নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে চলছে কাউখালী বিদ্যুতের সাব স্টেশন, বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪
  • ৬৮ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে চলছে কাউখালী বিদ্যুৎ’র সাব ষ্টেশন। দিন দিন বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুকি। আর এই নিরাপত্তা প্রহরী সাব ষ্টেশনের পিডার লাইনের সুইচ অন অফ করতে গিয়ে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পেলো বিদ্যুৎ বিভাগের দুজন কর্মচারী। পরে প্রানে বেচে যাওয়া ঐ কর্মচারী বেদরক পিটিয়ে আহত করেছে নিরাপত্তা প্রহরীকে।

মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনা জানাজানি হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় নিরাপত্তা প্রহরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠেছে টেকনিক্যাল বিষয়ের দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে সুইচ অফ অনের দায়িত্ব না দিয়ে নন টেকনিক্যাল লোককে দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হলে দূর্ঘটনার জন্য দায়িত্ব নিবে কে। গত কিছুদিন পূর্বেও ঠান্ডাছড়ি এলাকায় এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে একজন শ্রমিকের শরীর জ¦লসে যায়। বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার ধামাচাপা দেয় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রায় এক মাস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঐ শ্রমিক। কাউখালী বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জমান শীতল রাঙ্গামাটি জেলা সদরে বসে দায়িত্ব পালন করায় এ সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা অবস্থায় কাজ করতে গিয়ে কাউখালী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বেতবুনিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র কাউখালীর আওতায় পোয়াপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ কাটার জন্য একজন শ্রমিক নিয়ে যায় বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী সাহায্যকারী আব্দুল মালেক । যাওয়ার সময় আবাসিক প্রকৌশলীর নির্দেশে নিরাপত্তা প্রহরী মংহলাচিং মারমা পোয়াপাড়া এলাকার ফিডারের লাইন বন্ধ করে। সে মোতাবেক অস্থায়ী সাহায্যকারী আব্দুল মালেক বিদ্যুৎ লাইনের নীচে দাড়িয়ে থাকে এবং গাছের উপর শ্রমিক মোঃ ইউসুফকে দিয়ে গাছ কাটতে থাকে। এক পর্যায়ে কোন প্রকার পূর্বঘোষনা ছাড়াই নিরাপত্তা প্রহরী মংহলাচিং মারমা বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করলে গাছের মধ্যে বিস্ফোরনের শব্দ হয়। এতে গাছের উপর থাকা শ্রমিক ইউসুফ অজ্ঞান হয়ে যায়। কোন মতে তাকে গাছ থেকে নামিয়ে নীচে এনে শরীরের বিভিন্নস্থানে মালিশ করলে শ্রমিক ইউসুফের জ্ঞান ফিরে আসে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায় শ্রমিক ইউসুফ। পরে আব্দুল মালেক ও ইউসুফ অফিসে ফিরে এসে নিরাপত্তা প্রহরী মংহলাচিং মারমাকে কোন ঘোষনা ছাড়াই লাইন কেন চালু করা হয়েছে জানতে চাইলে উভয়েই ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। মংহলাচিং মারমা জানিয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লাহিরী খানের নির্দেশে সুইচ অন করা হয়। কিন্ত লাহিরী খান এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেননি বলে জানান। এতে আব্দুল মালেক ও শ্রমিক ইউসুফ সহ মিলে নিরাপত্তা প্রহরী মংহলাচিং মারমাকে বেদরক পিটিয়েছে বলে মংহলাচিং মারমা অভিয়োগ করেন। পরে এসে উপ-সহকারী প্রকৌশলী লাহিরী খানও তাদের সাথে যোগ দেয় বলে মংহলাচিং মারমা জানান। তবে তাকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন আব্দুল মালেক,উপ-সহকারী প্রকৌশলী লাহিরীখান ও শ্রমিক ইউসুফ। বিষয়টি জানাজানি হলে সকলকে গত বুধবার রাঙ্গামাটিস্থ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউখালী বিদ্যুৎ’র আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদ ইমতিয়াজ শীতল জানিয়েছেন তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলীর পাশাপাশি কাউখালীর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন জানিয়ে বলেছেন লোকবল কম থাকার কারনে নিরাপত্তা প্রহরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা হলে এর দায় দায়িত্ব কে নিতো জানতে চাইলে তিনি এর কোন সুউত্তর না দিয়ে বলেছেন বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আবাসিক প্রকৌশলী ওয়াহিদ ইমতিয়াজ শীতল জানিয়েছেন যেহেতু তাদেরকে ওভার টাইমের বেতন দেয়া হয় সেহেতু এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। নন টেকনিক্যাল ব্যক্তিকে টেকনিক্যাল দায়িত্ব দেয়ার বিদ্যুৎ বিভাগের কোন আইন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ ধরনের কোন আইন নেই বলে জানান। ২০২৩ সালের ০১লা মে থেকে এক অফিস আদেশের মাধ্যমে নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিরাপত্তা প্রহরী মংহলাচিং মারমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে বলা হয় নিরাপত্তা ও কাউখালী সাব ষ্টেশন এর ”ক” পালার দায়িত্বে থাকিবে। ”ক” পালা অর্থ হচ্ছে সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। একই আদেশে আরো পাচজন কর্মচারীকে ও দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদেরকে ”খ” পালার দায়িত্ব দেয়া হয়। যাদের সময়কাল রাত দশটা হতে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবি রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের আইনে নিরাপত্তা প্রহরীকে দিয়ে সাবষ্টেশনের সুইচ অন অফ করার কোন আইন নেই। তিনি জানান যে সকল সাব ষ্টেশন রেগুলার টাইপের সেখানে সুইচ বোর্ড এটেনডেন্ট আছে। যেহেতু কাউখালী সাব ষ্টেশন হলো রুলার টাইপ তাই সেখানে সুইচ বোর্ড এটেনডেন্ট থাকেনা বিধায় অন্য ষ্টাফ দিয়ে চালানো হয়। তিনি জানান নিরাপত্তা প্রহরীকে দিয়ে সুইচ অন অফ করতে গিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।পাহাড়ের খবর

কাউখালী বিদ্যুৎ অফিস সুত্রে জানা যায়,কাউখালীর বেতবুনিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আওতায় কাউখালী উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের বৈদ্যতিক সবকিছু চালু করা হলে কাউখালী উপজেলায় দৈনিক সর্ব্বোচ্য সারে ৪ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। আর পর্যায়ক্রমে চালু করা হলে সারে ৩ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে লোডশেডিং দিয়ে কাউখালীতে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে ২ মেঘাওয়াট। রাঙ্গামাটি ও হাটহাজারী গ্রিড থেকে দুটি তেত্রিশ হাজার সোর্স লাইন থেকে এগার হাজার ছয়টি পিডার লাইনের মাধ্যমে কাউখালীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব লাইন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল কাউখালীতে নেই।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions