ফাঁস হওয়া প্রশ্নে চাকরি পাওয়াদের কী হবে? কাঠগড়ায় পিএসসি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪
  • ৫৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ফল প্রকাশে ধীরগতি, বিসিএস জট এমন নানা বিষয়ে নানা সময়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল শিক্ষার্থীদের মাঝে। এতসবের মাঝেও চাকরি প্রার্থীদের বড় অংশ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)’র ওপর ভরসা করতেন। নানা সেক্টরে প্রশ্নফাঁস হলেও পিএসসি থেকে প্রশ্নফাঁস হওয়ার খবর এতদিন তেমন বের হয়নি। কিন্তু এবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নিয়ে নয়, প্রশ্ন উঠেছে এক যুগে বিসিএসসহ অন্তত ৩০টি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের। দীর্ঘ বছর হয়ে যাওয়া এই পরীক্ষায় পদায়ন হয়েছেন অনেকেই। এখন প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হলে কী হবে? অভিযুক্তরা ইতিমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এখন কঠিন এক পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান। তবে পিএসসি চেয়ারম্যান প্রশ্ন রেখেছেন, পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে জানা যায় সেট। এই সেট কোনটা আসবে আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না।
কীভাবে আগে থেকেই ফাঁস হলো?
বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে প্রথম পিএসসি’র প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি উঠে আসে। এনিয়ে অনলাইন থেকে অফলাইন সর্বত্র চলছে সমালোচনা। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটক হওয়াদের মধ্যে আছেন পিএসসি’র উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম। তারা কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদনের জন্য তিন বছর পদোন্নতি আটকে ছিল। এ ছাড়া কর্মচারী মো. খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলাও ছিল। কিন্তু আদালতের আদেশে ফের চাকরিতে যোগ দেন তিনি।
এরইমধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসি। সাময়িক বহিষ্কার হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী হলো, পিএসসি’র উপ-পরিচালক আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান এবং অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।

এ ছাড়াও সরকারের আইনের তোয়াক্কা না করে পিএসসি’র অনেকেই কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন। জানা যায়, কয়েকজন সরাসরি কোচিং সেন্টারের মালিক বনে গেছেন। আর কেউ কেউ যুক্ত কোচিংয়ের সঙ্গে। পিএসসি’র এক কর্মকর্তা বলেন, এই কোচিং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরীক্ষকসহ নানা মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহে রাখেন। এরপর অনুমান নির্ভর ও সাজেশন মিলিয়ে প্রশ্ন ব্যাংক দেয়া হতো। তা অনুশীলন করানো হতো। এর মাধ্যমে তাদের কোচিংয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো।
গতকাল দিনভর পিএসসি’র সামনে বিক্ষোভ করেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। মানববন্ধনে অংশ নেয়া চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি- রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের পরীক্ষা গত ৫ই জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। সে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে, তাই এই পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় তারা ‘প্রশ্নফাঁসের পরীক্ষা বাতিল চাই, বাতিল চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, দুর্নীতির ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।

সার্বিক বিষয়ে গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন, পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা এই রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। আমরা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। সিআইডিও তদন্ত করছে।
ফাঁস করা প্রশ্নে হওয়া পরীক্ষার বিষয়ে বলেন, ১২ বছরে ৩০টা পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষা চলমান বা পরবর্তীতে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সেই হিসেবে বলা যায় পরীক্ষা সুষ্ঠু হয়েছে। তারপরও বিষয়গুলো আমরা দেখবো। অপরাধ যদি প্রমাণ হয় এবং পিএসসি’র এখতিয়ার থাকে তাহলে আমরা সেই হিসেবে ব্যবস্থা নেবো। যেহেতু এত বছর আগে থেকে হয়ে আসছে সেহেতু আগের পরীক্ষাগুলোতে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা এটি জানাও কষ্টকর।

প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশ্ন যারা করেন তিনি ডাকে বা সরাসরি এসে দিয়ে যান। আমরা এরপর এটি ট্রাঙ্কে রেখে দেই। এরপর আমরা সবাই মিলে একটা ডেট করি মডারেশনের জন্য। তারপর ওনারা সিলগালা খুলে আবার মডারেশন করে জমা দেন। এরপর ফের সিলগালা করে প্রেসে যায় সরাসরি। প্রেস থেকে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ প্যাকেট হয়। এরপর এগুলো বিভিন্ন বিভাগে যায়। পুলিশ পাহারায় এগুলো থাকে। পরীক্ষার দিন সকালে দু’জন বিশিষ্ট নাগরিকের উপস্থিতিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আমাদের জানাতে হয়। তার ১০ মিনিট আগে আমরা লটারি করি। এরপর আমরা টেস্ট করি যা লটারিতে এসেছে তা ঠিক আছে কিনা। আমাদের ছয়টা সেটের মধ্যে একটা সেট বেছে নিতে হয়।

পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি বলতে চাই প্রশ্নফাঁস করা বিশাল কঠিন। প্রশ্নফাঁস করতে হলে ছয় সেট মানে ১২০০ প্রশ্নফাঁস করতে হবে। লটারির আগে আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না কোন প্রশ্ন হবে। দু’একজন আছে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। আবার তারা কোর্টের মাধ্যমে ফিরে এসেছেন। ফাঁস হওয়া পরীক্ষার বিষয়ে বলেন, সেই পরীক্ষায় যদি প্রশ্নফাঁস হয় তবে চলমান যে পরীক্ষা আছে সেটি অবশ্যই বাতিল হবে। আর পূর্বের পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চেয়ারম্যানসহ ২১ জন কমিশনে আছেন। এগুলো আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কিনা সেটাও দেখতে হবে।

এরপর তিনি পরীক্ষার লটারির প্রক্রিয়াটি হাতে কলমে করে দেখান। কাউকে রক্ষা করার ইচ্ছা নেই। হবেই না তা বলছি না।
এখন যারা পদায়ন আছেন তাদের বিষয়ে বলেন, ১২ বছর পর যিনি চাকরি পেয়েছেন এখন যদি এটা প্রমাণিত হয়। সেটা আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে, আদালতে বা আইনের ব্যাখ্যা ছাড়া এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। আমাদের পরীক্ষার বিপুল চাপ। এমনও আছে এক বিভাগেই ১২০ রকমের পদ আছে। আমরা বাছাইয়ের জন্য সহজীকরণ করেছি। কমন একটা প্রশ্ন করে প্রাথমিকভাবে কমিয়েছি।
গণমাধ্যমকর্মীদের সোহরাব হোসাইন বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে তদবির পর্যন্ত হয় না। প্রতিষ্ঠানটি যাতে ভালোভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে চাই।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions