কলকাতা:- দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করেছে ভারতের অর্থ অপরাধবিষয়ক সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেজরিওয়ালকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন জানানো হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
এদিকে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারে তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতের বিরোধী জোটে। আম আদমি পার্টি দাবি করেছে, কেজরিওয়ালকে মুক্তি না দেওয়া হলে দিল্লিসহ একাধিক জায়গায় তারা ভোট বয়কটের ডাক দেবে।
প্রথমে শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে আদালতে বিশেষ বিচারক কাবেরি বাওয়েজাকে ইডি বলে, কেজরিওয়াল দিল্লির আবগারি নীতি ২০২১-২২ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য ‘দক্ষিণ গ্রুপ’ থেকে কয়েক কোটি টাকা পেয়েছেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে মূল ষড়যন্ত্রকারী দাবি করে ইডির অতিরিক্ত আইনজীবী জেনারেল এ এস জি রাজু আদালতে বলেন, পাঞ্জাব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ‘দক্ষিণ গোষ্ঠী’র কয়েকজন অভিযুক্তের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন কেজরিওয়াল। এর মধ্যে ৪৫ কোটি টাকা গোয়া নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও দাবি করে ইডি। আসামি ও সাক্ষীদের বক্তব্য ও কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানানো হয় আদালতে।
পরে ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে আম আদমি পার্টির প্রধানকে আদালতে হাজির করা হয়। এ এস জি রাজু আদালতকে সে সময় বলেন, ‘আমরা ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি।’ তিনি আদালতকে আরও বলেন, ‘আপ কোনো ব্যক্তি নয়, একটি সংস্থা। এই সংস্থার আচরণের জন্য দায়ী সেই সংস্থার প্রত্যেকটি ব্যক্তি।’
কেজরিওয়ালের পক্ষে লড়েছেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।
অন্যদিকে, বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে জামিন দিতে অস্বীকার করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। দিল্লির আবগারি নীতি কেলেঙ্কারির মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, এম এম সুন্দ্রেশ ও বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ কবিতাকে ট্রায়াল কোর্টে যেতে বলেছেন। আদালতের বক্তব্য, তারা প্রোটোকল এড়িয়ে নির্দেশ দিতে পারেন না।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, তিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। কেজরিওয়ালকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওই মন্তব্য করেন তিনি।
আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান জানিয়েছেন, তিনি কারাগার থেকেই কাজ করা অব্যাহত রাখবেন। গত বৃহস্পতিবার ভারতের স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
সংস্থাটির অভিযোগ, দিল্লিতে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদলে কেজরিওয়াল এবং কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
ওই মামলাতে আপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ও দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীষ শিশোদিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। দলীয় সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ওই একই মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ ছাড়া তেলেঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কবিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন মদ ব্যবসায়ী, নেতা, মন্ত্রী ও তাদের সহাকারীকেও আটক করা হয়েছে।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিরোধী দলগুলো থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। গ্রেপ্তারের কয়েক মিনিটের মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘ভীত একজন স্বৈরশাসক মৃত গণতন্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।’
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসও কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, কেজরিওয়ালদের ইন্ডিয়া জোটে নেই তৃণমূল। দলটি নিজ রাজ্যে এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সমালোচনা করেছেন দলটির নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা ভারতে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করতে পারি যখন নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রখ্যাত বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
তামিল নাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এ গ্রেপ্তারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি ভিজায়ান বলেছেন, ‘সব গ্রেপ্তারই বিদ্বেষপূর্ণ এবং সাধারণ নির্বাচনের আগে সব বিরোধীদলীয় মতকে থামিয়ে দেওয়ার নির্মম ষড়যন্ত্রের অংশ।’
উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেছেন, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার নতুন বিদ্রোহের সূচনা করবে। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের ঘটনাই প্রমাণ করছে বিজেপি সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে আছে।