‘ঢাকার বেইলী রোডে কমপ্লেক্স করে দেয়া আর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন এক নয়- ঊষাতন তালুকদার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪
  • ৮১ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- ‘আমাদের মধ্যে এখন অনেক হতাশা। যেমন ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিকে মৃত আইন ঘোষণার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। অন্যদিকে গ্রামে যখন ঘোর অন্ধকার নামে, ঝিঁঝি পোকারা ডাকে তখন সাধারণ পাহাড়ী জনগণ ভয়ের মধ্যে থাকে। কখন কাকে গ্রেফতার করা হয়। সাধারণ মানুষ একা অনুভব করেন। মনে রাখবেন আপনারা কেউ একা নন। এদেশের আপামর নিপীড়িত মানুষ ও প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সংগঠন আমাদের পাশে আছে। আমাদের আন্দোলন রাষ্ট্রবিরোধী নয়। আমাদেরকে নিপীড়ন করা হচ্ছে। কাজেই এ নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনসহতি সমিতির কর্মতৎপরতায় এব আন্দোলনের ফলে সরকারের উপর মহলের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যদি আমাদের কথা শোনা না হয় তবে এই ছাত্র সমাজকে প্রস্তুত হয়ে লড়াই চালিয়ে নিতে হবে।পার্টি নেতৃত্ব দিবে আর জনগণ বিপ্লব পরিচালনা করবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাঙ্গামাটির কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়ামে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।

সাবেক গেরিলা নেতা ঊষাতন তালুকদার আরো বলেন, বেইলী রোডে কমপ্লেক্স করে দেয়া আর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন এক নয়। সরকার বলে থাকে- আমরা এই করেছি, সেই করেছি। জাতিসংঘে গিয়ে মিথ্যাচার করে । আমাদের জনগণ শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে তৃতীয় পক্ষ ছাড়া চুক্তি করেছে। কিন্তু এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। আপনাদের কাঁধে যে জাত্যভিমান ভর করেছে তা নামিয়ে ফেলুন। বড় জাতি হিসেবে আপনাদের মনের অধিকারী হতে হবে কারণ আপনারাও তো নিপীড়িত হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তা, আতংক, ভয় থেকে মুক্তি দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করুন।’

সংগঠনটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজায় চাক এর সঞ্চালনায় সমাবেশটি উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি শিশির চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ই, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি’র রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর সভানেত্রী শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।

শিশির চাকমা বলেন, ‘সামনের রাজপথ সমৃণ নয়, যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করা হচ্ছে সেই সকল বাধাকে প্রতিহত করে ছাত্র সমাজকে সম্মুখে অগ্রসর হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত থাকলে বাংলাদেশ শান্ত থাকতে পারে না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, আদিবাসী মানুষ সাধারণভাবে বাঁচতে চাই তাদের সমুন্নত মান সম্মান নিয়ে।’

সুমিত্র চাকমা বলেন, ‘ ১৯৮৯ সালের ২০ এ মে ঢাকার রাজপথ কাপিয়ে পিসিপির জন্ম হয়। পিসিপি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে পাহাড়ের যে কোনো আন্দোলনে ছিলো সর্বদা প্রাগ্রসর। পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছরেও এসে সরকার এ চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উল্টো উন্নয়নের নামে পাহাড়ীদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। অধিকার কেউ কাউকে দেয়না, লড়াই করে ছিনিয়ে আনতে হবে।’

সমাবেশে মুক্তা বাড়ৈই বলেন, সরকার বার বার পাবর্ত্য চুক্তি বাস্তবায়নে টালবাহানা করছে। সেক্যুলার বিজ্ঞান সস্মত শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ণসহ পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের জোর দাবী জানান তিনি।

শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন,আজ আমাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, ১৯০০ সালের ঐতিহাসিক শাসনবিধি দলিলকে বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জুম্ম জনগণের স্বপ্নের সনদ পার্বত্য চুক্তিকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীকে জানান দিতে চাই, জুম্ম জনগণ যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই, সরকার যদি যুদ্ধের বায়না ধরে জুম্ম জনগণ বসে থাকবে না।

দীপক শীল বলেন, পাহাড় কি বাংলাদেশের মানচিত্রের বাইরে? পার্বত্য চুক্তিকে বাস্তবায়নের নামে একটি নাটক সাজিয়ে রাখা হয়েছে না হলে ২৬ বছর পেরিয়ে যেতো না পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের। বর্তমান সরকার কথিত গণতন্ত্রের নামে একটি ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে যেখানে সকল জাতিসমূহের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নিপন ত্রিপুরা বলেন, শাসকগোষ্ঠীর কেএনএফ সন্ত্রাসী দমনের নামে সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পিসিপি’র আন্দোলন চলমান থাকবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র-যুব সমাজকে অধিকতর সামিল হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। পাহাড় ২৪

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions