শিরোনাম
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ কোটা সংস্কার আন্দোলন চিকিৎসাধীন তিনজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০৬,ছুটির দিনেও রাজধানী ফাঁকা এএসআই মোক্তাদিরের ওপর নৃশংসতায় স্তব্ধ পরিবার সারা দেশে অভিযান,এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ ‘গুলি আর কারা করবে, আমরা নিরস্ত্র ছিলাম’-মিফতাহ সিদ্দিকী ‘এত মৃত্যু দেখে কেউ চুপ থাকতে পারে না’ কোটা বিক্ষোভ দমনের পর প্রান্তসীমায় বাংলাদেশ,ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট নতুন নির্বাচন দাবি ড. ইউনূসের গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ ফেসবুক খুলবে কবে? এই মাধ্যম এখন আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবাধিকার দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান ৫৫০ মামলা ৬ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার

১৪ মাসে ছয় শতাধিক ব্যক্তি অপহৃত, ৬৯৯ জন গ্রেপ্তার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:-‘আমার সন্তানকে অপহরণের পর ওরা মুক্তিপণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেটা না পেয়ে ছেলেকে ওরা হত্যা করে। পরে ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই বিচার আমি কার কাছে দেব?’

নিহত শিক্ষার্থী হিমেল সরদারের বাবা ফারুক সরদার কালের কণ্ঠ’র কাছে এভাবে তাঁর বুক ভরা বেদনার কথা জানান।

অপহৃতনাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল হিমেল। গত শনিবার তাকে নলডাঙ্গায় নিজ এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। পরদিন রবিবার তাকে হত্যা করা হয়। একই দিন পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

ফারুক সরদার বলছিলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল, সব এখন শেষ!’

গত ২১ মার্চ রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে মারিয়া (৫) নামের এক শিশুকে অপহরণ করা হয়। এখানেও মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে তাকে কুমিল্লায় নিয়ে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অপহরণকারীরা। গত বৃহস্পতিবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তাকে লালমাই এলাকা থেকে উদ্ধার করে।

এভাবে দেশে গত ১৪ মাসে শিশুসহ ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। নানা ছদ্মবেশে অনেক সংঘবদ্ধ চক্র অপহরণের মতো অপরাধে সক্রিয়। অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেলে অপহৃতের ওপর নির্যাতন চালায় তারা। এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র বলছে, ঈদ সামনে রেখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারীদের তৎপরতা বেড়েছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ এই দুর্বৃত্তরা শুধু অপহৃত ব্যক্তির ক্ষতি করছে না, আর্থিক ও মানসিকভাবে তার পরিবারেরও ক্ষতি করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

অপহরণের বিভিন্ন ঘটনা

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে ঢাকায় ৫৯ জনকে অপহরণের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ডিএমপির থানাগুলোতে অন্তত ১৮ জনকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে ২৮ মার্চ শেরেবাংলানগর এলাকা থেকে এক শিশুকে (৫) অপহরণ করে মানিকগঞ্জ নেওয়া হয়। এরপর অপহরণকারীরা ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরিবার থেকে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়। পুরে পুলিশ ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় তিন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২০ মার্চ একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে তার ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে এক দিনে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অপহরণকারীচক্রের সদস্যরা। এরপর পুরান ঢাকার একটি সড়ক থেকে পথচারীকে অপহরণ করে অন্য একটি চক্র মুক্তিপণ আদায় করে।

গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে শেরপুরে যাওয়ার পথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তাঁর ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাঁকে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

সম্প্রতি মাওয়া থেকে আনন্দ নামের এক তরুণকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে চক্রের সদস্যরা। তাঁকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে তারা। এরপর তাঁকে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসাইন বলেন, এরা মূলত ঈদকে টার্গেট করে অপহরণে নেমেছে। সড়কে ওত পেতে থাকে তারা। এরপর সুযোগমতো অপহরণের পর পরিবার বা স্বজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।

ঢাকার বাইরের ঘটনাগুলোর মধ্যে গত ২৯ মার্চ বরগুনার আমতলী উপজেলায় এক কিশোরীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ চাওয়া হয়। মুক্তিপণ না পেয়ে অপহরণকারীরা কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরে পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে।

অপহরণের ঘটনায় মামলা

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে অপহরণের ঘটনায় মোট ৪৬৩টি মামলা হয়েছে। ২০২২ সালে ৪৬০টি মামলা হয়।

ডিএমপির গত বছরের অপরাধবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ডিএমপির আটটি ক্রাইম বিভাগের প্রতিটি থানা এলাকায় অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রমনা বিভাগে তিনটি, ওয়ারী বিভাগে পাঁচটি, লালবাগে আটটি, মতিঝিলে সাতটি, মিরপুরে ছয়টি, গুলশানে ১০টি, উত্তরায় ১২টি এবং তেজগাঁওয়ে ১৪টি মামলা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, অপহরণ বাড়ার পেছনের কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ঢাকা থেকে অপহৃত শিশুসহ অনেককে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ছয় শতাধিক গ্রেপ্তার

অপহরণের ঘটনায় সারা দেশে পাঁচ শতাধিক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

তবে র‌্যাব জানায়, গত বছর অপহরণের শিকার ৬৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, সমাজে এক শ্রেণির লোক অপরাধে জড়িয়ে মানুষকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করছে। তবে র‌্যাব ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় তৎপর রয়েছে। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, শিশু অপহরণ বেড়েছে। বোরকা পরে পরিচয় গোপন রেখে শিশু চুরি করা হচ্ছে। তাই অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে।

টেকনাফে এক বছরে ১২৪ জনকে অপহরণ

কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা থেকে গত ৯ মার্চ সোয়াত বিন আব্দুল্লাহ নামের ছয় বছরের এক শিশুকে অপহরণ করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। ২১ দিনেও শিশুটি উদ্ধার হয়নি। এভাবে টেকনাফে প্রায়ই ঘটছে অপহরণের ঘটনা।

টেকানাফ থানার পুলিশ জানায়, গত বছর সেখানে ১২৪ জনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয়, অন্যরা রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।

টেকনাফ থানার ওসি মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, ওই এলাকায় এক সপ্তাহে ১৫ জনকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায়। গত বৃহস্পতিবার টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নবী সুলতান নবীন ও মো. ছলিম নামে দুজনকে একটি ওয়ান শ্যুটার গান ও আটটি রামদাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা ছলিম ডাকাত দলের সদস্য। জামিনে থেকে সে অপহরণ করত।কালের কন্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions