ভারতে একদলীয় শাসনের ইতি, লোকসভায় ফিরতে চলেছে বিরোধী দলনেতার পদ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪
  • ৬২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- কথায় বলে অতি অহঙ্কার পতনের কারণ। লোকসভা নির্বাচনের মাস তিনেক আগে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যেন গোটা দেশে এক ঢেউ তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন রামচন্দ্রের চরণে, ভোটপর্বে হিন্দুত্বকেই নিজের পয়লা নম্বর এজেন্ডা বানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে বদলে গেল সব হিসাবনিকাশ। ফলাফল দেখিয়ে দিলো ২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না তার দল বিজেপি। সময় যত এগোতে থাকে ‘৪০০ পার’ দূর অস্ত, আড়াইশ’ পার করাও একসময় কঠিন মনে হচ্ছিল পদ্মশিবিরের। যেসব রাজ্যে হিন্দুত্বের হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভরসা করছিল সেই উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থানে গেরুয়া শিবিরের একপ্রকার বিপর্যয় হয়েছে। ক্ষমতায় ফিরলেও ৪০০ পারের স্লোগান দেয়া বিজেপি’র পক্ষে ২৯১-তে থেমে যাওয়া কিঞ্চিৎ বিপর্যয়ই বলতে হবে। ২০২৪-এর ভোটে যে মোদি ঝড় অনেকটাই ফিকে হয়েছে, তার একটা ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। কার্যত সমস্ত বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দেশজোড়া ভালো ফল করেছে ইন্ডিয়া জোট।

সেই হাওয়ায় এবার বিপাকে পড়লেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বারাণসীতে জিতলেন এবারেও। কিন্তু যেখানে আগের দুই দফায় তিন লাখের কাছাকাছি ভোটে জিতেছিলেন মোদি, সেখানে এই দফায় লোকসভা নির্বাচনের গণনায় শুরু থেকেই তেমন ব্যবধান বাড়াতে পারেননি তিনি। সমানে সমানে টক্কর দিয়েছেন অজয় রাই। শেষে জয় ঘোষণা হতে দেখা যায়, মোদি পেয়েছেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৯৭০ ভোট। পাল্টা কংগ্রেসের অজয় রাই পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৭ ভোট। অন্যদিকে, গান্ধীনগর থেকে ১০ লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী সোনাল রমনভাই প্যাটেল। মোদি জয় পেলেও নিঃসন্দেহে যেখানে সারা দেশে চারশ’ পার করার ডাক দিয়েছিল বিজেপি, সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর জয়ের ব্যবধান ভয়াবহভাবে কমে আসায় চিন্তা বাড়ছে গেরুয়া শিবিরে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে মাত্র দেড় লাখ ভোটে জিতলেন, সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল গান্ধী রায়বেরেলিতে কার্যত ঝড় তুলে দিয়েছেন। রায়বেরেলি থেকে কমপক্ষে ৩ লাখ ভোটে বিজেপি’র দীনেশ সিং-কে পেছনে ফেলে দেন রাহুল। কেন এই বিপর্যয় সেকথা বলতে গিয়ে এক বিজেপি নেতা বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে উন্নয়নের নামে মুসলিমদের একাংশের ভোট পেয়েছিলেন মোদি। কিন্তু এবারে প্রচারে অতিমাত্রায় মুসলিম বিদ্বেষের ফলে মুসলিমরা একচেটিয়াভাবে ভোট দিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটকে। কোনোরকম বিভাজন হয়নি। দুই, প্রধানমন্ত্রীর মুখে লাগাতার সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা ভালোভাবে নেয়নি দেশের যুবসমাজ। জি-২০’র সফল আয়োজন, ৮০ কোটি মানুষকে রেশন দেয়া, উজ্জ্বলা যোজনা, কোভিডের সময় সরাসরি টাকা দেয়া, দেশবাসীকে বিনামূল্যে টিকা, এসব সেভাবে প্রচারেই আসেনি। রামলাল্লা এবং হিন্দুত্বের এই অতিমাত্রায় প্রচারই লোকসভায় বিজেপি’র মিনি বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ালো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য টিম মোদিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএ’র দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ’র উপর। ঘটনাচক্রে, অতীতে ওই দুই নেতারই একাধিক বার এনডিএ ত্যাগের এবং প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস রয়েছে। অন্য দিকে, এই লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৯-এ কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এবার ‘ইন্ডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে দু’শোর গণ্ডি টপকেছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এবার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদিকে। এদিকে ট্রেন্ড দেখে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শারদ পাওয়ারের তরফে ফোন করা হয়েছে নীতিশ কুমার ও টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুকে। নবীন পট্টনায়ককেও ফোন করা হয়েছে বলে খবর। যদিও শারদ পাওয়ার ফোনের বিষয়ে সিলমোহর দেননি। তিনি জানিয়েছেন, কাউকে ফোন করেননি তিনি। কারও সঙ্গে তার কথাও হয়নি। শারদ পাওয়ার জানিয়েছেন, তার সঙ্গে মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সীতারাম ইয়েচুরির কথা হয়েছে। বুধবার দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হবে। সেই হিসেবে দিল্লিতেই থাকবেন তিনি। ইন্ডিয়া জোট জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে মহারাষ্ট্রের প্রবীণ নেতা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনো ভাবিনি। আমি নিশ্চিত নই ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করতে পারবে কিনা। আমরা বুধবার বৈঠক করবো ও সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নেবো। ফল প্রকাশের মধ্যে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছে, ‘মানুষের রায়ে হার হয়েছে মোদির। দেশবাসী জানিয়ে দিয়েছেন, মোদি-শাহকে তারা চান না।’ সেই সঙ্গে রাহুল গান্ধী জানালেন, সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে আগামী দিনে আলোচনায় বসবে ইন্ডিয়া জোট। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংসদে ইন্ডিয়া জোটের ভূমিকা আরও জোরালো হতে চলেছে। এদিকে বুধবারই বৈঠকে বসতে চলেছে এনডিএ জোটও। মূলত, ভোটের ফলাফল এবং সরকার গড়ার বিষয়ে আলোচনা করতেই এনডিএ জোটের এই বৈঠক বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা নিজের বাসভবনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক সেরে ফেলেছেন। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংও সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে, এখন থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions