বান্দরবানের থানচি কলেজে ৩৭ মাস বেতন বন্ধ, ঈদ ঘিরে হতাশা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪
  • ১৬৮ দেখা হয়েছে

বান্দরবান:- বান্দরবানের থানচি কলেজের ৮ জন শিক্ষক- ২ জন কর্মচারী ৩৭ মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটছে তাদের। ঈদকে সামনে রেখে নিজেদের বেতন-ভাতা বুঝে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) নিয়মিত ক্লাস শেষে শূন্য হাতে চলে গেলেন বাড়িতে।

টানা তিন বছর এক মাস কোনো বেতন-ভাতা পান না থানচি কলেজের ৮ জন শিক্ষক ও ২ কর্মচারী। মূল্যস্ফীতির চাপে ও দ্রব্যমূল্যের বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে থানচি কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর শুরু হয় শিক্ষার কার্যক্রম। বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে ভর্তি হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সে-সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজে শিক্ষার আলো দিকে পথচলা। শুরুতেই কলেজে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ১৩ জন ও কর্মচারী-কর্মকর্তা ৫ জন। কিন্তু বর্তমানে সেই কলেজের অধ্যক্ষসহ ৯ জন শিক্ষক উপস্থিত রয়েছে। বাকি এক শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপর তিনজন শিক্ষক কলেজের চাকরি বলবৎ রেখে অন্যস্থানে চাকরি শুরু করে দিয়েছে।

বর্তমানে থানচি কলেজে ৮ জন শিক্ষক বিনা বেতনে ১৩৫ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালাচ্ছেন। মৌখিক চুক্তিতে প্রত্যেক শিক্ষকদের বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার, তাও ৪ হাজার করে দিতেন শুরু পরে ৫ বছর বেতন পেলেও পরবর্তীতে বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এ পর্যন্ত তারা আর কোনও বেতন-ভাতা পাননি। গত ৩৭ মাস অনাহারে-অর্ধাহারে পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায়ও তারা ক্লাস, পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ আছে, থানচি কলেজের অধ্যক্ষ ধর্মিণী ত্রিপুরা নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়েছেন। যার কারণে কলেজের অনুপস্থিত থাকার শিক্ষকদের অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সুযোগ দিয়েছেন। ফলে সে-সব শিক্ষকরা কলেজের শুরু থেকে অনুপস্থিত থেকেছেন। তাদের বিরুদ্ধে নিচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। বরংচ এই অধ্যক্ষ প্রশ্রয়ে অনুপস্থিত শিক্ষকরাও সুযোগ পেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ছড়াও কলেজের অধ্যক্ষ গাফিলতি কারণে উপস্থিত শিক্ষকদের মাঝে ৩৭ মাস ধরে এখনো জুটেনি বেতন-ভাতা। তবুও বিনা বেতনে প্রতিনিয়ত ক্লাস করে যাচ্ছেন উপস্থিত শিক্ষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে আধা কিলোমিটার ভিতরে ইউনিয়ন পরিষদের সংলগ্ন দুই তলা বিশিষ্ট ভবন থানচি কলেজ। সেখানে ব্যবসা ও মানবিক শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা। ৮ জন শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় প্রতিদিন উপস্থিত রয়েছেন। কলেজের পাশের আরেকটি নতুন ভবন। সেটি দীর্ঘ বছরের পর বছর মেয়াদি উত্তীর্ণ শেষ হলেও ভবন কাজ মাত্র এক শতাংশ। চারিপাশে ভবনের পিলার ছাড়া আর কিছুই নাই।

কলেজের শিক্ষকরা জানান, কারো ২৬ মাস কারো ৩৭ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। তবুও আমরা নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি। নিজেদের টাকা খরচ করে কলেজে আনুষঙ্গিক কিনতে বা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ধাপে ধাপে বেতন পেলেও সেটির চেয়ে অভাব-অনটনের পাড় করতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন বেতন বন্ধ থাকায় আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

নিয়োগ-কৃত থানচি কলেজের শরীর চর্চার শিক্ষক উচসিং মারমা বলেন, গত বছরের কলেজের সার্কুলেশন মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি। সেই পর থেকে এখনো বেতন-ভাতা পায়নি। আর নতুন নিয়োগের সময় যারা ছিল তাদেরকে নিয়মিত দেখা মেলেনি। তবুও ধার-দেনা নিয়ে নিয়মিত পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি।

থানচি কলেজে অধ্যক্ষ ধর্মিণী ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন হতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫শত টাকা, শিক্ষক কর্মচারীদের নিকট থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫ শত টাকা মোট ৬ লাখ টাকার এফডিআর ও জেনারেল ফান্ডে জমা দেয়ার আর্থিক সংকট হয়েছে। এর আগে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পাঠদানের অনুমোদন,জমি সংক্রান্ত বিষয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৪১৯ টাকা দিয়েছেন। আমি নিজ থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ২০০ টাকা খরচ করেছি। ২০২৩ সালে ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি বেতন দিতে না পারায় তারা এখন ও যোগদান করেন নি।

থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলেজের পরিচালনা কমিটি সভাপতি থোয়াইহ্লা মং মারমা বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বরাদ্ধ পেলে তারপর শিক্ষকদের মাঝে বেতন-ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া শিক্ষার্থী কম ও এমপিও ভুক্ত না হওয়ার কারণে কিছু বিঘ্ন হতে পারে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions