ডেস্ক রির্পোট:- কাগজে কলমে সাতকানিয়ায় নিয়মিত শিশুদের টিকা দিচ্ছেন তিনি। সামলাচ্ছেন অফিসের কাজ-কর্ম। মাসিক পরিকল্পনার তালিকায় রয়েছে নামও। অথচ বাস্তবে গত পাঁচ মাস ধরে কর্মস্থলেই নেই তিনি। ছুটি না নিয়েই অবস্থান করছেন ভারতে। এই কর্মকর্তার নাম পান্না রানী দাশ। সাতকানিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে রয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন পান্না রানী দাশ। অথচ সর্বশেষ চলতি জুলাই মাসের অগ্রিম মাসিক কর্মপরিকল্পনার তালিকায় নাম জমা দিয়েছেন তিনি। যার অনুমোদন দিয়েছেন খোদ সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
বর্তমানে ভারতে অবস্থান করলেও বহির্গমনের জন্য অনুমোদন দূরের কথা, আবেদনও করেননি এ সরকারি কর্মচারী। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া তিনি কীভাবে বিদেশ গেলেন, বিদেশ যাওয়ার পরও কীভাবে মাসিক অগ্রিম কর্মপরিকল্পনায় তার নাম জমা দিচ্ছেন- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনাও।
অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে পান্না রানী দাশ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও বিষয়টি গোপন রেখেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তবে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের নজরে আসলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পান্না রানী দাশ ফেব্রুয়ারিতে ৩০ দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু ছুটি শেষে তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি। একাধিকবার শোকজ করা হলেও তার জবাব পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি শুনেছি, তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কীভাবে ভারতে গেলেন তা জানা নেই।
নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পরিবারিক কারণে অর্জিত ছুটি মঞ্জুরের জন্য সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন পান্না রানী দাশ। যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ১৭ ফেব্রুয়ারি। আবেদনপত্রটি স্বাস্থ্য পরির্দশকদের ইনচার্জ ২০ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষর করে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হইল’ বলে অগ্রবর্তী করেন। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৩ দিন আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি অন্য এক অফিস আদেশে ছুটি মঞ্জুর করেন। শুধু তাই নয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দেয়া অগ্রিম মাসিক কর্মপরিকল্পনার তালিকাও জমা দিয়েছেন পান্না রানী দাশ। যা অনুমোদন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
অগ্রিম মাসিক কর্মপরিকল্পনায় নাম থাকার বিষয়টি অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কাগজে উনার নাম থাকলেও পান্না রানী দাশের পরিবর্তে অন্যরা কাজ করছেন। তবে তার বেতন বন্ধ রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুলাই চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠির প্রেক্ষিতে পান্না রানীর অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সিভিল সার্জনের চিঠিতে বলা হয়, বিনা অনুমতিতে বিগত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন পান্না রানী দাশ। নিম্ন স্বাক্ষরকারী অবগত হন যে, উক্ত কর্মচারী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়। নথি পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় তিনি কোনো ধরনের ছুটি মঞ্জুর ব্যতিরেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। বিষয়টি বিধিসম্মত নয়।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্বাস্থ্য পরিদর্শক পান্না রানী দাশের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বিদেশ যাওয়ার ছুটি দেয়ার অধিকার সিভিল সার্জনেরও নেই। কিন্তু কীভাবে ছুটি ছাড়াই ওই কর্মচারী ভারতে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া অনুপস্থিত থাকার পরও প্রক্সি দিয়ে কাজ চলছে, এটি আরও বড় অপরাধ। বিষয়টি এতদিন ইউএইচএফপিও আমাকে অবহিতও করেননি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারও গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।পুর্বকোন