শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

কমিটিতে বন্দি চিকিৎসা ব্যয় বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
  • ১৪৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা ব্যয় বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছিলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সেখানে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবার মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হবে। সেজন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।

সেই অনুযায়ী একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কথা ছিল, দুই মাসের মধ্যে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সুপারিশ দেবে ওই কমিটি। কিন্তু পরবর্তী চার বছর আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অবশ্য কভিড-১৯ মহামারির কারণে তখন এ নিয়ে কাজ করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও আলোচনায় আসে বিষয়টি। আগের ধারাবাহিকতায় নীতিমালা প্রণয়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এক মাসের মধ্যে সেবামূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এভাবেই বক্তব্য আর আলোচনায় পাঁচ বছর ধরে আটকে আছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যসেবা মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ।

বেসরকারি চিকিৎসাসেবার মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এনেছেন নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হবে।’

স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় নির্ধারণের বিষয়টি এবারও শুধু বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকবে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সারা দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ করে দেখতে হবে, কার কী ধরনের সেবার সক্ষমতা আছে, লোকবল কতজন আছে? এরপর সেবামূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় কাজটি করতে পারব। এ বিষয়ে আমরা আন্তরিক।’

শুধু সরকার নয়, যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরাও। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, ‘সরকার যদি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয়, সেটা সবার জন্যই ভালো হবে। কারণ আমিও তো রোগী হতে পারি। কোথাও সেবা নিতে গিয়ে ন্যায্যমূল্যের বাস্তবায়ন দেখলে আমারও অধিকার রক্ষা হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভালো মানের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্য প্রায় একই ধরনের। সব হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যন্ত্রাংশ একই মানের নয়। হাসপাতালের যন্ত্রাংশ কত দাম দিয়ে কেনা, লোকবল ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সব হাসপাতালের যন্ত্রাংশ একই দাম ও ধরনের নয়। ঢাকার একটি ভালো মানের হাসপাতাল আর মফস্বলের একটি হাসপাতালের মান এক নয়।’

রাজধানীসহ একাধিক জেলার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, রোগ নির্ণয়ের একই পরীক্ষার এবং চিকিৎসাসেবার জন্য বিভিন্ন অঙ্কের ফি নেওয়া হয়। আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং)। মস্তিষ্কের এমআরআই করতে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে মূল্য ধরা হয় ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্য না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো উন্নত যন্ত্রাংশ ও সেবার কথা বলে ইচ্ছেমতো ফি নেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর মূল্যতালিকা ও গ্রাহকসেবা কেন্দ্র বলছে, প্যারানাসাল সিনুস বা পিএনএসের কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফির (সিটি স্ক্যান) জন্য হাসপাতাল ভেদে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পেটের (হোল অ্যাবডমিন) কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফির জন্য নেওয়া হয় ১২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। সিজারিয়ান সেকশনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে তিন-চার দিনের প্যাকেজ রয়েছে। ওয়ার্ড থেকে স্যুট পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যের প্যাকেজে ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিল করা হয়। এর মধ্যে হাসপাতাল ভেদে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ওষুধ দেওয়া হয়।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ঘিরে নৈরাজ্য চলছে। একই পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন ভিন্ন সেবামূল্য। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এই নৈরাজ্য বন্ধে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটাগরি ভেদে সেবামূল্য নির্ধারণের পরিকল্পনা ছিল যুগান্তকারী উদ্যোগ। জনবান্ধব এই উদ্যোগে স্থবিরতা নৈরাজ্যকে সমর্থনের শামিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে রোগীরা কম খরচে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। এতে চিকিৎসায় বিদেশনির্ভরতাও কমবে। সরকার আন্তরিক হলে গণমুখী এ উদ্যোগ পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকার কথা নয় বলে তারা মনে করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে পণ্যের মতো বাণিজ্য করার মতো দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সেবামূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়ে শুধু বক্তব্য আর আলোচনা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমার ধারণা, স্বাস্থ্য প্রশাসন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। পরিকল্পনা কোনো দিন আলোর মুখ দেখবে না। কারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্টান্ডার্ড একটি চিকিৎসা কাঠামো থাকতে হবে। সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এরপর হাসপাতালগুলোকে গ্রেডিং সিস্টেমের আওতায় আনতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবার মূল্য নির্ধারণে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (হাসপাতাল) সভাপতি ও যুগ্ম সচিবকে (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সেবার মূল্যতালিকা, ক্যাটাগরি ও চিকিৎসার সরঞ্জামের মান নির্ধারণের জন্য কমিটিকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়। ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

ওই কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বর্তমান মূল্যতালিকা সদস্যদের দেওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে, তার তালিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কাগজে-কলমে কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবামূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ারুল কবীর। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘ওই কমিটির একটি সভায় অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর কয়েকটি সভা হলেও আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি। এখন আর আমি কমিটিতেও নেই।’

সেবামূল্য নির্ধারণে পরামর্শ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের নাম শুনে ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না। দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে তারা রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করছেন। কী দামের বা মানের রিঅ্যাজেন্ট ব্যবহার করছেন। কোন যন্ত্র ব্যবহার করছেন। এসব দেখে নির্ধারণ করতে হবে খরচ কত হচ্ছে। তার আলোকে সেবামূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া কোনোভাবে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু কমিটি করলেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না। মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে একই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কত ধরনের যন্ত্র ও রিঅ্যাজেন্ট প্রচলিত আছে। তার দামের তারতম্য কী? আবার রাজধানীর শীর্ষ বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান ও বিভাগীয় শহর বা জেলার বেসরকারি একটি হাসপাতালের সেবার মান এক হবে না। তাই যন্ত্রাংশ, সেবার মান ও লোকবলের ওপর নির্ভর করে এ, বি, সি, ডি এমন ভাগে দাম নির্ধারণ করতে হবে।’

এ বিষয়ে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, ‘ভালো মানের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্য প্রায় একই ধরনের। সব হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যন্ত্রাংশ একই মানের নয়। হাসপাতালের যন্ত্রাংশ কত দাম দিয়ে কেনা, লোকবল ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সব হাসপাতালের যন্ত্রাংশ একই দাম ও ধরনের নয়। ঢাকার একটি ভালো মানের হাসপাতাল আর মফস্বলের একটি হাসপাতালের মান এক নয়।’

বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘এ খাতের উদ্যোক্তা হিসেবে আমরাও চাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবামূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হোক। এ বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদেরও কাজ চলছে।’

সবাই সেবামূল্য নির্ধারণের বিষয়ে একমত হলেও অগ্রগতি নেই কেন—এমর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় চট করেই হয়ে যায় না। সময় লাগে নিশ্চয়ই। কাজ চলছে। দ্রুতই হবে আশাবাদী।’

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ) মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সেবামূল্য নির্ধারণের একটি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর বিষয়টি বেশিদূর অগ্রসর হয়নি।’কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions