চট্টগ্রাম:- নিয়ম অনুযায়ী শূন্য পদে নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা নিতে হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আবেদন অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। সিন্ডিকেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। তবে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করেননি। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছেন প্রায় ২০০ কর্মচারী। এর মধ্যে শেষ কর্মদিবসেই নিয়োগ দিয়েছেন ৩২ জনকে। এই অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দাবি করেছেন শিক্ষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘এই সমস্ত নিয়োগ সাবেক উপাচার্য বিধিবহির্ভূতভাবে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের নির্দিষ্ট বিধি ও প্রক্রিয়া আছে। যদি তা অনুসরণ করা না হয়, তাহলে এসব নিয়োগ আইনানুগ হয়নি। এটা অবৈধ। তিনি অনৈতিক ও বেআইনি কাজ করেছেন। এই ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা তদন্তের কথা আগেও বলছি, এখনো বলছি।’
২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলেছে, ২০১৯ সালে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পরই শিরীণ আখতার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কর্মচারী নিয়োগ শুরু করে দেন। অথচ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউজিসি দৈনিক মজুরি কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সেলের তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক শিরীণ আখতার উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ১৯৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১১৩ জন, চতুর্থ শ্রেণির ৮২ জন। সর্বশেষ উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসে নিয়োগ দিয়েছেন ৩২ জন।
এর আগে ২০২২ সালে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ছিল ড. শিরীণ আখতারের তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও হিসাব নিয়ামক দপ্তরের কর্মচারী আহমদ হোসেনের সঙ্গে দুজন প্রার্থীর। এর মধ্যে একটি ফোনালাপে প্রভাষক পদের এক প্রার্থীর সঙ্গে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শোনা যায়। অপর একটি ফোনালাপে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতে উপাচার্যের টাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন কর্মচারী আহমদ হোসেন। এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি মামলা করার পরামর্শ দেয়। তবে অধ্যাপক শিরীণ আখতার মামলা করা থেকে বিরত থাকেন। এ ছাড়া একই বছর নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে এক প্রার্থীর সঙ্গে এক কর্মচারীর আরও একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান বলেন, ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিমতো নিয়োগ দেশের প্রচলিত আইন ও মানবিকতা কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের কথা শোনা যাচ্ছে। এসব বিষয়ে দুদক ও ইউজিসি থেকে তদন্ত হওয়া উচিত। দেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় চলে। রাষ্ট্রের টাকা এভাবে নয়ছয় করা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
এ বিষয়ে জানতে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি কাজ করছে। তারা এই বিষয়গুলোও দেখবে।আজকের পত্রিকা