২০ দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন, খাদ্য সংকট

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০২৪
  • ৮২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশের দক্ষিণে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে খাদ্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে৷ দ্বীপ থেকে উপজেলা টেকনাফের নৌ যোগাযোগ ২০ দিন ধরে বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে নাফ নদী ব্যবহার করা যাচ্ছে না৷ নৌপথ ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো তেমন পথ নাই৷

আরেকটি বিকল্প সেন্ট মার্টিন থেকে জাহাজযোগে কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ৷ এটা সময়সাপেক্ষ এবং শুধু জাহাজ দিয়েই সম্ভব৷

তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘এখন সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা চাইলে নাফ নদী ব্যবহার করে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করতে পারেন৷’

আর আইএসপিআর আর জানিয়েছে, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল দিচ্ছে৷’

সেন্ট মার্টিন টেকনাফের একটি ইউনিয়ন৷ জনসংখ্যা ১০ হাজারের মতো৷ সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, ‘এই ২০ দিনে মাত্র একবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেন্ট মার্টিনে খাদ্যসামগ্রী পঠানো হয়েছে৷ আর সেটা ছিল জেলে এবং যারা সরকারের ভিজিএফ কার্ডধারী৷ ফলে এখন খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে৷’

তিনি বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের কিছু মানুষ জেলে আর অধিকাংশই কৃষক৷ চাহিদার ২০ ভাগ খাদ্যও এখানে উৎপাদন হয় না৷ জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ আছে৷ বন্ধ আছে পর্যটন৷ ফলে আয়ের উৎস যেমন বন্ধ তেমনি বাইরে থেকে খাদ্য আনারও কোনো সুযোগ নাই৷’

‘আর তিন-চার দিনের মধ্যে যদি খাদ্য সরবারাহ করা না হয় তাহলে অনেককেই অনাহারে থাকতে হবে,’ জানান তিনি৷

একই কথা বলেন সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ঈদ নাই৷ আতঙ্কে আর খাদ্য সংকটে আমাদের দিন কাটছে৷ দ্বীপের মানুষের হাতে কোনো কাজ নেই৷ নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় তারা কাজের জন্য কোথাও যেতে পারছেন না৷ দোকানে যে চাল, তেল, ডাল পাওয় যাচ্ছে তার দাম অনেক৷ শাকসবজি শেষ হয়ে গেছে৷ চলাচল শুরু না হলে সামনের দিনে আমরা কী খাবো তাই ভেবে পাচ্ছি না৷’

‘আমাদের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না৷ না জনপ্রতিনিধি, না প্রশাসন৷ একবার মাত্র খাদ্য পাঠিয়ে তারা চুপচাপ আছেন৷ ওই খাদ্যে কয়জনের হয়!’

টেকনাফ স্পিডবোট মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম বলেন, ‘গত দু’দিন ধরে আমরা গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছি না৷ তবে দূরে মিয়ানমারের সমুদ্র সীমায় তাদের যুদ্ধজাহাজ এখনো অবস্থান করছে৷ আর বাংলাদেশের সমূদ্র সীমায় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজ টহল দিচ্ছে৷ আমরা খুব কষ্টে আছি৷ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্বীপের বাইরে নেয়ার কোনো সুযোগ নাই৷ একটির নামমাত্র স্বাস্থকেন্দ্র আছে সেখানে সাধারণ রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব নয়৷ আর খাদ্য সামগ্রী দ্রুত ফুরিয়ে আনছে৷’

‘আমাদের এখন দরকার নাফ নদীর চ্যানেলটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত করে দেয়া৷ তা না হলে আসলে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েই থাকব৷ কারণ সমূদ্র পথে জাহাজ দিয়ে কক্সবাজারে আমাদের যোগাযোগ সম্ভ নয়৷ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বোট চালক, মাঝিমল্লাররাও বেকার হয়ে পড়েছেন৷’

কক্সবজারের জেলা প্রশাসক জানান, ‘তাদের খাদ্যের প্রয়োজন হলে আমরা আরো খাদ্য পাঠাবো৷ আর এখন তারা চাইলে নাফ নদী ব্যবহার করতে পারেন৷’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে যা হচ্ছে তা তো মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার৷ সেন্ট মার্টিনের লোকজন আবহাওয়ার কারণে এখন নৌপথ ব্যবহার করছেন না৷ তারা তো এই পরিস্থিতির মধ্যেই আসাযাওয়া করেন৷ তারপরও আমরা আরো একটু পরীক্ষা করে তাদের এই নৌপথ ব্যবহারের জন্য বলব৷ তবে এখন ব্যবহারে কোনো বাধা নেই৷’

এদিকে আইএসপিআর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ অপারেশন পরিচালনা করছে৷ মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিনের অদূরে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় অবস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অবহিত করছে৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১২ জুন প্রতিবাদ জানায়৷

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল দিচ্ছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়৷

বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথ অপারেশন পরিচালনা করছে৷ মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির এই সংঘর্ষের কারণে নাফ নদী এবং নদী-সংলগ্ন মোহনা এলাকায় বাংলাদেশি বোটের উপর অনাকাঙ্খিত গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে৷ এই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় এবং নাফ নদীর মিয়ানমার সীমানায় অবস্থান করে মিয়ানমারের দিকে আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে৷ একই সঙ্গে আরাকান আর্মিও মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও বোট লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে৷ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় চলমান রয়েছে৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইং-এর মহাপরিচালক মিয়া মোহাম্মদ মইনুল কবিবের কাছে সোমবার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইএসপিআর বিবৃতিতে যা বলেছে এর বাইরে আমাদের কাছে আর কোনো বাড়তি তথ্য নেই’

এদিকে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল অব. এম শহীদুল হক বলেন, ‘নৌবাহিনী এখন যে টহল দিচ্ছে এটা আরো আগে করলে ভালো হতো৷ তাহলে সেন্ট মার্টিনের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হতো না৷ এখন দরকার দ্রুত নাফ নদীর চ্যানেলটি নিরাপদ করে সেন্ট মার্টিনের যোগাযোগ চালু করা৷’

তবে নতুন আরেকটি সমস্যার কথা বলেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘আরকান আর্মি কিন্তু রোহিঙ্গা বিরোধী৷ তারা বুধিডং ছেড়ে রোহিঙ্গাদের চলে যেতে বলেছে৷ এর আগে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে৷ এখন ওই রোহিঙ্গারা কোন দিকে মুভ করে তা বাংলাদেশের নজরে রাখা উচিত৷ তা নাহলে নতুন একটি সংকট হতে পারে৷’

তার কথা, ‘সেন্ট মার্টিন নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা না জেনে শুনে কথা বলছেন৷ সেন্ট মার্টিন কোনো পক্ষেরই টার্গেট না৷ আমরা মাঝখানে পড়ে গেছি৷ তবে আমাদের শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে৷’

একই ধরনের কথা বলেন মিয়ানমারের সিটুয়েতে বাংলাদেশের সাবেক মিশন প্রধান মেজর অব. মো. এমদাদুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে, তাদের হয়ে যুদ্ধ করলে নাগরিকত্ব দেয়া হবে৷ এতে আমাদের এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হতে পারে৷ সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷’

তিনিও মনে করেন, সেন্ট মার্টিন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বা আরকান আর্মির টার্গেট নয়৷ তাই এব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বহীন কথা বলা উচিত নয়৷ তবে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই শক্ত অবস্থানের জানান দিতে হবে৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions