শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

কেএনএফ সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, বিদেশি ইন্ধন খতিয়ে দেখার পরামর্শ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৪৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সমঝোতার শর্ত ভঙ্গ করে পরপর দুই দিন বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতিকে নিছক ‘ডাকাতি’ হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন এর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এর পেছনে বিদেশি ইন্ধন থাকার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন এবং কৃষি খাতে যে বিপ্লব ঘটতে চলেছে অশান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে তার গতিরোধ করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির পর বুধবার (৩ এপ্রিল) দিনের বেলা থানচি উপজেলার দুইটি ব্যাংক ডাকাতি করে কেএনএফ। আগের দিন অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে চলমান যৌথ অভিযানের মধ্যে দিনেদুপুরে ফের একই ধরনের ঘটনার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকেও দায়ী করা হচ্ছে।

এদিকে গত ৫ মার্চ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর হঠাৎ করে কেএনএফের ইউটার্ন নেওয়ার জন্য সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ বিভেদকেই দায়ী করা হচ্ছে। মতবিরোধের কারণে সংগঠনটিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এমন আলোচনা বান্দরবানের সচেতন মহলে আছে। একটি অংশ অপর অংশকে মানতে চাইছে না। যে কারণে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার আগেই তা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কেএনএফের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শান্তি কমিটির কেউই কেএনএফের বিভেদের বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন।

২০১৭ সালে নাথান বম এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করলেও এটি আলোচনায় আসে ২০২২ সালে। রাঙ্গামাটির সাজেকের বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বান্দরবানের রুমা রোয়াংছড়ি, থানছি, লামা ও আলীকদম এই ৯টি উপজেলা নিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত একটি পৃথক রাজ্য দাবি করে আলোচনায় এলেও সংগঠনটির সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো বান্দরবানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণে মদদ, ব্যাংক লুট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কেএনএফ: কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘কেএনএফের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে সরকারে। এখন তারা সেই চুক্তি ভঙ্গ করে সরকারি ব্যাংকের টাকা লুট করেছে, ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের এই কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তারা সরকারের সঙ্গেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তাদের কার্যক্রমে আমার কাছে এমনটিই মনে হয়। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রুমা ও থানছি গেছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

তারা এত শক্তি পেল কোথায়? জবাবে তিনি বলেন, তাদের এত শক্তি থাকার কথা না। এত শক্তির উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বিষয়টি নিয়ে।

পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক মতাদর্শগত লক্ষ্য: ড. মাহফুজ পারভেজ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ ‘বলেন, ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে বড় আকারের দুটি ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্রশস্ত্র লুট নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ঘটনাটিকে ‘ব্যাংক ডাকাতি’ আখ্যা দেওয়া হলেও তা নিছক চোর-ডাকাতের অপরাধকর্ম নয়। এসব আক্রমণের পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শগত প্রণোদনা ও লক্ষ্য, যার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এসব সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড করছে। এসব কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় তাদের বিশ্বাস নেই। তাদের উদ্দেশ্য আরও বড়। স্বায়ত্তশাসন কিংবা বাংলাদেশের সীমান্তের পাশের ভারত ও মায়ানমার অংশের কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে বড় আকারের ঐক্য গড়া ও বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা।

তিনি বলেন, মায়ানমারে যে জাতিগত সশস্ত্র সংঘাত চলছে, সেখানে কুকি-চিন বা তাদের সমগোত্রীয় পক্ষগুলো সক্রিয়। এসব পক্ষকে দেশি-বিদেশি নানা শক্তি ইন্ধন দিয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী করছে। মিয়ানমারে তারা সরকারি সামরিক বাহিনীকে পর্যুদস্ত করছে। ভারতের মণিপুর ও নাগাল্যান্ডকে সংঘাতময় করে তুলছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অংশের বান্দরবানে অবাধে সশস্ত্র হুমকি দিচ্ছে। এবার বান্দরবানে ডাকাতিকালে নির্বিঘ্নে অপকর্ম করেছে।

বিদেশি ইন্ধন রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিত: মেজর এমদাদ
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় এক দেড় ঘণ্টা ধরে ব্যাংক ডাকাতি করা হয়েছে। রুমা এলাকায় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কেন ব্যাংক খোলা রাখা হলো এটিও একটি প্রশ্ন। এখন তো মোবাইলের যুগ, দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাংক লুট করা হলো কেউ তো ফোন করে আর্মিকে জানাতে পারত। অথবা পুলিশ আছে, বিজিবি আছে তাদের জানাতে পারত।’

এর বাইরে কেএনএফের সঙ্গে গত ১৬ তারিখ একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। সেই সমঝোতাকে বানচাল করার জন্য বিদেশি কোনো ইন্ধন আছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের বিষয়টিও সন্দেহজনক।

তিনি বলেন, সমঝোতার মধ্যেই ব্যাংক লুটের জন্য কেউ দুষ্টু বুদ্ধি দিতে পারে। তাই হয়ত তারা এ কাজ করেছে। অথবা বিদেশি কোনো ইন্ধন থাকতে পারে যারা হয়তো চায় পাহাড়ে অস্তিরতা থাকুক। উন্নয়নের ছোঁয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আমূল পরিবর্তন ঘটছে। সংযোগ সড়ক হচ্ছে, পাহাড়ে বিভিন্ন ফলফলাদি উৎপাদন হচ্ছে, একটি বিপ্লব ঘটছে কৃষিতে। টুরিজমের বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এসব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিদেশি চক্রান্ত থাকতে পারে।

কেএনএফএর কাছে তেমন কোনো শক্তি নেই। তাদের এক দেড়শ বা দুইশ সদস্য রয়েছে। তাদের থেকে বড় সংগঠন ছিল শান্তিবাহিনী, তারা ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে গেছে। কেএনএফ এত বড় সংগঠন হলে চোরাগোপ্তা হামলা করত না। তিনি বলেন, ভারতের মণিপুরে মেইথি ও কুকিদের মধ্যে সংঘাত চলছে। ভারতের সংঘাতের ঘটনার ছোটখাটো প্রভাব এখানেও পড়তে পারে। পাহাড়ে বিদেশি বিভিন্ন এনজিও কাজ করে। তাদেরও চক্রান্ত থাকতে পারে।

তাদের সঙ্গে আলোচনার আর সুযোগ নেই: মুখপাত্র শান্তি কমিটি
কেএনএফের সঙ্গে আলোচনার জন্য গঠিত শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কাঞ্চন জয় ত্রিপুরা বলেন, ‘কেএনএফ সদস্যদের সঙ্গে আমরা কয়েক দিন আগে বসেছিলাম। দুই পক্ষ মিলে একটা সমঝোতা হয়েছে। আমরা তাদের দাবি মেনে নিয়েছি, তারা আমাদের দাবিও মেনে নিয়েছে। এতে বান্দরবান এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে কেএনএফ সরকারি ব্যাংক লুট করল, ম্যানেজারকে ধরে নিয়ে গেল। এখন আমরাও সমঝোতার শর্ত মেনে চলতে পারব না। অ্যাকশনে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সামনে তাদের সঙ্গে আমাদের বসার বা বৈঠক করার আর কোনো সুযোগও নেই। বিদেশি কোনো ইন্ধনের তথ্য নেই। তবে তারাও তাদের ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ মানছে না সে ধরনেরও কোনো তথ্য তার জানা নেই। এর মধ্যে কেএনএফ কেনই বা এ ঘটনা ঘটাল আমার বুঝে আসছে না।’খবরের কাগজ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions