ডেস্ক রির্পোট:- কাঁদছে ইরান। তাদের ভবিষ্যৎ সুপ্রিম নেতা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আর নেই। তার মৃত্যুতে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। জাতীয় পতাকা রয়েছে অর্ধনমিত। মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান সহ ৯ জনের মৃত্যুতে পুরো ইরান শোকে স্তব্ধ। রোববার আজারবাইজান সীমান্তের কাছে পাহাড়ি এলাকায় তাদেরকে বহনকারী যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বেল-২১২ হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এ খবরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাদের নিয়মিত সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে খবর প্রচার করতে থাকে। দেশবাসীকে প্রেসিডেন্ট ও সফরসঙ্গীদের জন্য দোয়া করতে বলা হয়। টেলিভিশনে দেখা যায়, ইরানিরা দলবদ্ধ হয়ে প্রেসিডেন্টের সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন।
কিন্তু ততক্ষণে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার পাহাড়ের ঢালে আগুন লেগে একেবারে পুড়ে যায়। বিরূপ পরিবেশে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মেলে। সেখানেই পাওয়া যায় প্রেসিডেন্ট রাইসি ও অন্যদের মৃতদেহ। তবে তাও পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় বিশ্বনেতারা শোক জানিয়েছেন। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রেসিডেন্টকে বহন করে দুর্গম এলাকার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে গেছে। বিষয়টি প্রেসিডেন্ট রাইসি নিজে কী অনুধাবন করেননি! তার নিরাপত্তারক্ষীরাই বা কী করছিলেন! কেন তাকে এমন পরিবেশে তারা হেলিকপ্টারে সফর করার অনুমতি দিলেন! নাকি কেউ প্রেসিডেন্টকে উদ্বুদ্ধ করেছেন! এমন অনেক প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
বর্তমান সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো রাইসিকে। কিন্তু তিনি কী জানতেন রোববারই তার জীবনের শেষদিন। এদিন দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তিনি আজারবাইজান সীমান্তের কাছে কিজ-কালাসি ড্যাম যৌথভাবে উদ্বোধন করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে। তখনো হাসিখুশি প্রেসিডেন্ট রাইসি। দুপুরের পর পর তিনি সঙ্গীদের সঙ্গে হেলিকপ্টারে আরোহণ করেন। উদ্দেশ্য ইরানের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর তিবরিজে ফেরা। তাদের বহরে ছিল তিনটি হেলিকপ্টার। অন্য দুটি নিরাপদে পৌঁছতে পারলেও প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার পথে পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। প্রথমে বলা হয়, এই হেলিকপ্টার ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ করেছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পরিষ্কার হতে থাকে। উদ্ধারকারীরা ছুটে যান। উদ্ধার অভিযানে সহায়তার প্রস্তাব দেয় প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রোববার দিবাগত রাতভর অনুসন্ধান চলে। সোমবার সকালে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় প্রেসিডেন্ট রাইসি ও অন্যদের মৃতদেহ। তা পাঠিয়ে দেয়া হয় তিবরিজে। আজ মঙ্গলবার তাকে দাফন প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তাবরিজে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানী তেহরানে। ওদিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের। তিনি ৫০ দিনের মধ্যে নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করবেন। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। ওদিকে প্রেসিডেন্ট রাইসি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন নাকি এক্ষেত্রে কোনো নাশকতা আছে, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং জনমনে নানা প্রশ্ন। অনেকে এক্ষেত্রে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত থাকার আশঙ্কা করছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কী কারণে এই দুর্ঘটনা সে সম্পর্কে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেনি। তবে বিবিসি বলেছে, ইরান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখছে ইসরাইল। তাদের দিকে আঙ্গুল তোলা হয় কিনা নিবিড়ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে তারা। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ইসরাইল জড়িত নয় বলেও তারা জানিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে ছবিতে দুর্ঘটনাস্থল দেখানো হয়। তাতে দেখা যায় হেলিকপ্টারটি পাহাড়ের ঢালে গাছের ওপর পড়ে আছে। এর সামনের অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পেছনের লেজের অংশ দৃশ্যমান। ইরানের রেডক্রিসেন্ট প্রধান কুলিভান্দ বলেন, তারা দুর্ঘটনার স্থান খুঁজে পেয়েছেন। পরিস্থিতি ভালো নয়। এর আশপাশে কোনো যাত্রীর ভেতর প্রাণের স্পন্দন নেই। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ৬৩ বছর বয়সী রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় যাওয়ার পর পরই নৈতিকতা বিষয়ক আইন কঠোর করেন তিনি। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তীব্র দমনপীড়ন চালান। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে কঠোর দরকষাকষি করেন। এখন পারমাণবিক কর্মসূচি এবং পররাষ্ট্রনীতি কী হবে তা নির্ধারণের ক্ষমতা সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক করে বলেছে, রাইসির মৃত্যুতে কোনোরকম বিঘ্ন ছাড়াই ইরানের সরকার অব্যাহতভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
রাইসির মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোক
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ানের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ইরান। তাদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারাও। মৃত্যুর অল্প সময় আগেও রোববার তাদের সঙ্গে উপস্থিত থেকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ যৌথভাবে উদ্বোধন করেছেন কিজ কালাসি ড্যাম। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বিদায় জানালে তিনি হেলিকপ্টারে আরোহণ করেন। তার বহরে যুক্ত ছিল আরও দুটি হেলিকপ্টার। এ দুটি নিরাপদ থাকলেও রাইসি ও আবদুল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টার পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ওই হেলিকপ্টারে আরও যারা ছিলেন তাদের সবাই নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ইলহাম আলিয়েব। তিনি ইরানকে সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে দেয়া পোস্টে শোক প্রকাশ করেছে। তারা লিখেছে, ওই দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসি, মন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান এবং অন্য সবার প্রতি আমাদের সমবেদনা এবং প্রার্থনা। তবে উদ্ধার অভিযানের সময়ে এই পোস্ট দেয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু উদ্ধার অভিযান চলমান তাই ইরানের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুপ্রতিম আর্মেনিয়া ইরানকে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সহানুভূতি জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। বলেছেন, তিনি এ ঘটনা মনিটরিং করছেন। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, উদ্ধার অভিযানে তাদের টিম পাঠানো হয়েছে। আলাদা আলাদা বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। তারা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রইসি ও অন্যদের প্রতি প্রার্থনা জানিয়েছেন। ইরানি জাতির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। এক্সে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, এই হতাশার সময়ে ইরানি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করি। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফ রশিদ। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরকে ফোন করেছেন। ইরাকি সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে তিনি নিহতদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। ওদিকে আলাদাভাবে ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্টকে রাইসির নিখোঁজ হেলিকপ্টার খুঁজে পেতে সহায়তা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি। শোক জানিয়েছে জর্ডান, কাতার, কুয়েত, ইয়েমেন, রাশিয়া ও ভেনিজুয়েলা। শোক প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার জন্য সত্যিকার এবং নির্ভরযোগ্য বন্ধু ছিলেন প্রেসিডেন্ট রইসি ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান। রাশিয়া-ইরান সহযোগিতাকে পারস্পরিক ভিত্তিতে শক্তিশালী করায় তাদের ভূমিকা আছে। আমাদের অংশীদারিত্বের আস্থায়ও তাদের অমূল্য অবদান আছে। ইরানের এই বেদনার সময়ে রাশিয়া সহমর্মিতা জানাচ্ছে। ওদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট রইসির এই বিয়োগান্তক বিদায়ে বেদনা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এই বেদনার সময়ে ইরানের পাশে আছে তার জাতি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, রইসির মৃত্যু এক বড় ক্ষতি। এ জন্য পাকিস্তান একদিনের শোক পালন করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেছেন, ইরানের পাশে আছে তার দেশ। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রেসিডেন্ট রইসিকে নিঃশর্ত বন্ধু এবং অসাধারণ নেতা বলে তার প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে ইয়েমেনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হুতির মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল সালাম এক্সে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রইসির এই বিদায় শুধু ইরানের ক্ষতি নয়, পুরো মুসলিম বিশ্ব, ফিলিস্তিন এবং গাজার জন্যও ক্ষতি। হুতির এই মুখপাত্র আরও বলেছেন, তাদের স্বাধীনতার আন্দোলনে অব্যাহত সহযোগিতা দেয়া এমন একজন প্রেসিডেন্টের খুব বেশি প্রয়োজন ফিলিস্তিনের। ইরানি প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং তাদের সঙ্গীরা নিহত হওয়ায় ইরানের কাছে শোক প্রকাশ করেছে ফ্রান্স। শোক প্রকাশ করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। তবে রাইসির মৃত্যুর খবর শোনার পর এক মিনিট নীরবতা পালন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। ভিয়েনায় পারমাণবিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক এক কনফারেন্সে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এই নীরবতা পালন করেন। গভীর শোক জানিয়েছেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা। ২০১০ সালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন পোলিস প্রেসিডেন্ট লেচ কাচিনস্কি। সে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিজাতদের আকস্মিক মৃত্যুতে জনগণের হৃদয়ে কি শোক ও শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ইরানের এই বেদনার সময়ে নিহতদের পরিবার ও দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও শোক প্রকাশ করছি। শোক প্রকাশ করেছে ন্যাটোও।
রাইসিকে সত্যিকার, ভালো বন্ধু বললেন পুতিন, শি জিনপিং
ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে ‘সত্যিকার’ এবং ‘ভালো’ বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পুতিন। তিনি রাইসিকে রাশিয়ার প্রকৃত বন্ধু এবং একজন অসাধারণ রাজনীতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, নিজের দেশের সেবা করতে পুরোটা জীবন উৎসর্গ করেছেন রাইসি। একই সঙ্গে আমাদের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ ভালো সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে পুরোদমে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। তখন থেকেই রাশিয়ার সামরিক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে ওঠে ইরান। ওদিকে চীনের জনগণের একজন ভালো বন্ধু হিসেবে রইসিকে বর্ণনা করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, রাইসির এই ট্র্যাজিক মৃত্যু ইরানি জনগণের জন্য এক বড় ক্ষতি। উল্লেখ্য, ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। তাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়া তেলের বড় ক্রেতা চীন।
হামাসের শোক
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সংহতি প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আমরা ইরানের ভাইদের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং ইরানের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইসরাইলের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক শুরু হয় তেহরানের। এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে বেশ কয়েকটি যোদ্ধাগোষ্ঠী তৈরি করে ইরান। এসব যোদ্ধাগোষ্ঠীর মধ্যে হামাস অন্যতম। ফিলিস্তিনের এই সংগঠনটি ইরানের সমর্থনে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে বেশ কয়েকবার। বিশেষ করে গত সাত মাস ধরে তেল আবিবের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে সংগঠনটির যোদ্ধারা। হামাসকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে ইরান এমন অভিযোগ থাকলেও তেহরান বারবার এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
‘প্রেসিডেন্ট রাইসির দুর্ঘটনায় ইসরাইল জড়িত নয়’
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান সহ সঙ্গীরা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার সঙ্গে ইসরাইল জড়িত নয়। দেশটির কর্মকর্তারা মিডিয়াকে একথা বলেছেন। অন্যদিকে ঘটনার পর ইরানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ইসরাইল। বিশ্বনেতারা তার বা তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিলেও এমন অবস্থান নিয়েছে অল্প দু’চারটি দেশ। তার মধ্যে ইসরাইল। তারা দেখছে এই ঘটনায় ইসরাইলকে জড়িয়ে কোনো বক্তব্য বা ইঙ্গিত দেয়া হয় কিনা। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা হয় কিনা। যদি এমন অভিযোগ তোলা হয় তবে তা সন্দেহজনক বা সত্য- যা-ই হোক না কেন তাতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংকট ঘনীভূত হতে পারে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইরানের পক্ষ থেকে এমন কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। এমনকি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নেপথ্য কারণও জানায়নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার জন্য খারাপ আবহাওয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। ইসরাইল কর্মকর্তারা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোকে বলেছেন, ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে তাদের কোনো হাত নেই। মাত্র এক মাস আগে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ প্রকাশ্যে আসে। পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। তারপর দৃশ্যত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তখন থেকে অস্বস্তিকর অবস্থার ইতি ঘটেছে বলেই মনে হয়। কিন্তু গাজা যুদ্ধে হামাস ও হিজবুল্লাহকে ইরান সমর্থন দিচ্ছে ইসরাইলের এই পুরনো অভিযোগ সামনে চলে এসেছে। ফলে উপরে উপরে পরিস্থিতি শান্ত মনে হলেও ভেতরে ভেতরে দুইপক্ষের মধ্যেই চাপ বিরাজ করছে।