শিরোনাম

সেই এসপি বাবুল আক্তার,কঠিন জীবন সংগ্রামের মুখোমুখি পরিবার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৬৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- এসপি বাবুল আক্তার,একদিকে বন্দি জীবন ঘিরে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। অন্যদিকে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে দুই নাবালক সন্তানের অপ্রত্যাশিত লড়াই।

এমন এক কঠিন জীবন সংগ্রামের মুখোমুখি সেই আলোচিত এসপি (পুলিশ সুপার) বাবুল আক্তার। স্ত্রী হত্যার দায় মাথায় নিয়ে বর্তমানে তিনি ফেনী কারাগারে বন্দি।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত বাবুল আক্তারের অবস্থা বেশ জটিল। এছাড়া কারাগারে যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগে তিনি দ্বিতীয় বিয়েও করেন। নিয়তি বয়ে আনে দুঃসংবাদ।

প্রথম স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে যেতে হয় কারাগারে। অগত্যা দুই সন্তানকে রেখে যান নববিবাহিতা স্ত্রীর কাছে। কিন্তু অর্থাভাবে তাদের অবস্থাও বেসামাল।

মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজারে বাবুল আক্তারের দ্বিতীয় স্ত্রী ইসমাত জাহান মুক্তার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় তিনি স্বামীর অসুস্থতা ছাড়াও পারিবারিক অবস্থার এক করুণ চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা আমলে নিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আদালতে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

মুক্তা বলেন, ২০২০ সালের অক্টোবরে তার বিয়ে হয়। এর ৭ মাস পরই কারাবন্দি হন বাবুল। এরপর থেকে অদ্যাবধি কারাগার এবং আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি করেই তার দিন কাটছে।

এছাড়া বাবুলের দুই নাবালক সন্তানের তিনিই এখন মা। তার কাছেই বেড়ে উঠছে মিতুর বাচ্চারা। গর্ভধারিণী না হলেও তিনি মাতৃস্নেহে আগলে রেখে পরম মমতায় তাদের গড়ে তুলছেন।

বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার বাবার বাড়ি চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে। মাস্টার্স পাশের পর তিনি চাকরির চেষ্টা করছিলেন। এ সময় এক পরিচিত আত্মীয়ের মাধ্যমে বাবুলের সঙ্গে তার বিয়ের সম্বন্ধ আসে। সবকিছু জেনেই তিনি রাজি হন। বিয়ের পর স্বামীর মুখেই তিনি মিতু হত্যাকাণ্ডের আরও বিশদ বিবরণ শুনেছেন।

এছাড়া বাবুলের চাকরি, পরিবর্তিত নানা পরিস্থিতিসহ অন্যান্য বিষয়েও নানা কথা হয়েছে। তবে বিচারাধীন অবস্থায় মামলা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয় এমন কোনো তথ্য এখন তিনি প্রকাশ করতে চান না।

মুক্তা বলেন, বাবুলের সাবেক স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার দুই সন্তানের বয়স ছিল যথাক্রমে ৫ ও ৭ বছর। দীর্ঘ সময় তারা মায়ের স্নেহ না পেলেও বাবাকে পাশে পেয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ১২ মে বাবুলকেও গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকেই তারা মূলত পুরোপুরি পিতামাতার স্নেহ বঞ্চিত।

বর্তমানে বাবুলের ছেলে আকতার মাহমুদ মাহের নবম এবং মেয়ে আকতার তাবাসসুম নিখাঁদ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অসাধারণ মেধাবী মাহের স্কুলে তার শাখায় দ্বিতীয়। আগামী বছর সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা হারানোর শোক তারা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে।

তিনি বলেন, স্বামী হিসাবে বাবুল চমৎকার মানুষ। মাত্র ৭ মাসে বাবুল তার প্রতি যে দায়িত্বশীলতা এবং মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তাতেই তিনি মুগ্ধ। এতটুকু স্মৃতি আঁকড়েই তিনি বাবুলের প্রতীক্ষায় বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে রাজি। অবশ্য কারাগারে সাক্ষাতের সময় বাবুল তাকে সব সময়ই আশ্বস্ত করেন। আদালতের রায়ে বাবুল নির্দোষ হিসাবে মুক্তি পাবেন এমন বিশ্বাস আছে তার।

মুক্তা বলেন, বর্তমানে নিদারুণ অর্থকষ্টে দিন কাটছে তার। একদিকে মামলার খরচ, অন্যদিকে দুই সন্তানের পড়াশোনা। এছাড়া ঘর ভাড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ তো আছেই। মগবাজার এলাকায় মাত্র ১০ হাজার টাকায় একটা ঘর ভাড়া নিয়েছেন। বাবুলের সন্তানদের নিয়ে সেখানেই থাকেন। তবে চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও তিনি বাবুলের সন্তানদের সর্বোচ্চ ভালো রাখার চেষ্টা করেন। যাতে বাচ্চারা অভাবের কষ্টটা সেভাবে বুঝতে না পারে। ওদেরকে কখনও মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। আমি বাবুলকে কথা দিয়েছিলাম। তাই অক্ষরে অক্ষরে সব পালন করছি।

তিনি বলেন, বাবুল জেলে যাওয়ার পর তার আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই এগিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সহায়তা পাওয়া যায়। এছাড়া বাবুলের বন্ধুবান্ধবও মাঝেমধ্যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আইনজীবীরাও সেভাবে খরচ নেন না। মাঝেমধ্যে তাদের হাতে কিছু একটা তুলে দেওয়া হয়। এতটুকুই।

মুক্তা বলেন, বাবুল বর্তমানে ফেনী জেলা কারাগারে বন্দি। অসুস্থ অবস্থায় কারা হাসপাতালে তারা চিকিৎসা চলছে। তার জটিল পাইলসের সমস্যা তৃতীয় স্টেজে চলে গেছে। এই মুহূর্তে ভালো কোনো হাসপাতালে তার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়া আগে থেকেই তার ডায়াবেটিস ছিল। এখন লিভারেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রস্টেটের সমস্যায় তার টানা ৩-৪ রাত ঘুম হয় না।

তিনি বলেন, বাবুলের অসুস্থতার কথা আদালতেও জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে পিটিশন দেওয়া হলে সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বাইরের হাসপাতালে নিতে রাজি নয়। অথচ কারাগারের একমাত্র চিকিৎসক দিয়ে তার যথাযথ চিকিৎসাও হচ্ছে না। যেমন অরোগ্রাম নামের একটি পরীক্ষা করানো খুব জরুরি। কিন্তু কারাগারে সে ব্যবস্থা নেই। এছাড়া জেলখানায় যথাযথ ওষুধ-পথ্যেরও যথেষ্ট অভাব।

মুক্তা বলেন, মাসে চারবার তিনি বাবুলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। এর মধ্যে হাজিরার তারিখে আদালতের বারান্দায় দুবার এবং কারাবিধি অনুযায়ী দুবার জেলখানায়।

তবে সম্প্রতি বাবুলকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। ফলে জেলখানায় ডেপুটি জেলারের কক্ষে তিনি ২০ মিনিট সাক্ষাৎ করতে পারেন। এ সময় দুই সন্তানকেই বেশি সময় দেন বাবুল। কিন্তু ওরা বাবাকে রেখে ফিরতে চায় না। বিশেষ করে মেয়েটা ফেরার সময় অনেক বেশি কান্নাকাটি করে। তাদের বাবা-মেয়ের বিদায়ের দৃশ্যটা বলে বোঝানো যাবে না। খুবই হৃদয়বিদারক।

তিনি বলেন, মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বাবুলের দূরত্ব ঘোচানোর জন্য তিনি স্বেচ্ছায় একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছেন। বাচ্চাদের নিয়ে মোশাররফ হোসেনের বাড়িতেও গিয়েছেন। একবার তো সেখানে গিয়ে টানা ৩ দিন থেকেছেন। এ সময় মোশাররফ হোসেন তার সঙ্গে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা সমস্যা রয়ে গেছে। তাই বাবুলের সঙ্গে তার দূরত্ব কিছুতেই কমছে না।

২০১৬ সালের ৫ জুন তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ নিয়ে জঙ্গিদের দিকে সন্দেহের তির থাকলেও ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ২৪ জুন ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ বাবুলকে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পরে পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয় স্বেচ্ছায় পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বাবুল। অবশ্য এখন পর্যন্ত চাকরি ছাড়ার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে আসছেন বাবুল আক্তার। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ১১ মে অনেকটা নাটকীয়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে বাবুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে।যুগান্তর

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions