আগামীতে চলতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থাটা নেয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁস আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা জিয়ার আমলে শুরু হয়েছে, আর খালেদা জিয়া এসে তো আরও একধাপ বেশি করেছে। তখন তো তালিকা আসতো। আর যা তালিকা তাই হতো। অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ ছিল না। করলে তারা বেঁচে থাকতে পারবে না। এই তো ছিল বাংলাদেশের অবস্থা। সেটা ভুলে গেলে চলবে?

যারা প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন, খুঁজে বের করা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থা নেবো না কেন? তাদের তো চাকরি করার কোনো অধিকারই থাকবে না। কিন্তু সেটা খুঁজে দেবে কে? যদি ওরা (প্রশ্নফাঁসকারীরা) বলে যে ওমুকের কাছে বিক্রি করেছিলাম, সেটা প্রমাণ করতে পারলে দেখা যাবে। ঘুষ যে দেবে, আর ঘুষ যে নেবে উভয়েই অপরাধী। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আর যারা কেনে, তারা দু’জনেই অপরাধী। কিন্তু এটা বের করবে কে? সাংবাদিকরা চেষ্টা করে বের করে দিক, ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

সমালোচনায় কিচ্ছু যায় আসে না, অভ্যস্ত হয়ে গেছি: চীন সফর নিয়ে সমালোচনায় কিচ্ছু যায় আসে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দেই না। আমি এটায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যারা এই কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছেন, তারা কি জেনে-বুঝে বলছেন, নাকি শুধু আমাকে হেয় করার জন্য বলছেন, সেটাই প্রশ্ন। সবসময় আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো, এইভাবে কথা বলা। বলতে বলতে এত বেশি বলে, যারা বলছে, বলতে দেন। এখানে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। চীন সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও সমালোচকেরা বলছেন, এ সফরে কোনো প্রাপ্তি নেই। তারা বড় ধরনের ঋণ দেবে না। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১টি সমঝোতা স্মারক সই ও আরও ৭টি এমওইউ হয়েছে। যারা এই কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছেন, তারা কি জেনে-বুঝে বলছেন? নাকি শুধু আমাকে হেয় করার জন্য বলছেন? আমি বিষয়টিতে খুব গুরুত্ব দেই না। ১৯৮১ সালের দেশে আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ধরনের নেতিবাচক কথা বলে, এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
সফর সংক্ষিপ্ত করার বিষয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বিকাল ৫টার মধ্যে আমাদের সব কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। ওইদিন রাতে রওনা হয়ে ১১ই জুলাই তারিখ ভোর রাতে আমরা ঢাকা ফিরে আসি। চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফর প্রসঙ্গে ভারতীয় পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসের ‘আপসেট শেখ হাসিনা, রিটার্ন ফ্রম চায়না’ শীর্ষক প্রতিবেদন এবং দেশে এনিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পৃথিবীর বহু দেশে যখন আমি যাই, আমি যত তাড়াতাড়ি পারি দেশে চলে আসি। কাজ শেষ হয়ে গেলে আমার তো শপিংয়েও যাওয়ার প্রয়োজন নাই, দেখারও জায়গা নাই, বেড়ানোরও কিছু নাই। বহুবার আমি এভাবে এসেছি। এগুলোকে এত রং-চং মাখিয়ে এত কিছু বলার তো কিছু নাই। আমি শুধু বলবো, যারা এসব বানোয়াট কথা বলে, তাদের যেন দেশবাসী চিনে রাখে। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন ও সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের গণমাধ্যমের কথা শুনে আমাদের এখানে যারা কথা বলেন, তারাই তো দু’দিন আগে বলেছে ভারতের কাছে আমরা সব বিক্রি করে দিয়ে এসেছি। অসম চুক্তি করে এসেছি, দেশ বিক্রির চুক্তি করে এসেছি, তাদের কথা আসলে কোনটা ঠিক? শেখ হাসিনা বলেন, সফরে আমার মেয়েকেও তাদের (চীনের) হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে দাওয়াত দিয়েছিল। সে অনুযায়ী সে এসেছিল। সেখানে তার সকালবেলা যাওয়ার কথা কিন্তু তার প্রচণ্ড জ্বর থাকায় আমার সঙ্গে যেতে পারেনি, এটা বাস্তবতা। আমি একটা মা, ওই অবস্থায় রেখেই আমাকে চলে যেতে হয়। সব কার্যক্রম শেষে আমাদের ১১ তারিখ বিকালে আসার কথা, সেখানে আমরা সকালে চলে এসেছি। মাত্র ছয় ঘণ্টার পার্থক্য। এই ছয় ঘণ্টার মধ্যেই এত বড় তোলপাড় হয়ে যাবে, এটা তো বুঝতে পারিনি। তিনি বলেন, এসব সমালোচনা আজ নতুন না। এর আগে যখন ভারতে গেলাম, আমার তিন বা চারদিনের প্রোগ্রাম ছিল। এরপর যখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশে আসবেন, তখন আমার দায়িত্ব ছিল উনি আসার আগেই আমার বাংলাদেশে এসে পৌঁছানো এবং তাকে রিসিভ করা। আমি তখন ভারতে দুইদিনের প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে বাংলাদেশে চলে এলাম। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি দেশে চলে আসি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর ওপর এমন হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র নিয়ে অনেক গর্ববোধ করে। আমরা তো গুলি খাওয়ায় অভ্যস্ত, অনবরতই খাচ্ছি। সেখানে একজন বিরোধী নেতাকে এভাবে গুলি করা…। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। তার একেবারে কানের উপর দিয়ে গুলি চলে গেছে। যদি একটু এদিক-ওদিক হতো তিনি আর বাঁচতেন না। তিনি আরও বলেন, এটা আমেরিকার মতো জায়গায় হয় কী করে? আমেরিকার মতো সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে কেন? সেটা তো আমাদের একটা প্রশ্ন। বাংলাদেশে হলে সরকারকে দায়ী করতো। এক গ্রুপ সরকারকে দায়ী করতো, আরেক গ্রুপ বলতো যে নিজেই মারছি। এখানে লাগাম ছাড়া কথা বলা হয়। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা আমাদের কথায় কথায় এ রকম দোষ দেয় তারাও এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions